‘রাজশাহী ওয়াসা ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনাগার নির্মাণ’ প্রকল্প নিয়ে চীনা প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর

রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার: বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য ‘রাজশাহী ওয়াসা ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনাগার নির্মাণ’ প্রকল্প নিয়ে রাজশাহী পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ওয়াসা) ও চীনের হুনান কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেডের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। রবিবার দুপুর ১২টায় হোটেল সোনারগাঁওয়ে‘র সুরমা কনফারেন্স রুমে এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম এমপি।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের সাথে চায়নার ঐতিহাসিকভাবে অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে অবদান রাখায় গত এক দশকে এ সম্পর্ক আরো নতুন মাত্রা পেয়েছে। বাংলাদেশ এবং চায়না বিশ্ব পরিমণ্ডলে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বজায় রেখে একত্রে কাজ করবে বলেও উল্লেখ করেন মন্ত্রী।

মন্ত্রী আরো বলেন, রাজশাহী ওয়াসা এবং চায়নার হুনান কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড এর মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে তা সমন্বয়ের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে এবং টাইম লাইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। বাংলাদেশে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন প্রকল্পে অনেক সময় সময়সীমা বাড়ানো হয়ে থাকে। এই প্রকল্পের ক্ষেত্রে এমনটা হবে না বলে জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, আন্ডার গ্রাউন্ড ওয়াটার থেকে সারফেস ওয়াটারের উপর গুরুত্ব দিয়ে এসডিজি ২০৩০ এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই দেশ লক্ষমাত্রায় পৌঁছাবে বলে জানান তিনি। মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ কে সামনে রেখে নকশা তৈরি করেছেন এবং সে অনুযায়ী দেশ পরিচালিত হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন মন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন। রাসিক মেয়র তাঁর বক্তব্যে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা সারাদেশের মতো রাজশাহীর উন্নয়নেও অনেক বাজেট বরাদ্দ দিয়েছেন। তার মধ্যে অন্যতম ৪ হাজার ৬২ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘রাজশাহী ওয়াসা ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনাগার’ প্রকল্প। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এলাকা সহ আশপাশের এলাকার পানির আর কোন সমস্যা থাকবে না। পাশাপাশি ভূ-উপরস্থ পানি শোধন করে পানযোগ্য করে তোলার কারণে ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপরেও চাপ কমবে। এটি রাজশাহীবাসীর জন্য একটি মাইলফলক।

অনুষ্ঠানে আরো বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভি, রাজশাহী ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুলতান আব্দুল হামিদ, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) এস.এম. তুহিনুর আলম, প্রধান প্রকৌশলী মোঃ পারভেজ মামুদ, নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) সোহেল রানা, নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।

প্রকল্প পরিচালক ও রাজশাহী ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মোঃ পারভেজ মামুদ বলেন, প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে ওয়াসা ও চীনের হুনান কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানির সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো। প্রকল্পের টাকা দিয়ে ২০০ এমএলডি (দৈনিক ২০ কোটি লিটার) পানি শোধনাগার নির্মাণ, ২৬.৫ কিঃমিঃ ট্রান্সমিশন মেইন পাইপ লাইন স্থাপন, ৪৮ কিঃমিঃ প্রাইমারী ও সেকেন্ডারী পাইপ লাইন স্থাপন করা হবে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে রাজশাহী মহানগরী সহ আশপাশের এলাকার পানির কোন সমস্যা থাকবে না।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে এ প্রকল্পের খসড়া সম্পন্ন করা হয়। পরের বছর চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে এ নিয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। প্রকল্পটি দ্রুত পাস করতে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালান। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় অনুমোদন লাভ করে। চীনের একটি ব্যাংকের অর্থায়নে পানি শোধনাগারটি স্থাপন করা হবে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায়। সেখানে পদ্মা নদী থেকে পানি তুলে শোধনাগারে শোধন করে পাইপের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি এনে রাজশাহী মহানগরী ও এর আশপাশের এলাকায় সরবরাহ করা হবে। রাজশাহী ওয়াসা কর্তৃক গৃহীত প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৬২ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার ১ হাজার ৭ শো ৪৮ কোটি এবং হুনান কন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ার গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড ২ হাজার ৩ শো ১৩ কোটির বেশি টাকা ব্যয় করবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় ধরা হয়েছে চার বছর।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *