পাটুল ঘাট এ যেন মিনি কক্সবাজার, পর্যটকের ঢল

রাজশাহী লীড

নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার হালতিবিলের পাটুল ঘাট এ যেন মিনি কক্সবাজার। হালতিবিলের মধ্য দিয়ে নির্মিত রাস্তার কারণেই এক নৈসর্গিক সৌন্দর্য মানুষ উপভোগ করতে পারছে।

যখন পানি একটু কম থাকে তখন ওই রাস্তায় হাঁটলে সমুদ্র সৈকতের আমেজ পাওয়া যায়। দুই পাশে পানি আর পানি। মাঝে ক্রংক্রিটের রাস্তায় ছোট-বড় ঢেউ আছড়ে পড়ে। বর্ষাকালের হালতিবিল অথৈ সমুদ্রের মতো।

রেললাইনের ধারে ছোট ছোট গ্রাম ডুবুডুবু প্রায়। বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ে রাস্তার ধারে। এই রাস্তা নির্মাণের ফলে এখন যেন পুরোপুরি বদলে গেছে এ এলাকার দৃশ্যপট।

গ্রীষ্মকালেও এখানকার দৃশ্য খুবই মনোমুগ্ধকর হয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের স্থানীয় সরকার উপমন্ত্রী এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর প্রচেষ্টায় খুব অল্প সময়ের মধ্যে প্রায় ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে পাটুলহাট থেকে খাজুরাহাট পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার এই রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়।

রাস্তা নির্মাণে এ এলাকার মানুষের জীবন-জীবিকার নানান পরিবর্তন ঘটেছে। বর্তমানে ওই এলাকার মানুষ জমির শাক-সবজি, ফসল সহজে হাট-বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে পারছেন।

এর আগে খাজুরা এলাকায় যাওয়ার কোনো রাস্তা ছিল না। বর্ষায় নৌকা ছিল এ এলাকার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র অবলম্বন। সাবেক উপমন্ত্রী দুলুর প্রতিশ্রুতি হিসেবে স্বল্পতম সময়ে পাইলট প্রকল্প হিসেবে নাটোরের হালতি বিলে পানির মাঝ দিয়ে ক্রংক্রিটের ঢালাই করা ব্যতিক্রম দৃষ্টিনন্দন এই রাস্তা নির্মাণ করা হয়।

এখানে প্রতিদিন পাবনা, রাজশাহী, বগুড়া, নওগাঁসহ বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার ভ্রমণপ্রিয় মানুষের ঢল নামে। কেউ কেউ দলবেঁধে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নৌকায় চেপে ঘুরে বেড়াচ্ছে বিলের মধ্যে।

রাজশাহীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আজাদুল বারী ও পাবনার আবু হুরায়রা সপরিবারে এসেছেন হালতিবিল দেখতে। তারা বলেন, হালতিবিলের পরিবেশ যে এত নির্মল-সুন্দর হবে ভাবিনি।

পরিবারের সবাই খুব খুশি এখানে বেড়াতে আসতে পেরে। পত্রিকায় ও টিভিতে দেখে হালতিবিল বেড়াতে আসা বগুড়ার ব্যবসায়ী আবদুল আলিম ও তার স্ত্রী রওনক জাহান বলেন, সত্যিই খুব সুন্দর, মিনি কক্সবাজার নাম দেয়া সার্থক হয়েছে। স্থানীয় ভ্যানচালক কবির হোসেন খুব খুশি। কারণ তার আয় বেড়ে গেছে কয়েক গুণ।

আগে দিনে তার আয় হতো ১০০ থেকে ১৫০ টাকা, এখন হচ্ছে প্রায় ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। নৌকার মাঝি আফজাল হোসেন এখন প্রতিদিন আয় করছেন ছয় শতাধিক টাকা।

হাজার হাজার মানুষের ঢল নামায় এখানে হকারের ভিড়ও বেড়েছে। মুড়ি, বাদাম, চানাচুর, ফল, বিস্কুট, লজেন্স, চকলেট, পান-সিগারেট, চা এমনকি চুড়ি-মালা-কসমেটিক্সের পসরা সাজিয়ে বসেছে অনেকে। বিক্রি হচ্ছে বেশ। নাটোর শহর থেকে হালতিবিলের দূরত্ব ৭ কিলোমিটার।

শহর থেকে শত শত রিকশা, অটোরিকশা ও সিএনজিতে যাওয়ার সহজ ব্যবস্থা রয়েছে। সহস্র মানুষের আগমনে হালতিবিল এখন মুখরিত। শুক্রবারে এই ভিড় বেড়ে যায় কয়েকগুণ।

নলডাঙ্গা উপজেলা প্রশাসন আগত পর্যটকদের সুবিধার জন্য টয়লেটসহ আরও কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। গাড়ি রাখার গ্যারেজসহ বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্টও হয়েছে সম্প্রতি।

বটবৃক্ষের গোড়া পাকা করে বসার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। ভ্রমণপিপাসুদের জন্য আগে দুটি স্পিডবোট চললেও এখন বন্ধ আছে।

সাবেক উপমন্ত্রী এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, অবহেলিত নলডাঙ্গার উন্নয়নের জন্যই সাবেক চেয়ারম্যান ইয়াকুব আলীসহ নেতাকর্মীদের দাবি পূরণে আমি এই রাস্তা নির্মাণ করেছি।

অথৈ জলরাশির এই বিলের মধ্য দিয়ে রাস্তা করার ঘোষণা দেয়ায় সে সময় অনেকে আমাকে পাগল মনে করেছিল। আমি গ্রাম থেকে নলডাঙ্গাকে শহরে পরিণত করেছি। আমার খুব ইচ্ছা ছিল ওই এলাকায় শিশুদের বিনোদনের জন্য একটি পার্ক নির্মাণ করা এবং পর্যটকদের বিশ্রামের জন্য আবাসিক হোটেল, বসার জন্য ছাউনি তৈরি করা। সূত্র: যুগান্তর।

কিন্তু আমাদের সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় সেই সুযোগ আর হয়ে ওঠেনি। আবার সুযোগ পেলে নাটোর-নলডাঙ্গার মানুষের উন্নয়ন ও বিনোদনের জন্য আমার আরও অনেক পরিকল্পনা রয়েছে।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *