টেলিভিশনগুলোকে শিক্ষামূলক সম্প্রচারে যেতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

গণমাধ্যম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর প্রতি মুনাফার পাশাপাশি সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে শিক্ষামূলক সম্প্রচারে মননিবেশ করার আহবান জানিয়েছেন।

বুধবার প্রধানমন্ত্রী তার তেজগাঁওস্থ কার্যালয়ে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মালিকদের সংগঠন অ্যাসেসিয়েশন অব প্রাইভেট টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স (এটিসিও) এর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এ আহ্বান জাানান। খবর বাসসের

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণ মনোরঞ্জনের জন্য যে টেলিভিশন দেখে সেটাকে শিক্ষার একটি অন্যতম মাধ্যম হিসেবে তার নিজের উন্নয়ন এবং সমাজ বিনির্মাণেও ব্যবহার করা যায়।’

‘সবাই সবার লাভের বিষয়টা দেখবে, কিন্তু সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধটাও গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই টেলিভিশন চ্যানেলগুলো তাদের সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকেই বেশি বেশি শিক্ষামূলক সম্প্রচারে যেতে হবে,’ যোগ করেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। পাশাপাশি আমরা দেশকে যে কোন অপশক্তির কবল থেকে দূরে রাখতে চাই। গণমাধ্যম বিশেষ করে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো দেশের শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং ক্রীড়ার বিকাশে ভূমিকা রেখে এক্ষেত্রে কার্যকরী অবদান রাখতে পারে।

খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, আলোকিত সমাজ বিনির্মাণ, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান প্রভৃতি ক্ষেত্রে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যাণেলগুলো ভূমিকা রাখেতে পারে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব চ্যানেলে এই সব অনুষ্ঠান বেশি বেশি সম্প্রচার করা হলে মানুষের নানা বদ অভ্যাসেরও পরিবর্তন আসতে পারে।

তিনি বলেন, যত বেশি এগুলোর সম্প্রচার হচ্ছে মানুষের মধ্যেও পরিবর্তন আসছে, আমরা দেখতে পাচ্ছি।

এ সময় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এবং তথ্য প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট তারানা হালিম উপস্থিত ছিলেন।

এটিসিও’র চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, পরিচালক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সিনিয়র সহসভাপতি মোজাম্মেল বাবু এবং ইন্ডিটেনডেন্ট টেলিভিশনের নাজমুল হাসান পাপন এমপি এ সময় এটিসিও প্রতিনিধি দলের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, তথ্য সচিব আব্দুল মালেক, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এবং প্রধান তথ্য কর্মকর্তা কামরুন্নাহার এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমাজে যেস কোন অশুভ কাজ না হয় সমাজটা যেন সুন্দরভাবে গড়ে উঠতে পারে, সমাজকে যেন আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি এবং মানুষের শিক্ষা-দীক্ষা সেটা যেন আরো বিকশিত হতে পারে, আমাদের সাংস্কৃতিক চর্চাটা যেন আরো বিকশিত হয়, সাহিত্য চর্চটা বিকশিত হয়, সেই সাথে আমাদের খেলাধূলা বিকশিত হতে পারে যেটা মানুষের শারিরীক ও মানসিক বিকাশের সাথে সাথে চরিত্র গঠনসহ সবদিক থেকে সহযোগিতা করবে সেই বিষয়গুলো আপনারা আপনাদের টেলিভিশনে সম্প্রচার করবেন।

তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস সমগ্র বিশ্বব্যাপীই একটা সমস্যা যদিও এখন পর্যন্ত আমাদের দেশে এই জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু এর উপর সারাক্ষণ আমাদের নজরদারি রাখতে হচ্ছে কোথাও যেন কোনরকম এটা মানুষের ক্ষতি করতে না পারে। দেশকে আর্থসামাজিকভাবে উন্নয়ন করতে হলে দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকা অপরিহার্য; বলেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮৬ ভাগে উন্নীত করার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এটা এত সহজ কাজ নয়, এজন্য কিন্তু আমাদের শ্রম দিতে হয়েছে,খাটতে হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার দেখানো পথেই তার সরকার ৫ বছর মেয়াদি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং ১০ বছর মেয়াদি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা সফলভাবে বাস্তবায়নেই দেশের উন্নতি সম্ভব হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা প্রবৃদ্ধি যেমন বাড়িয়েছি তেমনি মূল্যস্ফীতি দু’অংকের ঘর থেকে ৫ দশমিক ৪ ভাগে নামিয়ে আনতে পেরেছি। যখন মূল্যস্ফীতি কম থাকে এবং উচ্চহারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় তখন এর সুফলটা গ্রামের সাধারণ মানুষ পায়, যেটি এখান পাচ্ছে। বলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী এ সময় দারিদ্র প্রায় ৪০ ভাগের ওপর থেকে ২১ ভাগে নামিয়ে আনার কথা উল্লেখ করে বলেন, আমাদের লক্ষ্য আরো বেশি, এটিকে ১৪, ১৫ বা ১৬ ভাগে নামিয়ে আনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নটা যদি না হত তাহলে আপনাদের এতগুলো টেলিভিশন চ্যানেল কিন্তু মানুষ দেখতো না। কিন্তু এখন গ্রামের ঘরে ঘরে টেলিভিশন রয়েছে। হাটে বাজারে জনগণ টেলিভিশন দেখছে। কারণ, পেটে ভাত আছে, তারা কাজের সুযোগ পাচ্ছে, অর্থনৈতিকভাবে তারা সাবলম্বী হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গ্রাজুয়েশন প্রাপ্তির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে একে ধরে রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমরা এই অর্জনগুলো ধরে রাখতে পারলে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতিটা স্থায়িত্ব লাভ করবে।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে নিয়েই বলেন, তারপরেও আমরা যেভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছি তাতে করে ২০২১ সালের মধ্যে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হতে পারবো বলেই মনে করি।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় তার সরকারের শতবর্ষ মেয়াদি ‘ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০’এর প্রসঙ্গও উল্লেখ করে বলেন, জনসংখ্যা আমাদের বোঝা নয়, সম্পদ এবং তাদের কথা মাথায় রেখেই আমরা এই ডেল্টা পরিকল্পনাটা হাতে নিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় ’৯৬ পরবর্তী তার সরকারের বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দেয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, সে কারণেই তার সরকার এখন ৪১টি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে অনুমতি প্রদান করেছে এবং ৩০টি চ্যানেল এখন সম্প্রচারে রয়েছে।

জাতির পিতা আমাদের দেশ দিয়ে গেছেন এবং এই দেশকে গড়ে তোলাই এখন আমাদের দায়িত্ব উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী প্রাইভেট টিভি চ্যানেলগুলোর উদ্দেশ্যে বলেন, আমার এই কথাটা সবার কাছে পৌঁছে দেবেন যে, মানুষকে একটা কথা চিন্তা করতে হবে- সবকিছুতে সরকারের ওপর নির্ভরশীল হলে চলবে না।

তিনি বলেন, আমরা নিজেরা কতটুকু কি করতে পারলাম, নিজেরা কি করলাম, দেশের জন্য এবং নিজের জন্য কি করতে পারি বা যে এলাকায় বসবাস করি সে এলাকার জন্য কি করতে পারি, এলাকার মানুষের জন্য কি করতে পারি সে চিন্তাটাও মানুষের মধ্যে থাকতে হবে।

তিনি বলেন, মানুষের ভেতর একটা আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে যে, আমাদের নিজেদের কাজ নিজেরা করবো এবং নিজেদের করার মতন সেই দক্ষতাও আমরা অর্জন করবো।

শেখ হাসিনা বলেন, সবসময় সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে নয় আমরা নিজেরাই নিজেদের দেশের উন্নয়ন করবো। আমি মনে করি এই চিন্তাটা দেশের মানুষের মধ্যে থাকতে হবে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মাঝে।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী এটিসিও নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যক্ট -২০১৮’ নিয়ে নিজস্ব অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, বস্তুনিষ্ট সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এটি কোন বাধার সৃষ্টি করবে না। এ সময় উপস্থিত নেতৃবৃন্দ ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন।

প্রেস সচিব বলেন, এটিসিও নেতৃবৃন্দ এ সময় অনলাইন মিডিয়াগুলোকে একটি জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্যও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তাগিদ দেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *