রাজশাহী-ঢাকা: বাস নয় উচ্চ মূল্যে বিক্রি হচ্ছে মাইক্রোবাসের টিকিট

রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টারঃ রাজশাহীর নাজিম উদ্দিন ঢাকায় একটি প্রাইভেট কম্পানীতে চাকরি করেন। ঈদের ছুটিতে বাসায় এসেছিলেন নানা ঝক্কি-ঝামেলা পেরিয়ে। তবে গতকাল তিনি যখন ঢাকায় ফিরেন, তখন তেমন কোনো বাধা পেতে হয়নি। তবে বাস বা ট্রেনযোগে নয়, তিনি ১৫০০ টাকা খরচ করে মাইক্রোবাসযোগে ঢাকায় গেছেন। ওই মাইক্রোবাসে তাঁর মতো আরও ১৭ জন যাত্রী গেছেন ঢাকায়। রাজশাহী থেকে ছেড়ে যাওয়া একটি বাসের কাউন্টার থেকে সাদা স্লিপ নিয়ে মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড থেকে মাইক্রোতে উঠে তার পরে নাজিম উদ্দিন ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। তবে ঢাকার বাইরে খুলনা, সিলেট, চট্টগ্রাম বা বরিশালের জন্য কারো কারো নিকট থেকে মাইক্রোবাসের এই টিকিটের মূল্য নেওয়া হচ্ছে দুই হাজার বা পঁচিশ শ’ টাকা করে।

রাজশাহীর বাস কাউন্টারগুলোতে বসে থাকা কর্মচারীরা তাদের পেট বাঁচাতে মাইক্রো ভাড়া করে সেই মাইক্রোর সিটগুলো যাত্রীদের কাছে বিক্রি করছেন বলেও দাবি করেছেন কর্মচারীরা। তবে এই মাইক্রো বাসের সিট বিক্রি করতেও রাজশাহী পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নকে মাইক্রোবাস প্রতি ৫০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হচ্ছে। তবেই সেই মাইক্রোবাস ছাড়ার অনুমতি পাচ্ছে।এ কারণে বাস বাস কাউন্টারের শ্রমিকরা না চাইলেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে হচ্ছে মাইক্রোবাসের যাত্রীদের কাছ থেকে।

যাত্রী নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘আমাকে যে কোনো মূল্যে ঢাকায় ফিরতে হবে। কিন্তু একা একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে ঢাকায় যাবো তার কোনো সাধ্য ছিল না। এরই মধ্যে খবর পাই ঢাকার বাস কাউন্টার থেকে মাইক্রোবাস ভাড়া করে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। সেই খবর পেয়ে বাস কাউন্টার থেকে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষরযুক্ত স্লিপ নিয়ে মাইক্রোবাস স্ট্যান্ডে গিয়ে মাইক্রোতে চড়ে ঢাকায় যাওয়ার ব্যবস্থা করি। তবে এর জন্য বাসের ৫৫০ টাকার টিকিটের স্থলে মাইক্রোবাসের জন্য দিতে হয়েছে ১৬০০ টাকা। তার পরেও ঢাকায় পৌঁছাতে পেরেছি এটাই বড় কথা।’

সরেজমিনে গতকাল নগরীর শিরোইল বাস স্ট্যান্ডে সারিভাবে দাঁড়িয়ে আছে মাইক্রোবাস ও হাইস গাড়িগুলো। সেখানে দূরপাল্লা বাসের শ্রমিকরাও কেউ বসে কেউ দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁরাই যাত্রীদের মাইক্রোবাস ভাড়া করে দিচ্ছেন। গতকাল থেকে মাইক্রোবাসে যাত্রী প্রতি ঢাকার ভাড়া ১ হাজার ৫০০ টাকা করে। অন্যান্য জেলার জন্য ২০০০-২৫০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। একটি হাইস গাড়িতে ১৫ থেকে ১৬ জন। আর নোহাতে উঠানো হচ্ছে ১১ জন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে- করোনা ভাইরাসের সংক্রম রোধে সরকার দূরপল্লার বাস বন্ধ করে থাকার সুযোগে বিভিন্ন জেলায় ছুটে যাচ্ছে এই মাইক্রোবাসগুলো। তার মধ্যে ঢাকায় যাচ্ছে বেশি। যাত্রীদের নিকট থেকে কমপক্ষে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হলেও বাস শ্রমিকরা মাইক্রো চালকদের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন ১ হাজার থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েজন চালক জানান- ঈদের পর থেকেই এভাবেই তারা ঢাকা বাসস্ট্যান্ড থেকে যাত্রী পরিবহণ করছেন।

যাত্রী মাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘রাজশাহী-ঢাকাগামী হানিফ, দেশ ট্রাভেলস, ন্যাশনাল ট্রাভেলসসহ সব কাউন্টার থেকেই মাইক্রোবাসের টিকিট বিক্রি হচ্ছে। এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে একেকটি টিকিটের জন্য। আমার নিকট থেকে নেওয়া হয়েছে দেড় হাজার টাকা। এরপর একটি হাইস মাইক্রোবাসে করে একসঙ্গে ১৬ জন ঢাকায় যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।’

টিকিট বিক্রিকারী একটি বাস কাউন্টারের কর্মচারী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বাস বন্ধ থাকলেও মালিকদের কোনো সমস্যা নাই। কারণ তাঁদের কোটি কোটি টাকা আছে। কিন্তু আমরা কর্মচারীরা কতদিন বসে বসে দিন কাটাবো? তাই সবাই মিলে যে যার মতো করে মাইক্রোবাস ভাড়া করে সেই মাইক্রোবাসের টিকিট বিক্রি করছি যাত্রীদের কাছে। এতে টিকিট প্রতি দেড়-দুই শ টাকা করে আসছে। সেই টাকা দিয়ে সংসার চালানোর ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু একটি মাইক্রোবাসের জন্য ৫০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হচ্ছে রাজশাহী পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নকে। এটি বড় অন্যায় বলেও দাবি করেন টিকিট কাউন্টারের কর্মচারীরা।

তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে রাজশাহী বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহতাব উদ্দিন বলেন, কে টাকা নিচ্ছে বলতে পারব না। তবে এই ধরনের টাকা ইউনিয়নে জমা হচ্ছে না।’

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *