নিজস্ব প্রতিবেদক:
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) মেশিন ব্যবহার বন্ধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন রাজশাহী মহানগর বিএনপি। আজ শনিবার বেলা ১২টায় মালোপাড়াস্থ্য বিএনপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
মহানগর বিএনপি’র সভাপতি ও সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল’র সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার অন্যতম উপদেষ্টা মিজানুর রহামন মিনু।
বিশেষ অতিথি ছিলেন, বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও মহানগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন ও তানোর পৌর মেয়র মিজানুর রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে নেতারা বলেন, রাজশাহীর নির্বাচন কমিশন প্রাঙ্গনে নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম প্রদর্শনী হয়েছে। আগামীতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক করার ক্ষেত্রে কোনরূপ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করে বিশ্বব্যাপী পরিত্যক্ত ও বর্জিত ইভিএম নিয়ে মাতামাতি রাজনৈতিক দুরভিসন্ধিমূলক।
তারা আরো বলেন, অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মতামত উপেক্ষা করে অধিকাংশ আইটি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শকে তোয়াক্কা না করে সরকার ও তার অনুগত নির্বাচন কমিশন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে নানাবিধ কর্মতৎপরতা চালাচ্ছে। জনগণের কষ্টার্জিত প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১ লক্ষ ৫০ হাজার ইভিএম/ডিভিএম যন্ত্র ক্রয়ে নির্বাচন কমিশনের অতিআগ্রহ সন্দেহমূলক। নির্বাচন কমিশন যেখানে ২০১০ সালে ১০ হাজার টাকা মূল্যে ১টি ইভিএম ক্রয় করেছিল সেখানে আজ ২০গুণ বেশী দামে (দুই লক্ষ পাঁচ হাজার টাকা) তে ক্রয় করতে যাচ্ছে। এটা জনগণের অর্থ লোপাটে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের একটি অশুভ পার্টনারশীপ। ইতিপূর্বে ইভিএম আয়োজিত সংলাপে ৪০টি রাজনৈতিক দলের অধিকাংশ দল, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ এবং নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ইভিএম ব্যবহারের বিরুদ্ধে পরামর্শ/ প্রাস্তাব দেয়ার প্রেক্ষিতে জাতীয় ঐক্যমত এবং সার্বজনীন আস্থা সৃষ্টি না হলে ইভিএম ব্যবহার করার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে না প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছিলেন। অথচ হঠাৎ করে কি ঘটলো, কি কারণে, কার নির্দেশে, কাকে খুশী এবং বিজয়ী করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশন এই বিতর্কিত এবং সারাবিশ্বে প্রায় পরিত্যক্ত ইভিএম যন্ত্র নিয়ে অতিমাত্রায় তৎপরতা চালাচ্ছে জনমনে এ প্রশ্নের উদ্রেক অস্বাভাবিক নয়! এমনকি ইভিএম ব্যবহার নিয়ে নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। ইভিএম ব্যবহারে কমিশনের হঠাৎ অতি উৎসাহের কিছু কারণ বা যোগসূত্র বিশেষভাবে আলোচিত।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, সরকারের প্রতি অনুগত একজন কর্মকর্তা নির্বাচন কমিশনের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী হেলালউদ্দীন গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, আরপিও সংশোধন করা হবে না। তাহলে কেন আরপিও সংশোধন করে ইভিএম ব্যবহারের এই উদ্যোগ?
উল্লেখ্য যে, গত ৩০ শে জুলাই রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে রাজশাহীর ভোলানাথ একাডেমী ভোট সেন্টারে ১১টি বুথেই ইভিএম মেশিনে ভোট দেওয়ার সময় ৩ টা বুথের ইভিএম মেশিন বেলা ১২ টার মধ্যেই নষ্ট হয়ে যায় এবং পরে পুনরায় তা চালু করা সম্ভব হয়নি। ইভিএম মেশিন বিদ্যুৎ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় বিদ্যুৎ না থাকলে প্রজেক্টর চালু থাকে না বিধায় রিডিংগুলি দেখতে না পাওয়ায় পোলিং এজেন্টদের জন্য দায়িত্ব পালন করা কষ্টসাধ্য।
এসময় বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের পূর্ব ঘোষিত দাবিসমূহ উপস্থাপন কর হয়। দবি গুলো হল:
বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, বর্তমান সংসদ বাতিল, সরকারের পদত্যাগ, সকল দলের অংশগ্রহণের আলোচনা সাপেক্ষে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন, ভোটের পূর্বে ম্যাজেস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়ন, ইভিএম ব্যবস্থা থেকে সরে আসা, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দল নিয়োগ- আমন্ত্রণ, সকল রাজবন্দীদের মুক্তি, নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত তাদের প্রশাসনিক হয়রানি থেকে মুক্ত রাখা, নিরাপত্তা প্রদান, গ্রেফতার তল্লাশির নামে হয়রানি বন্ধ, নতুন ও পুরাতন সকল রাজনৈতিক মামলার কার্যক্রম স্থগিত রাখা- সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে এবং সহনশীল শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিতকরণ।
এসময় বোয়ালিয়া থানা বিএনপি’র সভাপতি সাইদুর রহামন পিন্টু, মতিহার থানা বিএনপি’র সভাপতিদ আনসার আলী, শাহ্ মখ্দুম থানা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন, বোয়ালিয়া থানা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম মিলু, মতিহার থানা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক ডিকেন, ১নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি আলহাজ্ব শহীদ আলম, ৩নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি ওয়াজির উজির, ১নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক শামীম রেজা, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি ওয়ালিউল হক রানা ও বর্তমান সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সুইট, ােজলা যুবদলের সভাপতি মোজদ্দে জামান সুমন, মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান রিটন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হাসনাইন হিকোল, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি জাকির হোসেন রিমন, সাধারণ সম্পাদক আবেদুর রেজা রিপন, জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক জুলফিকার রহমান ভুট্টো, মহানগর ছাত্র দলের সভাপতি আসাদুজ্জমান জনি, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রবি ও যুগ্ম সম্পাদক আকবর আলী জ্যাকি সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।