বাঘায় মালিকানাধীন জমিতে খাল খননের অভিযোগে বিএমডিএ’র প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে চার মামলা

বিশেষ সংবাদ রাজশাহী লীড

বাঘা প্রতিনিধি:
রাজশাহীর বাঘায় অস্তিত্বহীন নদীতে পানি নিষ্কাশনের জন্য খাল খনন করা হচ্ছে। জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, ভূ-অপরিস্থ পানির প্রাপ্যতা ও সেচ সুবিধার উদ্দেশ্য নিয়ে খাল কাটা হচ্ছে । আর খালের এ পানি গিয়ে পড়বে নদীতে। কিন্তু খালের মাথায় নেই নদীর অস্তিত্ব।

প্রকল্পটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘রাজশাহী জেলার বাঘা, চারঘাট ও পবা উপজেলার জলাবদ্ধতা নিরসন এবং ভূ-অপরিস্থ পানির প্রাপ্যতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ।’ এই প্রকল্পের আওতায় বাঘা উপজেলার মুর্শিদপুর থেকে নওটিকা পর্যন্ত ৮ দশমিক ২ কিলোমিটার খাল খনন করা হচ্ছে। গত ২৪ মে এই কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে। পৌনে দুই কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)।

এদিকে জমি অধিগ্রহণ ছাড়াই ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে খাল খননের অভিযোগ এনে বিএমডিএ’র প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে চারটি মামলা করেছেন। গত শনিবার (২৫ মে) খাল খননের প্রতিবাদে এলাকাবাসী এলাকায় মানববন্ধন করেছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বাঘা উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহীন রেজা ঘটনাস্থলে গিয়ে খাল খনন স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন। তবে গতকাল মঙ্গলবার (২৮ মে) ঠিকাদারের লোকজন খাল খননের পক্ষে মানববন্ধন করেছেন। এ নিয়ে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোনো সময় সহিংস ঘটনার আশংকা দেখা দিয়েছে।

এলাকাবাসী বলছেন, খালের দুই পাড়ে বেশির ভাগ জমিতেই আমবাগান আর বসতবাড়ি। তাতে সেচের প্রয়োজন নেই বললেই চলে। এই খালের পানি কখনোই নদীর দিকে আসে না। অতীতে নদীর পানিই খাল দিয়ে নিচু এলাকা নওটিকার বিলের দিকে নেমে গেছে। উপরন্তু এখন খালের মুখে আর সেই নদীই নেই। বিশাল বালুচর ফেলে নদীই সরে গেছে অনেক দূরে। এই খাল খননে শুধু সরকারের অর্থ অপচয় হবে। আর এলাকায় জলাবদ্ধতা আরও বাড়বে।

গতকাল মুর্শিদপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, এক সময় গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী আর সেখানে নেই। সেই এখন ধূধূ মাঠ। তাতে চাষাবাদ চলছে। কথা হয়, মুর্শিদপুর গ্রামের বাসিন্দা মাজদার রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, গ্রামের পাশ দিয়ে বহমান পদ্মা নদী অনেক দিন আগেই এখানে বিশাল চর ফেলে দক্ষিণে সরে গেছে। এখন সেখানে রীতিমতো চাষাবাদ হচ্ছে। খাল খনন করলেও খালের পানি আর পদ্মা নদীতে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ছোট বেলায় দেখেছেন পদ্মা নদীর পানিই এই খাল দিয়ে উত্তর দিকে নেমে গেছে। উত্তর দিকে নিচু বিল এলাকা থাকার কারণে বরাবরই পানি ওই দিকেই নেমে যায়। ওই দিক থেকে পানির গতিপথ কখনো দক্ষিণ দিকে ফেরানো যাবে না। একটা ভুল নকশার ওপরে এই খাল খনন করা হচ্ছে। এটা এলাকার মানুষ কেউ মেনে নিতে পারছেন না। আর তাছাড়া এখন এই খননকাজ যেখানে করা হচ্ছে সেখানে মানুষের ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি রয়েছে।

এভাবে খাল খননের প্রতিবাদে উপজেলার আরিফপুর গ্রামের তমেজ উদ্দিন, ঢাকাচন্দ্রগাঁতি গ্রামের মোজাহার আলী, নওটিকা গ্রামের আবুল কাশেম ও নিশ্চিন্তপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম গত কয়েকদিন আগে বিএমডিএ’র বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন। তমেজ উদ্দিনের ছেলে তসলিম উদ্দিন বলেন, এখন তাদের ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির ভেতরে খাল টেনে আনা হচ্ছে। এর প্রতিবাদে তারা মামলা করেছেন। মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা এই খাল খনন করতে দেবেন না। তারা ইউএনও এর কাছে গিয়েছিলেন। তিনি প্রথমে এলাকাবাসীর পক্ষে পদক্ষেপ নিলেও এখন ঠিকাদারের লোকসানের কথা ভাবছেন। এলাকার শত শত কৃষকের কথা ভাবছেন না।

ঢাকাচন্দ্রগাঁতি গ্রামের মোজাহার আলী বলেন, এই খালের পানি দিয়ে এলাকায় সেচ দেওয়ার জন্য নাকি খাল খনন করা হচ্ছে। এটা একটা অবাস্তব কথা। তিনি বলেন, এই খালের ধারে মূল আবাদি জামি ছিল উপজেলার বারখাদিয়ার বিলে। এই বিলে এখন পুকুর খনন করে এমন অবস্থার সৃষ্ঠি হয়েছে সেখানে আর কোনো আবাদি জমি নেই। সেখানকার জলাবদ্ধতা নিরসনেরও আর দরকার নেই। সেখানে সেচ দেওয়ারও আর প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, খাল যে দিক দিয়ে গেছে, তার পাশেও আমবাগান আর বসত বাড়ি ছাড়া অন্য আবাদি জমি নেই বললেই চলে। একটি আজগুবি চিন্তা নিয়ে এই খাল খনন করা হচ্ছে। তিনি আরও দাবি করেন যে, এখন যেখানে খাল খনন শুরু করা হয়েছে সেখানে সব ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি। তারা তাদের কাগজপত্র জমা দিয়ে আদালতে বিএমডিএর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তাদের দাবি সরকার যদি একান্তই খাল খনন করতে চায় তাহলে যেখানে খাস জমি রয়েছে সেখান খাল খনন করুক। তাদের কোনো অপাত্তি নেই।

 

বিএমডিএ’র নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশিদ বলেন, এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এই খালের মাধ্যমে যাতে এলাকার পানি পদ্মা নদীতে গিয়ে পড়ে সেই জন্যই এই খাল খনন করা হচ্ছে। এলাকায় জরিপ করেই এই প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদনের আগে এলাকার মানুষ তাদের জলাবদ্ধতার দুর্ভোগের কথা বলেছেন। পদ্মা নদী আর সেখানে নেই। পানিও নদীর দিকে উল্টোভাবে যায় না, এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ঢাকায় আছি। ঢাকা থেকে ফিরে বিষয়টি দেখবেন ।

বাঘার ইউএনও শাহীন রেজা বলেন, তিনি এই কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন। তবু যাতে এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট না হয় তার জন্য গত শনিবার গিয়ে চার দিনের জন্য কাজ স্থগিত করেছিলেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *