গোদাগাড়ীতে স্কুলের ৪০ মণ বই গোপনে বিক্রি

রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টারঃ এর আগে গাছের ডাল বিক্রি ও স্কুলের জমি ইাজারার লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন রাজশাহী গোদাগাড়ীর মাটিকাটা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মোসা. ইসমত আরা। এবার গোপনে বিক্রি করে দিলেন ৪০ মণ সরকারি বই। নির্দেশ থাকলেও বই বিক্রির বিষয়ে শিক্ষা কর্মকর্তাকে কোনো কিছু জানাননি তিনি। জানা গেছে, স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সাদিকুল ইসলাম ১৯ সেপ্টেম্বর গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ছাড়াও রাজশাহী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও গোদাগাড়ী উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, গোদাগাড়ী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহা. দুলাল আলমের প্রশ্রয়ে মাটিকাটা স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অবাধে দুর্নীতি করে চলেছেন। এলাকাবাসী অভিযোগ জানালেও এই কর্মকর্তা সমঝোতার মাধ্যমে সব অভিযোগ ধামাচাপা দিয়ে আসছেন। দুলাল আলম এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চান না।

লিখিত অভিযোগে সাদিকুল ইসলাম বলেছেন, মাটিকাটা স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা একজন দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তি। ১৫ সেপ্টেম্বর সকাল ৭টায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী শরিফুল ইসলাম স্কুল পরিষ্কার করার জন্য এলে তিনি দেখতে পান স্কুলের পিয়ন রাসেল ২০ বস্তা বই ভ্যানে তুলছেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী এ সময় পিয়ন রাসেলের কাছে জানতে চান বই কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন। পিয়ন রাসেল তাকে জানায়, হেড ম্যাডাম ভ্যান পাঠিয়েছেন তাই বইয়ের বস্তাগুলো তুলে দিচ্ছি। বইগুলো হেড ম্যাডাম বিক্রি করে দিয়েছেন।

অভিযোগে বলা হয়, একই দিন সন্ধ্যা ৭টার পর পিয়ন রাসেল আবারও পাঁচটি ভ্যান নিয়ে স্কুলে ঢোকেন। এসব ভ্যানে বইয়ের বস্তা তোলার সময় স্কুলের নৈশপ্রহরী রবিউল ইসলাম ডিউটিতে আসেন। তিনি বই নিয়ে যেতে বাধা দিলে রাসেল তাকেও জানায় হেড ম্যাডাম বই বিক্রি করেছেন। তাকে বইয়ের বস্তাগুলো ভ্যানে তুলে দিতে বলেছেন। রাসেল বস্তাগুলো ভ্যানে তুলে নিয়ে অফিস কক্ষে তালা মেরে দ্রুত স্কুলভবন ত্যাগ করেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, বছর তিনেক আগে প্রধান শিক্ষিকা হিসাবে নিয়োগ পান মোসা. ইসমত আরা। স্কুলের বিদ্যমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা দ্বিগুণ দেখিয়ে বছর বছর দ্বিগুণ বই তোলেন। শিক্ষার্থীদের মাঝে অর্ধেক বই বিতরণ করে বাকি বই গোপনে বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। স্কুলের একজন সিনিয়র শিক্ষক বলেন, প্রধান শিক্ষক ঐতিহ্যবাহী মাটিকাটা স্কুলের বিভিন্ন খাতের বিপুল টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তাকে অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে। স্কুলের জিনিসপত্র যখন যা হাতের কাছে পান সেটাই তিনি বিক্রি করে টাকা নিজের পকেটে ভরেন। শিক্ষক কর্মচারীসহ এলাকাবাসী তার এসব দুর্নীতির প্রতিবাদ করলে তিনি রাজনৈতিক প্রভাবের ভয় দেখিয়ে থাকেন।

অবণ্টিত বই গোপনে বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নাসির উদ্দিন বলেন, সরকারি বই বিক্রি করা নিষিদ্ধ। কোনো স্কুলে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণের পর বই অবশিষ্ট থাকলে প্রধান শিক্ষক সংশ্লিষ্ট মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়ে বইয়ের সংখ্যা ও পরিমাণ জানাবেন।

সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তা যথাযথ মাধ্যমে শিক্ষা অধিদপ্তরকে বিষয়টি জানাবেন। অবণ্টিত বই উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হবে। অধিদপ্তর বিক্রির অনুমতি দিলে উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তাকে প্রধান করে নিলাম কমিটি গঠন করতে হবে। কমিটি উন্মুক্ত নিলামে প্রতিযোগিতামূলক দরে বই বিক্রি করতে পারবেন। সেই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। প্রধান শিক্ষক কোনোভাবেই নিজে বই বিক্রি করতে পারবেন না গোপনে হোক বা প্রকাশ্যে। প্রমাণ হলে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্তের নির্দেশ রয়েছে।

মাটিকাটা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মোসা. ইসমত আরা বলেন, বই বিক্রির বিষয়ে তিনি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহা. দুলাল আলমকে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। তার মৌখিক অনুমতি নিয়ে বই বিক্রি করেছেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *