করোনা বিষয়ে সচেতন করতে জেলা পরিষদের ২০ সদস্যকে দেয়া দুই লক্ষ টাকা গায়েব

রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী জেলা পরিষদের ২০ সদস্যকে করোনাভাইরাস নিয়ে জনসচেতনতার জন্য দেওয়া দুই লাখ টাকা কোনো কাজেই আসেনি। জেলাজুড়ে মাইকিং করতে এই টাকা দেওয়া হলেও কোথাও সেই কাজটি করা হয়নি। ফলে মাইকিংয়ের নামে দুই লাখ টাকা গায়েব হয়েছে জেলা পরিষদের ফান্ড থেকে।

বিষয়টি নিজেও স্বীকার করেছেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার।

তিনি বলেন, জেলা পরিষদের ২০ সদস্যকে জেলা করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জনসচেতনতার জন্য গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু কোথাও মাইকিং হয়েছে বলে শুনেনি। কিন্তু এখানে আমার কিছু করার নাই। পরিষদের সদস্যদের কাজটি করার জন্য ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছিলো। তাঁরা না করলে বিষয়টি তাঁরাই দেখবেন।’

এর বাইরে প্রত্যেকটি উপজেলা ও পৌরসভার জন্য করোনাভাইরাস সচেতনতা বা দুর্যোগে আক্রান্ত মানুষগুলোর পাশে দাাঁড়াতে এক-দেড় লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হলেও সেই টাকাও এখন পর্যন্ত অধিকাংশ উপজেলা ও পৌরসভাতে ব্যবহার করা হয়নি। এ নিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। আবার ত্রাণের দাবিতে জেলায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও মানুষ নামছে রাস্তায়। সর্বশেষ গতকাল জেলার গোদাগাড়ীতে বিক্ষোভ করেছেন প্রায় ৩০০ সাধারণ মানুষ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজশাহী শহর থেকে শুরু করে জেলার কোনো উপজেলায় এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস নিয়ে সচেতনতামূলক মাইকিং হয়নি। অথচ এই জেলা পরিষদের ২০ সদস্যকে নিজ নিজ এলাকায় মাইকিং করার জন্য ১০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয় জেলা পরিষদ থেকে।

জেলার দুর্গাপুর উপজেলার বাসিন্দা মোবারক হোসেন বলেন, ‘করোনাভাইরাস নিয়ে সচেতনতামূলক কোনো মাইকিং এখন পর্যন্ত আমার এলাকায় হয়নি। আবার উপজেলা পরিষদ থেকে হ্যান্ড সানিটাইজার, মাস্ক বা খাদ্য সামগ্রী বিতরণের কথাও শুনিনি। কারা হ্যানস্যানিটাইজার পেয়েছে বলতে পারব না। তবে উপজেলা নির্বাহী অফিস থেকে কিছু মানুষকে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেটি অপ্রতুল। আরো ব্যাপক ত্রাণ প্রয়োজন।’

জেলার তানোরের সরাঞ্জয় এলাকার বাসিন্দা লুৎফর রহমান বলেন, আমাদের এলাকাতেও কোনো মাইকিং হয়নি। হ্যান্ডস্যানিটাইজার বাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে মানুষ নিজে থেকেই যতটুকু সচেতন হচ্ছে সেটুকুই। আর অধিকাংশ গরিব মানুষরা রয়েছেন ত্রাণের অভাবে কষ্টে। তবে মাঝে মাঝে প্রশাসনের লোকজন এসে এলাকায় সাধারণ মানুষকে অযথা ঘুরা-ফেরা করতে নিষেধ করছেন। এটুকুই।’

জানা গেছে, করোনাভাইরাসের উপজেলা এক-দেড় লাখ টাকা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয় উপজেলা পরষিদ ও পৌরসভার ফান্ডে। আর মাইকিং করার জন্য জেলা পরিষদ থেকে অর্থ দেওয়া হয় জেলা পরিষদের সদস্যদের মাঝে। তবে জেলার কাটাখালি ও মন্ডুমালায় বিপদগ্রস্থ কয়েক হাজার পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হলেও এখন আর কোনো পৌরসভাতে সেটি দেখা যায়নি। বাঘার আড়ানীতে ৭০ টি পরিবারের মাঝে ত্রাণ দিতে গিয়ে মেয়র মুক্তার আলী কয়েকজন দিনমজুরকে পিটিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠে।

অন্যদিকে উপজেলার মধ্যে গোদাগাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন গত কয়েকদিন ধরে তাঁর নিজ উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ করেছেন। জেলার বাঘা উপজেলা চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন লাভলুও নিজ উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ করেছেন। কিন্তু বরাদ্দ পাওয়া অর্থ এখনো উত্তোলন করা হয়নি বলে দাবি করে লায়েব উদ্দিন লাভলু বলেন, যেটুকু পারছি নিজ উদ্যোগেই করছি। এখনো বরাদ্দের অর্থ উত্তোলন করা যায়নি সরকারি অফিস ছুটি থাকার কারণে।’

কাটাখালি পৌর মেয়র আব্বাস আলী বলেন, পৌর সভার নাগরিকদের জন্য দেড় লাখ বরাদ্দ পাওয়া গেছে। সেটি হ্যান্ডস্যানিটাইজার, খাবার বা যে কোনো সামগ্রী বিতরণ করা যাবে। কিন্তু অফিস ছুটি থাকার কারণে সেটি উত্তোলন করতে পারিনি।

তবে আমি নিজ উদ্যোগে প্রায় ৫ হাজার পরিবারকে ত্রাণ দিয়েছিল। সামনে আরো দেওয়া হবে।সুত্র: সিল্কসিটি।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *