বিতর্কিত আ’লীগ নেতারাই এখন শক্ত অবস্থানে

রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার: আগামী ২০-২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন। পাশাপাশি নভেম্বরের মধ্যে সম্মেলন শেষ হচ্ছে সহযোগী সংগঠনগুলোর। আর ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন হবে আওয়ামী লীগের জেলা ও উপজেলা কাউন্সিল। এ লক্ষ্যে বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তৃণমূলে। ফলে এ সব সম্মেলন সামনে রেখে তৃণমূল থেকে কেন্দ্রের নেতাকর্মীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা।

তবে ক্ষমতাসীন দলের এ সব সম্মেলন সামনে রেখে রাজশাহীর কিছু নেতার বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে অপপ্রচার। বিশেষ করে ত্যাগী, ক্লিন ইমেজ ও দলের প্রতি নিবেদিত এমন নেতাদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম ব্যবহার করে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। যাদের মধ্যে রয়েছে সংসদ সদস্য ছাড়াও জেলা ও মহানগর পর্যায় থেকে উপজেলার নেতারা।

অপপ্রচারের শিকার ভুক্তভোগি নেতাদের অভিযোগ, আগামী কাউন্সিলে রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিতে যেন ত্যাগী ও ক্লিন ইমেজের নেতারা স্থান না পায় এ কারণে তাদের বিরুদ্ধ অপপ্রচার চলছে। দলের পদ নিয়ে গত ১০ বছরে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, জমিদখল, গ্রুপবাজি, পেশিশক্তি ও সীমান্তে মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করে যারা কালো টাকার মালিক বনে গেছেন তাদের মদদ ও অর্থায়নে এসব অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এই সব বিতর্কিত নেতারাই এখন শক্ত অবস্থানে রয়েছে। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন আওয়ামী লীগের শরীক দলের কিছু নেতারাও বলে দাবি করেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী অঞ্চলে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত নেতা হিসেবে পরিচিত রাজশাহী-১ আসনের টানা তিনবারের এমপি আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরী। তিনি বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে শিল্প প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সফল ভাবে তিনি সে দায়িত্ব পালন করেন।

কিন্তু সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে অপপ্রচার চালানো হয়েছে। সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য-উপাত্ত ছাড়ায় মাদকের পৃষ্ঠপোষক, রাজাকার পুত্র, আওয়ামী লীগের চেতনাবিরোধী, জামায়াত-বিএনপি আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা, নিয়োগ বানিজ্যসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে অপপ্রচার করা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে। রাজশাহীতে ফারুক চৌধুরী জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করায় তার সুনাম ক্ষুন্ন করতে আওয়ামী লীগের এক শ্রেণীর বিপদগামী নেতা এসব অপপ্রচার চালাচ্ছেন বলে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা দাবি করেছেন।

গোদাগাড়ী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, যারা এসব অপপ্রচার করছে তারা আওয়ামী লীগের মূলধারা থেকে বেরিয়ে গিয়ে জামায়াত-বিএনপির আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতায় তাদেরই বি-টিম হয়ে কাজ করছে। ওই সব অপপ্রচারকারী সুবিধাবাদী নেতারা দল, নেতা, নেতৃত্ব, আর্দশ নীতি-নৈতিকতা ভুলে জামায়াত-বিএনপি, মাদক ব্যাবসায়ী, টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজ, জমিদখলদারদের কালো টাকার কাছে বিক্রি হয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বেঈমানী করে জাতীয় সংসদ দলের ত্যাগী ও ক্লিন ইমেজের নেতাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগের এই সব মীর জাফরদের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা কখনোই মেনে নেয়নি নিবেও না।

রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান চঞ্চল বলেন, সুবিধাবাদি কিছু নেতার সঙ্গে জমিদখল, নিয়োগ বানিজ্য, টেন্ডার বানিজ্য, সরকারি গুদামে খাদ্য সরবরাহকারি সিন্ডিকেট, মাদক ব্যবসায়ীরা। তাদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে ওই নেতারা এখন আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে গেছেন। আগামী সম্মেলনে নতুন কমিটিতে এ সব বিতর্কিত নেতারা জায়গা পাবে না। তাই তাদের মদদ ও অর্থায়নে দলের ত্যাগী ও ক্লিন ইমেজের নেতাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

ওমর ফারুক চৌধুরী রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের একমাত্র ভরসা উল্লেখ করে চঞ্চল বলেন, রাজশাহী এক সময় জামায়াত-বিএনপির শক্তিশালী ঘাটি হিসেবে পরিচিত ছিল। জামায়াত-বিএনপির সেই ঘাটিতে যারা নেতৃত্ব, শ্রম এবং কোটি কোটি টাকা অর্থায়ন করে যারা আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করেছে তাদের বিরুদ্ধে কারা মাঠে নেমেছে, কাদের সাথে তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তা দলের নেতাকর্মীরা জানে। ওইসব বিপদগামী ও মীর জাফর নেতাদের আওয়ামী লীগ থেকে বের করে দেয়ার দাবি জানান তিনি।

রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি একরামুল হক বলেন, যার ওপর পূর্ণআস্থা ও বিশ্বাস রেখেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকেই নেতৃত্বে নিয়ে আসেন। ওমর ফারুক চৌধুরীর উপর প্রধানমন্ত্রীর আস্থা ও বিশ্বাস আছে বলে তাকে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নিয়ে এসেছেন। প্রধানমন্ত্রী তাকে টানা তিনবার রাজশাহী-১ আসনে মনোনয়ন দিয়েছেন এবং এমপি হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে সেটি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেই চলে যাচ্ছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছায় ২০০০ সালে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে একবার প্রতিমন্ত্রী এবং তিনবার সাংসদ নির্বাচিত হই। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি হই। রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করে রাজশাহীতে বিএনপি-জামায়াতের ভিত ভেঙ্গে দিয়েছি। তাই হয়তো বিএনপি-জামায়াতের মদদের আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। সূত্র: পদ্মা টাইমস।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *