বাঘায় বিধিনিষেধ উপেক্ষিত, মাস্ক ছাড়া বেপরোয়া চলাফেরায় সংক্রমণের শঙ্কা

রাজশাহী লীড

বাঘা প্রতিনিধি: মাস্ক ছাড়াই বেপরোয়াভাবে বাইরে চলাফেরা করছে মানুষ। সরকারের কোন নির্দেশনাই মানা হচ্ছেনা। সেই সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে অব্যবস্থাপনা। ফলে বাঘা উপজেলায় করোনা সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। করোনা মহামারির নতুন ধরন ওমিক্রনের বিস্তার রোধে সরকার ১১ দফা বিধিনিষেধ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করলেও তা আমলে নিয়ে সচেতন হচ্ছে না বাঘা উপজেলার মানুষ।

এছাড়াও করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রুখতে সরকার সারাদেশে ৫টি জরুরি নির্দেশনা জারি করেছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জেলা ও মাঠ প্রশাসন অধিশাখা থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। নির্দেশনায় সারাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আপাতত দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ করার পাশাপাশি সব ধরণের জনসমাগমে মাস্ক ব্যবহারের কঠোরতা আরোপের কথা জানিয়েছে সরকার।

শুক্রবার(২১-০১-২০২২) সরেজমিন বাঘা মাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায় শ্রেণীপেশার সবধরণের শতকরা ৮৫% মানুষ চলাফেরা করছেন মাস্ক ছাড়াই। বিভিন্ন এলাকা থেকে মানত নিয়ে মাজার এলাকায় আসার কারণে জনসমাগমে পরিনত হয় মাজার এলাকা। এদিকে নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হলেও সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে অধিকাংশ মানুষই তা আমলেই নেননি। মাজারে আসা রাহুত ও নাসরিন নামের দুইজন বলেন,অনেকেই মাস্ক ছাড়াই চলছেন। তাই আমরাও মাস্ক ব্যবহারের কথা ভাবতে পারিনি।

প্রজ্ঞাপন অনুসারে হোটেল-রেস্তোরাঁয় খেতে বা খাবার কিনতে হলে টিকা সনদ দেখানোর বিধান থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গণপরিবহনগুলোতে সামাজিক দূরত্ব এবং মাস্ক ব্যবহার নেই বললেই চলে।

এনিয়ে,প্রশাসনের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সচেতনতামূলক পোষ্ট দিলেও বিধিনিষেধ কার্যকর করতে মাঠ পর্যায়ে তেমন কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। যার ফলে মাস্ক ব্যবহারে সচেতনতা বাড়ছে না বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।

উপজেলার বিভিন্ন হোটেল ও রেস্তেরাঁ ঘুরে দেখা গেছে, সাধারণ মানুষ অবাধে কিনছেন খাবার। খাবারের হোটেল বা রেস্তোরাঁয় দেখতে চাওয়া হচ্ছে না টিকা সনদ। অনেকে গাদাগাদি করে হোটেলে বসে খাচ্ছেন। মাস্ক কিংবা টিকা ছাড়াই খাবার পরিবেশন করছেন হোটেলের কর্মচারীরা।

স্থানীয় হোটেলে খাবার খেতে আসা এক ব্যক্তি বলেন, আমি টিকা দিয়েছি। কিন্তু টিকা সনদ সঙ্গে নিয়ে আসিনি। এরপর থেকে খাবার খেতে এলে নিয়ে আসব।

পৌর শহরের রৌশনারা হোটেল এন্ড রেষ্টুরেন্টের মালিক বলেন, বিষয়টি তিনি অবগত নন। এরপর থেকে টিকা সনদ দেখার ব্যাপাওে তৎপর হবেন। তবে মাস্ক ছাড়া প্রবেশে নিষেধ করা আছে।

বাঘা বাজারের হাজী বিরিয়ানি হাউসের ১৮ বছর বয়সের কর্মচারী তুষার আহমেদ বলেন, আমার নিজেরই টিকা দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে তিনি জানেন না। এখন থেকে থেকে বিষয়টি যাচাই করবেন।

প্রশাসনের তৎপরতা না থাকার কারণে এখনও সে রকমভাবে তাড়না চোখে পড়ছে না। অনেকে এখনও টিকা দিতে পারেননি, সনদ সঙ্গে আনেননি, কেউ আবার একটি টিকা দিয়েছেন, এমন বহু কারণে টিকা সনদ দেখাতে পারছেন না ক্রেতারা।

বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, করোনা ভ্যাকসিনের জন্য এই উপজেলায় এ পর্যন্ত এক লাখ ১৮ হাজার ৮৬৫ জন নিবন্ধন করেছেন। প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন এক লাখ ১১ হাজার ৭০২ জন। দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছেন ৮১ হাজার ২৬ জন। বুস্টার ডোজ গ্রহণ করেছেন সাড়ে ৬০০ জন। এ ছাড়া ১২-১৮ বছরের ছাত্র-ছাত্রীদের ১৭ হাজার ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ তথ্যমতে, নতুন সংক্রমনে উপজেলায় শনাক্ত হয়েছে মাত্র ১ জন। তিনি সুস্থ হয়েছেন। সিলেটে ঘুরতে গিযে তিনি সংক্রমিত হয়েছিলেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাশেদ আহমেদ বলেন, আমরা যতটা পারি মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি। প্রশাসনিকভাবেও সচেতন করা হচ্ছে। তবে তৎপরতা আরো বাড়ালে এর সুফল দ্রæত পাওয়া যাবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পাপিয়া সুলতানা বলেন, করোনা বিষয়ে সরকারি বিধিনিষেধ সম্পর্কে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার সচেতন করা হচ্ছে। শিগগিরই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে বিধিনিষেধ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, জরুরি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয়-সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় সমাবেশ, অনুষ্ঠানগুলোতে ১০০ জনের বেশি সমাবেশ করা যাবে না। এসব ক্ষেত্রে যারা যোগ দেবেন, তাদের অবশ্যই ভ্যাকসিন সনদ বা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পিসিআর সার্টিফিকেট আনতে হবে।

এছাড়াও সরকারি, বেসরকারি অফিস,শিল্প কারখানাগুলোতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবশ্যই ভ্যাকসিন সনদ গ্রহণ করতে হবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *