স্বদেশবাণী ডেস্ক: রাজধানীর ওয়ারীতে পরকীয়া প্রেমিকার ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন সজিব হাসান নামে এক যুবক। প্রেমিকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক শেষেই তাকে খুন করে ৫ টুকরা করেন প্রেমিকা শাহানাজ পারভিন। এ ঘটনার পর শাহানাজকে আটক করে পুলিশ। নিহত সজিবের সঙ্গে তার চার পাঁচ বছর ধরে অবৈধ সম্পর্ক চলছিল বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ওয়ারীর স্বামীবাগের কে এম দাস লেন এলাকার একটি চারতলা বাসায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
নিহত সজিব হাসান শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার মাষ্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকূপায়। বাড়িতে তার স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। ঘটনার খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন ঢাকার পথে রওনা হয়েছেন বলে জানা গেছে।
ওয়ারী থানার ওসি মো. আজিজুর রহমান যুগান্তরকে জানান, ওয়ারীর ১৭/১ কেএম দাস লেন পানির পাম্প এলাকায় বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে টাকা পয়সা ও সোনার গহনা বিক্রি করার বিষয়ে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে পরকীয়া প্রেমিকা শাহানাজের ছুরির আঘাতে প্রেমিক সজিব ঘটনাস্থলে নিহত হন। গ্রেফতারের পর পুলিশের কাছে শাহানাজ প্রাথমিকভাবে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন।
প্রাথমিক অনুসন্ধানের জানা গেছে, শাহানাজ স্বামীবাগ এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা। তার এক ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। নিহত সজিবের সঙ্গে শাহানাজের চার পাঁচ বছর ধরে অবৈধ সম্পর্ক চলছিল। তারা একটি বাসায় মাঝে মাঝে অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত হতেন। বৃহস্পতিবারও দুজন দেখা করে শারিরীক সম্পর্ক শেষে টাকা ও সোনা গহনা পাওনা নিয়ে ঝগড়ায় লিপ্ত হন। বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে সজিব শাহনাজকে চড় থাপ্পড় মারলে শাহনাজ ক্ষিপ্ত হয়ে চুরিকাঘাত করেন। এতে ঘটনাস্থলেই সজিবের মৃত্যু হয়। মৃতদেহ লুকাতে শাহানাজ মরদেহ ৫টি খণ্ড করেন।
স্থানীয়রা বলছেন, গোঙ্গানীর শব্দ শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে শাহানাজ পালানোর চেষ্টা করেন। স্থানীয়রা তাকে আটক করে পুলিশে দেন। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করে।
সূত্র জানায়, গত ২ দিন আগে হত্যাকারী শাহানাজ পারভিন তার প্রকৃত স্বামীর ঘর সংসার ছেলে মেয়ে রেখে স্বর্ণাংলকার কাপড়চোপড় ও টাকা-পয়সা এবং লাগেজ নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে সজিব হাসানের সঙ্গে দেখা করেন। তার স্ত্রী পরিচয় দিয়ে সজিবের বাসায় অবস্থান করা শুরু করেন।
ওই নারী পুলিশের কাছে বলেছেন, এমন পরিস্থিতিতে সজিব হাসান তার টাকাপয়সা ও স্বর্ণাংলকার নিয়ে বিক্রি করতে চাইলে কথা কাটাকাটি হয়। এরই জেরেই সজিব হাসান তাকে ছুরি দিয়ে হত্যা করতে চাইলে ওই ছুরি কেড়ে নিয়ে উল্টো সজিব হাসানের বুকের নিচে আঘাত করেন। হত্যাকারী শাহানাজ পারভিন প্রেমিক সজিবের তুলনায় শারীরিক গঠনে খুবই ভালো। হত্যা শেষে ছুরি দিয়ে সজিবের দু’হাত, দু’পা বিছিন্ন করে হত্যা করা হয়। এ কাজে ব্যবহৃত ছুরি ও শিল উদ্ধার করেছে পুলিশ।
ওয়ারী ডিভিশনের (ডিসি) শাহ ইফতেখার আহমেদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘ওই চারতলা থেকে সজিবের পাঁচ খণ্ড মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। আটক নারীর সঙ্গে সজীবের পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। ওই নারী বুটিকের কাজের কথা বলে প্রায়ই সজীবের বাসায় যেতেন। প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি, টাকা-পয়সার বিষয় নিয়ে সজিবের সঙ্গে তার ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে ছুরি দিয়ে ওই নারীকে আঘাত করেন সজিব। এতে ওই নারীর হাত কেটে যায়। পরে পারভীন ছুরি কেড়ে নিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। এতে সজীব ঘটনাস্থলে মারা যান। পরে তার দুই পা, দুই হাতসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে ফেলেন। আমরা সংবাদ পেয়ে সজিবের মরদেহ উদ্ধার করি। ’ বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।