ট্রাকের চাপায় হাত হারান ফিরোজ, বাস চালক গ্রেপ্তার

রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার: ট্রাক-বাসের চাপায় রাজশাহী কলেজের ছাত্র ফিরোজ সরদারের (২৫) হাত বিচ্ছিন্ন হয়েছিল। পুলিশ সেই ট্রাকটিকে জব্দ করেছে। আর ফিরোজ যে বাসের যাত্রী ছিলেন তার চালককেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বাস চালকের নাম ফারুক হোসেন সরকার (৩৯)। রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার গোপালহাটি গ্রামে তার বাড়ি। ফারুকের বাবার নাম আতাহার আলী সরকার। বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে পুঠিয়া বাজার থেকে ফারুককে গ্রেপ্তার করা হয়।

এর আগে বুধবার (০৩ জুলাই) রাত ১১টার দিকে যে ট্রাকের সঙ্গে বাসের ঘর্ষণ লেগেছিল সেটিকেও জব্দ করেছে পুলিশ। রাজশাহী মহানগরীর উপভদ্রা এলাকার একটি ওয়ার্কশপ থেকে ট্রাকটি জব্দ করা হয়। এর আগে গত শনিবার (২৯ জুন) দিবাগত রাতে রাজশাহীর শিরোইল বাস টার্মিনাল থেকে ‘মোহাম্মদ পরিবহন’ নামের ওই বাসটিকে ‘ঢাকা মেট্রো-ব ১৫-০৪৬২’ জব্দ করা হয়। তবে সেদিন বাসের সঙ্গে চালককে পাওয়া যায়নি।

বাস চালককে গ্রেপ্তার ও ট্রাক জব্দ করা নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে নিজের দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে প্রেস ব্রিফিং করেন রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, গত শুক্রবার (২৮ জুন) আদা নিয়ে রাজশাহী থেকে ঢাকা যাচ্ছিল ‘ঢাকা মেট্রো-ট ১৬-৮৭৯৬’ নম্বরের ওই ট্রাক। আর বগুড়া থেকে রাজশাহী আসছিল মোহাম্মদ পরিবহনের বাস। দুটি গাড়িই চলছিল বেপরোয়া গতিতে। ফলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস ও ট্রাকের ঘর্ষণ লাগে। এতেই চাপা পড়ে ফিরোজের ডান হাত বাহু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

পুলিশ কমিশনার জানান, ঘটনার পর বাসযাত্রী ফিরোজ শুধু বলতে পেরেছিলেন, তিনি যে বাসের যাত্রী ছিলেন তার নামের ইংরেজি প্রথম দুই অক্ষর ‘এম এবং ও’। এর ভিত্তিতেই তদন্ত করে পুলিশ বাসটিকে জব্দ করে। কিন্তু কোন গাড়ির সঙ্গে চাপা লেগেছিল তা কেউ বলতে পারছিলেন না। অবশেষে গোয়েন্দা তথ্য এবং ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজের মাধ্যমে ট্রাকটিকে সনাক্ত করা হয়েছে।

তিনি জানান, দুর্ঘটনার পর আটক হওয়ার ভয়ে ট্রাক চালক ঢাকা না গিয়ে বেলপুকুর থেকে ঘুরে বাইপাস সড়ক হয়ে আবার রাজশাহী চলে আসেন। এরপর ছন্দা পেট্রোল পাম্পে ট্রাকটিকে রাখা হয়। পরে সকালে তিনি আবার ঢাকা যান। এরপর ঢাকা থেকে ফিরে আবার ছন্দা পেট্রোল পাম্পে ট্রাক রেখে চালক আত্মগোপন করেন। পরে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ট্রাক মেরামতের জন্য বুধবার নগরীর উপভদ্রা এলাকার একটি ওয়ার্কশপে নিয়ে যান হেলপার। সেখান থেকেই সেটি জব্দ করে নগর পুলিশের সদর দপ্তরে রাখা হয়েছে।

হুমায়ুন কবীর জানান, ট্রাকের চালককেও সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তার নাম মো. ওয়াহিদুজ্জামান (২৪)। রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার পাটিয়াকান্দি গ্রামে তার বাড়ি। বাবার নাম আবদুল কাদের। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তবে দুর্ঘটনার সময় ট্রাকে হেলপার ছিলেন না। তাই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। আর গ্রেপ্তার বাস চালক দুর্ঘটনার বিষয়টি পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন।

ওই দুর্ঘটনার পর ফিরোজ সরদারের বাবা মাহফুজ আর রহমান বাদী হয়ে দুই গাড়ির চালককে আসামি করে নগরীর কাটাখালি থানায় মামলা করেছিলেন। সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বাস চালক ফারুক হোসেন সরকারকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে বলেও জানান নগর পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।

প্রসঙ্গত, ফিরোজ সরদার রাজশাহী কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। শিক্ষক নিবন্ধনের পরীক্ষা দিতে তিনি বগুড়া গিয়েছিলেন। সেখান থেকে যান গ্রামের বাড়ি বগুড়ার নন্দীগ্রাম পৌরসভার নামোইটগ্রাম মহল্লায়। বাড়ি থেকে গত শুক্রবার (২৮ জুন) তিনি বাসে চড়ে রাজশাহী ফিরছিলেন। ফিরোজের ভাষ্যমতে, তিনি বাসের একেবারে শেষের সিটে বসে ছিলেন। আর ডান হাতে জানালার ভেতর দিয়েই সামনের সিট ধরে ছিলেন। হঠাৎ ঝাকুনিতে তার হাত জানালার বাইরে চলে যায়। তখনই পাশের গাড়ির সঙ্গে বাসটি ধাক্কা খায়। এতে চাপা পড়ে তার ডান হাত কনুইয়ের ওপর থেকে কেটে পড়ে যায়। কিন্তু তখন তিনি পাশের গাড়িটিকে খেয়াল করতে পারেননি।

ফিরোজ সরদারের মাস্টার্সের ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। দুর্ঘটনার আগে তিনি দুটি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। কিন্তু পরেরগুলো আর দেয়া হয়নি। তিনি এখনও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি। বৃহস্পতিবার দুপুরে আরএমপি কমিশনার হুমায়ুন কবীর তাকে দেখতে যান। এ সময় তিনি ফিরোজের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন এবং আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *