‘দিনবদলের সনদ’ নামে ২০০৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশের প্রতিশ্রুতি ছিল আওয়ামী লীগের। টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের ইশতেহারের স্লোগান ছিল ‘শান্তি গণতন্ত্র উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’। সেই ইশতেহারে ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার ঘোষণা দিয়েছিল দলটি। ১০ বছরে এই দুই ইশতেহারে যেসব প্রতিশ্রুত ছিল সেগুলোই ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতির পর এখন লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ। এরই মধ্যে কড়া নাড়ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। হ্যাটট্রিক জয়ে এই নির্বাচনকে সমনে রেখে মাঠের রাজনীতির প্রস্তুতির সঙ্গে ইতিমধ্যে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজও শুরু করেছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী মহলের সঙ্গে কথা বলে ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ক্ষমতা ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতাকে গুরুত্ব দিয়ে এবার ইশতেহার তৈরির কাজ করছে দলটি। এতে থাকবে ৮১ বছরের অর্থাত্ ২০১৯ সাল থেকে ২১০০ সাল পর্যন্ত পরিকল্পনা। এ ছাড়া ইশতেহারে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ এবং মাদক নির্মূলের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে থাকবে। দ্বিতীয় পদ্মা ও যমুনা সেতু, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নের বিভিন্ন বিষয় থাকবে এবারের ইশতেহারে। দেশের প্রবৃদ্ধি যেন দুই অঙ্কে পৌঁছায় সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের ঘোষণা থাকবে ইশতেহারে। দেশের প্রতিটি মানুষের সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার যেন রক্ষা হয় সে বিষয়টিও ইশতেহারে জোরালোভাবে থাকছে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি ইশতেহারে সরকার এবং রাষ্ট্রের উল্লেখযোগ্য অর্জন যেমন— যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, কৃষি ও শিক্ষায় উন্নয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে অগ্রগতি, কর্মসংস্থান, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, ১০০টি অর্থনৈতিক জোন, নারী উন্নয়ন ও নারী নীতি বাস্তবায়নের বিষয়গুলোর উল্লেখ থাকবে। দুর্নীতি রোধে গৃহীত পদক্ষেপের কথাও উল্লেখ করা হবে। এ ছাড়া ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত বিষয়গুলো অগ্রগতি বিবেচনায় নিয়ে এবারের ইশতেহারে প্রয়োজনীয় সংযোজন-বিয়োজন আনা হবে।
এ বিষয়ে সম্প্রতি গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের ইশতেহার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী নির্বাচনের জন্য তো ডেলটা প্ল্যান দিয়ে দিলাম। ৮১ বছরের প্ল্যান দিয়ে দিয়েছি। পরবর্তী শতাব্দীতে, মানে ২১০০ সালে কি রকম বাংলাদেশ হবে সেই পরিকল্পনাও দিয়ে দিয়েছি।
একই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, দেশের সম্ভাবনাময় অঞ্চলগুলো থেকে মানুষের চাহিদা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে সে সবের আলোকেই তৈরি হবে এবারের ইশতেহার। বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রকম উন্নয়নের সুযোগ সুবিধা আছে। সে সুযোগ সুবিধাগুলোকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে। বিভাগগুলোর বিভিন্ন জেলায় যারা ব্যবসা এবং শিল্পের নেতৃত্ব দেন তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলছি। এ ছাড়া মানুষের চাহিদা এবং মতামতকেও প্রাধান্য দেয়া হবে এবারের ইশতেহারে।
গত দু’বারের ইশতেহারে আওয়ামী লীগ যে বিষয়গুলো সামনে এনেছিল তাতে সাধারণ ভোটাররা আকৃষ্ট হয়েছিল। টানা দশ বছর ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ সরকার তা বাস্তবায়নও করে চলেছে। বেশ কিছু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। আরো কিছু প্রকল্পের কাজ চলছে। নির্বাচনের আগে কাজ শেষ না হলেই দৃশ্যমান হয়েছে আরো বেশ কিছু মেগা উন্নয়ন প্রকল্পের। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে এই কাজগুলো শেষ করতে বড় ধরনের প্রতিশ্রুতি থাকবে আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের চমক ছিল ভিশন-২০২১। ২০১৪ সালের ইশতেহারে দেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দেয়া হয়। ইশতেহারের এই ঘোষণার আলোকে ইতিমধ্যে অনেকদূর এগিয়ে গেছে দেশ। আগামীতে দেশের চেহারা বদলে দিতে খাদ্য নিরাপত্তা, শিল্প-কারখানা, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ আরো ব্যাপক উন্নয়নের বিশদ প্রস্তাবনা তারা নাগরিকদের কাছে তুলে ধরবেন।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম বলেন, আমাদের দলীয় সভানেত্রীর (আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) নির্দেশে এইচ টি ইমামের নেতৃত্বে একটি টিম ইশতেহার তৈরির কাজ করছেন। ইশতেহারে কোন বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সম্মেলনের ঘোষণাপত্র এবং আগামী প্রজন্মের কথা বিবেচনায় রেখেই প্রস্তুত হচ্ছে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার।