স্টাফ রিপোর্টার: আগামী ৪ ডিসেম্বর রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। এ সম্মেলন ঘিরে জেলা আওয়ামী লীগ এখন নানা মেরুকরণ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে সভাপতি-সম্পাদক পদের জন্য আগ্রহী প্রার্থীরা নিজেদের বলয়ের নেতাদের পাশে পেতে এখন দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। কেউ ছুটছেন ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বারে। তবে গত প্রায় ৫ বছরের তিক্ততা ভুলতে এবার রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগকে ঢেলে সাজানো হবে বলেও মনে করছেন দলের শীর্ষ নেতারা।
এ ক্ষেত্রে এবার জেলা আওয়ামী লীগের প্রধান দুটি পদে (সভাপতি-সম্পাদক) আসছে নতুন মুখ আসতে পারে-এমনটিও মনে করছেন কেউ কেউ। পাশাপাশি সংগঠনটির অন্যান্যা পদে আশিন হয়ে যারা বিতর্কে জড়িয়েছেন তাদের নিয়েও ভাবা হচ্ছে। এসব নেতাদের সম্পর্কেও এরই মধ্যে কেন্দ্রে একাধিক প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে। আবার দলে অুনপ্রবেশকারীদের নিয়েও আলাদা একটি তালিকা করা হয়েছে। ফলে আগামী সম্মেলন ঘিরে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগে এবার ব্যাপক পরিবর্তন আসছে বলেও মনে করেন সংগঠনটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
দলীয় সূত্র মতে, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালের ৬ ডিসেম্বর। ওই সম্মেলনে শুধুমাত্র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করে চলে যান কেন্দ্রীয় নেতারা। এর প্রায় এক বছর পরে নানা কাঠ-খোড় পুড়িয়ে পুর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। কাউন্সিল হওয়ার পর পরই জেলা সভাপতি-সম্পাদক নিজেদের বলয়ের লোকজনকে কমিটিতে নিতে তোড়-জোড় শুরু করেন। আর নিয়েই মূলত শুরু হয় দু’জনের মধ্যে রশি-টানাটানি। পরবর্তিতে সেই দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রুপ নেয়। একে অপরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বক্তব্য দেওয়া ছাড়াও কেন্দ্রেও সমানে নালিশ করতে থাকেন দু’জনে। ফরুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি অভিযোগের পাহাড় জমা হতে থাকে কেন্দ্রে। এ অবস্থায় গত ১৩ অক্টোবর রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের বভিাগীয় প্রতিনিধি সভাতে রাজশাহী জেলা কমিটি থেকে সভাপতি-সম্পাদকসহ কাউকেই বক্তব্য পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।
শেষে গত ৮ নভেম্বর ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে রাজশাহী জেলা কমিটির সম্মেলনের জন্য আগামী ৪ ডিসেম্বর দিন ধার্য্য করে দেওয়া হয়। তবে সম্মেলন কমিটির সম্নয়ক করা হয় মহানগর সভাপতি ও রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে। ওই সভাতে কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম রাজশাহী জেলা কমিটির সভাপতি-সম্পাদককে নিজেদের মধ্যেকার পাল্টাপল্টি বক্তব্য প্রতাহার করে ক্ষমা চাওয়ার অুনরোধ জানান। এরপর দু’জনেই ক্ষমা চান। কিন্তু পরবর্তিতে কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, ফারুক চৌধুরী ও আসাদকে নিজেদের মধ্যে ভুলবুঝাবুঝি নিরসনে বুক মেলানোর আহ্বান জানান।
এসময় রাজশাহী জেলা সভাপতি ফারুক চৌধূরী হাতজোড় করে ক্ষমা চেয়ে তিনি আসাদের সঙ্গে বুক মেলাতে পারবেন না বলেও অনুরোধ জানান। পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘আমি যে রাজাকারপূত্র বলে আসাদ অবিহিত করেছেন, সেটি প্রমাণ করতে হবে তাঁকে। এটি না করতে পারলে আমি তার সঙ্গে বুক মেলাতে পারি না। আমি দলের কাছে আর নতুন করে কিছু চাই না।’
এদিকে ফারুক চৌধুরীর এই হাতজোড় করে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার ছবিটিও ভাইরাল করেন আসাদপন্থি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, এই অবস্থায় আগামী সম্মেলনে সভাপতি-সম্পাদক পদে এবার নতুন মুখ আসতে পারে বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। তবে জেলা সভাপতি পদে কাকে আনা হবে এ নিয়েই সবচেয়ে বেশি গুনঞ্জন তৈরী হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের ঘোষণা অনুযায়ী এবার ক্লিন ইমেজের নেত্রত্ব তৈরী করা হবে। সেই ঘোষণা ঠিক থাকলে এবার সভাপতি-সম্পাদক পদে দুটিতেই পরিবর্তন আসছে-এমনটিও ধরে নেওয়া হচ্ছে। সে পরিবর্তন করতে গিয়ে ক্লিন ইমেজের নেতৃত্ব খুঁজতে এরই মধ্যে কাজও শুরু করেছে বিভিন্ন সংস্থা থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতারাও।
সূত্র মতে, এবার রাজশাহী জেলা কমিটির সভাপতি পদে প্রার্থীদের তালিকায় বর্তমান সভাপতি ও তানোর-গোদাগাড়ী আসনের এমপি ফারুক চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য সাবেক ভিবি নূরুল ইসলাম ঠান্ডু ও বর্তমান জেলা সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদের নাম শোনা যাচ্ছে।
রাজশাহীর একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এই চার নেতার মধ্যে সবচেয়ে ক্লিন ইমেজের নেতৃত্ব হলেন শাহরিয়ার আলম। তবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর মতো দায়িত্বশীল একটি জায়গা থেকে তিনি রাজশাহী আওয়ামী লীগের জন্য কতটা সময় দিতে পারবেন, সেটিও নিয়েও সংশয়। এ কারণে শেষ পর্যন্ত সভাপতি পদে আবারো মোড় ঘুরতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।’
অন্যদিকে অপর কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘রাজশাহীতে দলের মধ্যেকার বিভেদ তৈরীর জন্য বর্তমান সভাপতি ফারুক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আসাদই দায়ী। এই অবস্থায় দু’জনের মধ্যেকার কাউকে আবারো সভাপতি করা হলে দ্বন্দ্ব অনেকটা থেকেই যাবে। ফারুক চৌধুরীকে যেমন আসাদ সর্মথকরা পছন্দ করতে পারছে না, তেমনি আসাদকেও অন্তত সাবেক বর্তমানসহ অন্তত চারজন এমপি এবং তাঁদের সমর্থকরা পছন্দ করেন না। তবে তৃণমূলের নেতাদের একটি বড় অংশের কাছেই বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ অনেকটা জনপ্রিয়। আবার প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা নূরুল ইসলাম ঠান্ডুকে সভাপতি করা হলেও নেতাকর্মীদের মধ্য তেমন প্রভাব ফেলতে পারবেন কিনা তা নিয়েও রয়েছে সংশয়।’
তবে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও সভাপতি পদ নিয়ে জানতে চাইলে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দলের প্রয়োজনে যে কোনো কাজে আমাকে নিয়োজিত করলে সেটি সর্বাত্মকভাবেই পালন করার চেষ্টা করি এবং আগামীতেও করবো। আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য নিজেকে উজাড় করে দিতে প্রস্তুত আছি।’
এমপি ওমর ফারুক চৌধুরি বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। এখানে দল যা চাইবে সেটিই মাথা পেতে নিব।’
অন্যদিকে আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘এবার আমি সভাপতি পদে প্রার্থী হবো। দল চাইলে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে আরো নিজেকে নিয়োজিত করবো। তবে এবার আর সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হব না।’
অপরদিকে জেলার সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য যাঁদের নাম শোনা যাচ্ছে তাঁরা হলেন, রাজশাহী-৩ আসনের এমপি আয়েন উদ্দিন, রাজশাহী-৫ আসনের সাবেক এমপি কাজী আব্দুল ওয়াদুদ দারা, বাঘা উপজেলা চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন লাভলু, বাগমারার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম সান্টু, বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক আহসানুল হক মাসুদসহ আরো কয়েকজনের নাম।
স্ব.বা/শা