জিয়ার খেতাব বাতিল রাজনৈতিক প্রতিহিংসা : বিএনপি

রাজনীতি

স্বদেশবাণী ডেস্ক: সাবেক রাষ্ট্রপতি, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় ‘বীর-উত্তম’ খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) খেতাবটি বাতিলের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক। এই সিদ্ধান্ত যারা নিয়েছে, তাদেরকে কখনোই মুক্তিযুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনে করি না। তারা স্বাধীনতার বিপক্ষে, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে এবং পুরোপুরিভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি কলঙ্কলেপন করা হলো। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন বিএনপি মহাসচিব বুধবার মোবাইল ফোনে এই প্রতিক্রিয়া জানান।

‘সংবিধান লঙ্ঘন, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের দেশত্যাগে সহায়তা এবং তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নের’ কারণ দেখিয়ে জামুকা জিয়াউর রহমানের ‘বীর-উত্তম’ খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে জামুকার সভায় জিয়া ছাড়াও বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি শরিফুল হক ডালিম, নুর চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিনের রাষ্ট্রীয় খেতাবও বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়।

এমন সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, সরকারের অপকর্ম এবং বেরিয়ে আসা ‘সমস্ত দুর্নীতি’ থেকে জনগণের দৃষ্টি দূরে সরিয়ে নিতেই এটা করা হয়েছে।

জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন-এ কথা মনে করিয়ে দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষ শুধু নয়, বাইরের বহু লেখকের লেখায় যার প্রমাণ রয়েছে। এই যে বীর-উত্তম খেতাবটি তিনি পেয়েছিলেন, তা কিন্তু স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার তাকে দিয়েছিল।

মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অসম্মান-মোশাররফ : রাজধানীর গুলশান কার্যালয়ে বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, জিয়াউর রহমানের বীর-উত্তম খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অসম্মান করা। পরে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়।

এতে উপস্থিত ছিলেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বেগম সেলিমা রহমান প্রমুখ। বৈঠকে জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেন নেতারা। এ ব্যাপারে স্থায়ী কমিটি আজ বিকাল ৩টায় সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানোর কথা রয়েছে।

সরকারের কুটিল প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ-রিজভী : রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমানকে রাষ্ট্রীয়ভাবে বীর-উত্তম খেতাব দেওয়া হয়। স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর পর তার খেতাব কেড়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত সরকারের অবিনাশী কুটিল প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ।

রাজধানীতে বিএনপির বিক্ষোভ : জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে ফের নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

এতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের নেতৃত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন মীর সরাফত আলী সপু, আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল, হাবিবুর রশিদ হাবিব, রফিকুল আলম, গোলাম মাওলা শাহীন প্রমুখ। এছাড়াও সন্ধ্যায় বিজয়নগরে মশালমিছিল বের করে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা। মিছিলটি কাকরাইল মোড়ের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় যুবদল নেতা গোলাম মাওলা শাহীনসহ পাঁচ নেতাকর্মী আহত হন।

মুক্তিযুদ্ধকে গৌরবান্বিত করে না-আ স ম রব : জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব এক বিবৃতিতে জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, যারা দেশমাতৃকার জন্য মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে মুক্তিযুদ্ধে অনন্যসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন, তাদের খেতাব বাতিল করা মুক্তিযুদ্ধকে গৌরবান্বিত করে না। প্রতিহিংসামূলক কোনো সিদ্ধান্ত ‘ঐতিহাসিক ন্যায্যতা’কে বিলুপ্ত করে দিতে পারে না। অতীতের গৌরবোজ্জ্বল কৃতিত্বকে বর্তমানের পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করা কোনোভাবেই সুবিচার নিশ্চিত করে না এবং নৈতিকভাবেও গ্রহণযোগ্য নয়।

বঙ্গবন্ধুকে অবমাননার শামিল-সৈয়দ ইবরাহিম : বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম এক বিবৃতিতে বলেছেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহামনের ‘বীর-উত্তম’ খেতাবও বাতিলের সিদ্ধান্ত বঙ্গবন্ধুকে অবমাননার শামিল। কারণ খেতাবটি বঙ্গবন্ধু সরকার দিয়েছিল। বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি মনে করে, আলজাজিরার প্রতিবেদন থেকে মানুষের দৃষ্টি ভিন্নদিকে প্রবাহিত করার জন্য তথা রাজনৈতিক হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতে এ ধরনের জঘন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটি দেশের সব রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অপমানজনক ও অবমাননাকর।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *