বাঘা প্রতিনিধি:
রাজশাহীর বাঘায় পদ্মার পানি বাড়ার সাথে সাথে ভাঙছে পদ্মার তীরবর্তী পাড়। ধসে পড়ছে চাপ চাপ মাটি। ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে পাকুড়িয়া ইউনিয়নের কিশোরপুর ও গোকুলপুর এলাকায়। ইতিমধ্যে গ্রাম দু’টির পদ্মাপাড়ের প্রায় আড়াই কিলোমিটার জুড়ে ভাঙনের কবলে পড়েছে। এতে জমি ও গাছপালা নদীগর্ভে চলে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে পদ্মাপাড়ের তোজাম্মেল মাষ্টার, তাহেরুদ্দীন, আনিসুর রহমান আমারুল, তাজমুল ও তামরুলের ঘরবাড়ি। এসব পরিবার ঘর-বাড়ি হারানোর আতঙ্কে রয়েছে। পদ্মার পাড়ে তাদের বসতি যেখানে,তার থেকে ৪০-৫০ গজ দুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ। উদ্যোগের অভাবে অরক্ষিত রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মূলবাঁধও।
সরেজমিন মঙ্গলবার (২৫-০৬-২০১৯) ভাঙন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কিশোরপুর গ্রামের তারুর বাড়ির পশ্চিমের বাঁধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্লক বসানো আছে। আর ভাঙন শুরু হয়েছে তারুর বাড়ির পূর্বে থেকে গোকুলপুর খেয়া ঘাট এলাকার তোজাম্মেল মাষ্টারের বাড়ি পর্যন্ত। এতে নদীপাড়ের চাপ চাপ মাটি ধসে পড়ছে পদ্মায়। ভাঙন ঠেকাতে বছর বছর বাঁশের বেড়া দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা যায়,বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর তীর সংরক্ষনের কাজ করা হয়েছে। তারপরও নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেনা এলাকাগুলো।
স্থানীয় আফজাল জানান,গত ১২ বছরে পদ্মার ভাঙনে এইসব এলাকার প্রায় সহ¯্রাধিক বাড়িসহ ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার,বিজিবি ক্যাম্প ও কয়েক হাজার বিঘা আবাদি-অনাবাদি জমি চলে গেছে নদীর বুকে। ভাঙনে গৃহহারা হয়েছে হাজারো পরিবার। এবারও পদ্মায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আবারো ভাঙন দেখা দিয়েছে। মহদিপুর এলাকার আলিফ জানান,গত ৮ বছরে তার দাদার প্রায় ২’শ বিঘা,আতার পাড়ার সোবহান মোল্লার ৭৫ বিঘা, একই গ্রামের সাধু ডাক্তারের ১০০’শ বিঘা জমিসহ গাছপালা বিলিন হয়েছে পদ্মার ভাঙনে। তাদের মতো অনেকের জমি পদ্মায় বিলিন হয়ে গেছে।
জানা যায়,২০০০ সালে মীরগঞ্জ,আলাইপুর হয়ে গোকুলপুর ,কিশোরপুর পর্যন্ত প্রায় ৭ কিঃ মিটার এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। তার পর থেকেই প্রতিবছর ভাঙতে থাকে পদ্মা। ২০০৪ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন কবলিত জায়গাগুলোতে বালির বস্তা দিয়ে তা ঠেকানোর পর ২০০৫ সালে উদয়নগর বর্ডার গার্ড (বিজিবি)ক্যাম্পসহ চৌমাদিয়া গ্রামটি রক্ষার জন্য ব্লক বসায় পানি উন্নয়ন বোর্ড। সেই ব্লক বসানোর কয়েকদিন পর সেগুলো নদীতে ভেসে যায়। পাকুড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফকরুল হাসান বাবলু বলেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব শাহরিয়ার আলম এমপি(বাঘা-চারঘাট) ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু সেই আশারবানী আজোও বাস্তবায়ন হয়নি। ভাঙন রোধে পানি উন্নযন বোর্ড লোক দেখানো বাঁশের বেড়া দিয়ে শেষ করে প্রকল্প।
উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দীন লাভলু বলেন, ভাঙনরোধে জরুরিভাবে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্র্তৃপক্ষকে অবহিত করে অনুরোধ জানিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহিন রেজা জানান, জেলা প্রশাসককে জানিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারি প্রকৌশলী মোজাম্মেল হক জানান,বাঘা-চারঘাটের নদী তীরবর্তী ৪হাজার ৩’শ মিটার ব্লক বসানোর কাজের জন্য প্রস্তাবিত একটি মেগা প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের জন্য পাঠানো আছে। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু করা হবে। এছাড়াও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মহোদয় যথেষ্ট তৎপর রয়েছেন। যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বর্তমানে ভাঙনের বিষয়টি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বরাদ্দ চেয়ে পাঠানো হয়েছে। পাওয়া গেলে ভাঙনের স্থানগুলোতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।