স্বদেশ বাণী ডেস্ক: করোনার মহামারীর কারণে দীর্ঘ দেড় বছর পর সারা দেশের মতো পাবনার চাটমোহরের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা খুলেছে। রোববার ক্লাস শুরুর প্রথম দিনেই শিক্ষার্থীদের আনাগোনায় মুখরিত ছিল প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
এদিকে অনেক স্কুলের চারিদিকে এখনো পানি জমে আছে। ওই সব স্কুলে অভিভাবকরা নিজ দায়িত্বে নৌকায় করে সন্তানদের রেখে যান।
রোববার সকাল থেকেই অনেক স্কুলে শিক্ষকরা আসার আগেই শিক্ষার্থীরা এসে পৌঁছায়। দীর্ঘদিন পর স্কুলে আসতে পেরে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা। তবে উপজেলার বেশ কিছু নিচু এলাকায় স্কুলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেকে শিক্ষার্থী নৌকায় করে স্কুলে আসে।
দীর্ঘদিন পর একসঙ্গে শিক্ষার্থীদের কাছে পেয়ে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে পড়েন শিক্ষকরাও। আর সহপাঠীদের কাছে পেয়ে একে-অপরের সঙ্গে কুশল বিনিময়সহ আনন্দে মেতে ওঠে শিক্ষার্থীরা। সবকিছু মিলিয়ে উপজেলার প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছিল খুশির আমেজ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। তবে একই সঙ্গে করোনার সংক্রমণ ফের বাড়ার শঙ্কায় তাদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও রয়েছে।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, চলনবিল অধ্যুষিত চাটমোহর উপজেলায় বন্যার পানির কারণে প্রাথমিক পর্যায়ের ২২টি এবং হাইস্কুল এবং মাদ্রাসা মিলিয়ে মাধ্যমিক পর্যায়ের মোট ১১টি স্কুল পানিবন্দি ছিল। পানি প্রবেশ করেছিল শ্রেণিকক্ষেও। স্কুল খোলা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু গত কয়েক দিনে পানি কমার কারণে সংশয় কেটে যায়।
সরেজমিন উপজেলার টেংগরজানি, মহেলা, জামালপুর, ব্রহ্মপুর, দিলালপুর সরকারি প্রাথমিক ঘুরে দেখা গেছে, করোনা মহামারীর কারণে অ্যাসেম্বলি না থাকায় রোববার সকাল থেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুলে আসা শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এরপর স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মাস্ক পরেছে কিনা তা যাচাই করে শিক্ষার্থীদের স্কুলে প্রবেশ করান শিক্ষকরা।
এরপর সকাল সাড়ে ৯টায় ঘণ্টা বাজিয়ে পাঠদান শুরু হয়। এর আগে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাস্ক প্রদান করেন শিক্ষকরা। তবে বন্যার কবলে পড়া পানিবন্দি বেশ কিছু ভবন থেকে পানি নেমে গেলেও খেলার মাঠ ও স্কুলের চারিদিকে এখনো পানি জমে আছে। তবে ওই সব স্কুলে অভিভাবকরা নিজ দায়িত্বে নৌকায় করে সন্তানদের স্কুলে রেখে যান। শিক্ষকদের নির্দেশনা মেনে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস করতে দেখা যায়।
স্কুলে দিতে আসা কয়েকজন অভিভাবকের কাছে জানতে চাইলে তারা যুগান্তরকে বলেন, স্কুল খোলা পেয়ে বাচ্চারা খুব খুশি হয়েছে। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই স্কুলে নিয়ে যেতে তাড়া দেয়। কিন্তু শঙ্কার কথা হচ্ছে, তারা সবাই মাস্ক পরে থাকবে কিনা। বন্ধুদের সঙ্গে কাছাকাছি হবে, কথা বলবে, হাত ধরাধরি করবে। এতে সংক্রমণের একটা ঝুঁকি থেকেই যায়। তবে সন্তানদের আনন্দই সবচেয়ে বড় আনন্দ বলে জানান তারা।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার মাহবুবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, দীর্ঘদিন পর স্কুল খোলায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে উচ্ছ্বাস দেখা গেছে তা অতুলনীয়। প্রতিটি স্কুলের প্রধান এবং শিক্ষকদের সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদানের জন্য বলা হয়েছে। আর পানিবন্দি যেসব স্কুল ছিল সেই স্কুলগুলোতে অভিভাবকরা নিজ দায়িত্বে নৌকায় করে তাদের সন্তানদের রেখে গেছেন। সকাল থেকেই বেশকিছু স্কুল পরিদর্শন করা হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে শিক্ষার্থীরা উৎসবমুখর পরিবেশে পাঠগ্রহণ করেছে বলে জানান তিনি।