তানোরে ছিন্নমূল শীতার্ত বেদে পরিবারের মাঝে পুলিশ কর্মকর্তা ইমনের কম্বল বিতরণ 

রাজশাহী লীড
স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীর তানোর থানার অদূরে বিলকুমারী বিলে (শিবনদী) খোলা আকাশের নিচে খুপরিঘরে দিনাতিপাত করছেন ২৪টি বেদে পরিবার। হাড় কাঁপানো কনকনে শীতের তীব্রতায় ২২টি শিশু সন্তান নিয়ে এই ৪৮ বেদে মা-বাবার অবস্থা যেন একেবারে যুবুথুবু। একদিকে আর্থিক অস্বচ্ছলতা অন্যদিকে হাড় কাপানো তীব্র শীতে তাদের অবস্থা একেবারে নাজুক। বেদে পরিবারগুলোর এমন হৃদয় বিদারক জীবন-যাপনের দৃশ্য তানোর থানার এএসআই মো. ফারুক হোসেন ইমনের মনজগতে চরমভাবে নাড়া দেয়। কীভাবে অসহায় এই বেদে পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানো যায় তিনি তাই আঁটতে থাকেন তারই কৌশল।
সম্প্রতি ‘দূরন্ত রাজশাহী’ নামে (রাজশাহীতে এসএসসি’০২ ও এইচএসসি’০৪ ব্যাচের ফেসবুক গ্রুপ) একটি ফেসবুক গ্রুপে এই ২৪ বেদে পরিবারের শীতে যুবুথুবু অবস্থার বিষয়ে লিখে পোস্ট করেন এএসআই ইমন। তার এই পোস্টটি দেখে অসহায় বেদে পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ান মাসুদ বকশী নামে ওই ব্যাচেরই ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিসিসি) এক কর্মকর্তা। অসহায় এসব পরিবারকে শীতের তীব্রতা থেকে রক্ষা করতে তাদের জন্য পাঠিয়ে দেন কম্বল।
গতকাল বুধবার বিকালে মাসুদ বকশীর পাঠানো এই ২৬টি কম্বল অসহায় বেদে পরিবারগুলোর মাঝে বিতরণ করা হয়। ফেসবুক গ্রুপ ‘দূরন্ত রাজশাহীর’ সহযোগিতায় কম্বল বিতরণের এই অনুষ্ঠানে তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান, এএসআই মো. ফারুক হোসেন ইমন, সাংবাদিক ফয়সাল আহমেদ, রাবি কর্মকর্তা নুর কুতুবুল আলম জুয়েল, তানোর প্রেসক্লাব সভাপতি সাইদ সাজু, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বেদে পরিবারগুলোর সর্দার মো. কালা চাঁদ সরদার বলেন, ‘আমরা ছিন্নমূল মানুষ, বেদে পরিবার। কনকনে এই শীত আর হাড় কাঁপানো ঠা-া বাতাসে আমাদেরকে এই খুপড়ি ঘরেই থাকতে হয়। কিন্তু কেউ আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে না। বর্তমানে করোনার কারণে আমাদের যে পেশা, তাকে আয় রোজগার একেবারেই নেই। রাতে অনেক কষ্ট করে এই খুপড়ি ঘরে ছোট ছোট সন্তান নিয়ে বাস করি।  সকাল হলেই যে যার কাজে গ্রামে বেরিয়ে পড়ি। করোনাকালে সরকার আমাদের এই অসহায় সন্তানগুলোর দিকে একটু নজর দিলে আমরা উপকৃত হতাম।’
এএসআই মো. ফারুক হোসেন ইমন বলেন, ‘ডিউটিরত অবস্থায় কনকনে এই শীতের রাতে শিবনদীর পাশের রাস্তা দিয়ে যখন যাই তখন বেদে পল্লীর অসহায় এই ৭০ সদস্যের শীতের কষ্ট আমার বিবেককে তাড়িত করে। আমি উপলবিদ্ধ করি, রাতে ডিউটিরত অবস্থায় যখন গাড়ির জানালার কাঁচ খুলে দেই তখন শীতের এই তীব্রতায় শরীরটা মনে হয় একেবারে জমে যায়। কিন্তু অসহায় এই পরিবারগুলো খোলা আকাশের নিচে শীতের মধ্যে যে কষ্টে দিনাতিপাত করছে সেজন্য অনেক কষ্ট লেগেছে। তাদের জন্য অন্ততপক্ষে শীতের এই কষ্ট দূরিভূত করতেই আমার ক্ষুদ্র এই প্রয়াস।’
উল্লেখ্য, মানবিক পুলিশ কর্মকর্তা এএসআই ফারুক হোসেন ইমন ব্যক্তিগত উদ্যোগে তানোর উপজেলায় শ্রেষ্ঠ গ্রাম পুলিশ পদক প্রবর্তন করেন। সাধ্যমত সবসময় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মধ্যেই যেন শান্তি খুঁজে পান তিনি। শুধু তিনি নন, রাজশাহীতে তার এসএসসি’০২ ও এইচএসসি’০৪ ব্যাচের ফেসবুক গ্রুপ ‘দূরন্ত রাজশাহীর’ সদস্যরা এভাবেই বিভিন্ন সময় অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন।
Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *