যেদিকেই তাকাই সেদিকেই সরিষার হলুদ ফুলে ছেঁয়ে গেছে ফসলের মাঠ

রাজশাহী লীড

গোদাগাড়ী প্রতিনিধি : ছয় ঋতুর এই দেশে ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে বদলে যায় ফসলের মাঠের চিত্র। এর ধারাবাহিকতায় একসময়ের সবুজ মাঠ হয়ে যায় হলুদ।

এবার শীতে সরিষা ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্য পাল্টে দিয়েছে রাজাশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ফসলের মাঠের দৃশ্য। উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় এ মৌসুমে সরিষার চাষ করা হয়েছে। চারিদিকে এখন শুধু হলুদ সরিষা ফুলের বর্ণিল সমারোহ।

মাঠজুড়ে সরিষা ফুলের মৌ মৌ গন্ধ। মৌমাছির গুন গুন শব্দে ফুলের রেণু থেকে মধু সংগ্রহ আর প্রজাপতির এক ফুল থেকে আরেক ফুলে ধেয়ে চলার অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য মনোমুগ্ধকর। সকালের মিষ্টি রোদ আর বিন্দু বিন্দু শিশির ছুঁয়ে যায় ফুলগুলোকে।

সরিষা ফুলের হলুদ হাসিতে রঙিন এখন গোদাগাড়ী উপজেলার বাসুদেবপুর ইউনিয়নের বিল চড়ুই মাঠসহ বিভিন্ন ফসলের মাঠ। সরিষার ফুল যেন দিক-দিগন্ত রাঙিয়ে দিয়েছে। প্রকৃতি যেন হলদে শাড়ি পরা তরুণীর সাজে সজ্জিত হয়ে নতুন রূপে আবির্ভূত হয়েছে।

সরিষা চাষে খরচ কম, কিন্তু লাভ বেশি। ফলে কৃষকরা সরিষা চাষে আগ্রহী। এ মৌসুমে অনেক কৃষক সরিষা শাক উৎপাদন করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। সরিষার তেলের চাহিদা থাকে সারা বছর। তাই সারা বছরই থাকে সরিষার চাহিদা। দামও পাওয়া যায় ভালো। অনেক এলাকাতেই ধানসহ অন্যান্য ফসল চাষে খরচ বেড়ে যাওয়া এবং ন্যায্য দাম না পাওয়ায় সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকছেন চাষীরা।

প্রতিবছর সরিষার ফলন ভালো হওয়ায় বাড়ছে সরিষার চাষাবাদ। তাই চলতি মৌসুমে পাল্টে গেছে উপজেলার দিগন্তজোড়া মাঠের চিত্রও।

গোদাগাড়ী উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের কৃষক আকতারের সঙ্গে কথা বলে জানাযায়, বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথেই তারা সরিষার বীজ বুনে থাকেন। কম সময়ে এ ফসল ঘরে তোলা যায়। এবার তিনি বারী-৯, বারী-১৪ এবং বারী-১৫ জাতের সরিষা ৩০ বিঘা জমি বিল চড়ুইমাঠ ও কাপাসিয়ামাঠে আবাদ করেছেন। আর প্রায় এক হতে দেড় মাসের মধ্যে দেশী ও হাইব্রীড জামের সরিষা ঘরে তুলবেন।

বিঘা প্রতি খরচ সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বিঘাপ্রতি ফলন হবে ৫-৭ মন এই সরিষা ১৫০০-২০০০ হাজার টাকা মন বিক্রী করেতে পারেন। ফলে বিঘাপ্রতি প্রায় ৭-৮ হাজার টাকা লাভবান হন বলে জানান।

গুসিরা গ্রামের সরিষা আবাদকারী কৃষখ হুমায়ন কবির জানান, তিনি এবার ২০ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন। এবার সরিষা চাষে আবহাওয়া অত্যন্ত অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলনের আশা করছেন। সরিষা লাগানো হতে শুরু করে সব খরচ বাদ দিয়ে তিনি তিনি প্রায় দেড় লক্ষ টাকা লাভ করবেন বলে জানান।

কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন, সরিষাসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা অব্যাহত থাকলে কৃষকরা আরো বেশি উপকৃত হতো।

এ ব্যাপারে গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান এবার এই উপজেলায় ৬ হাজার ৭৪০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। কম খরচে অধিক মুনাফা হওয়ায় প্রতি বছরই সরিষা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের উচ্চ ফলনশীল সরিষা আবাদের জন্য সব সময়ই উৎসাহ দেই।

উপযুক্ত বীজ নির্বাচন, সার ও কীটনাশক প্রয়োগে আমরা প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকি। এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা আছে।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *