বাবা হারা জিয়ারুল কচু চাষে সফল

রাজশাহী লীড
বাগাতিপাড়া (নাটোর) প্রতিনিধিঃ অল্প বয়সে বাবাকে হারিয়ে মা ও ছোট দুই ভাইকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পরেন নাটোরের বাগাতিপাড়ার জিয়ারুল। দিন বদলের চেষ্টায় শুরু করেন ‘বউশা হাইব্রীড’ জাতের মুখীকচু চাষ। আর এই মুখীকচু চাষ করে বদলে গেছে জিয়ারুলের দিন। তিনি জীবন যুদ্ধে সফল।
তার এই সফলতায় এলাকার অনেকেই এখন মুখীকচু চাষ করছেন।
সফল জিয়ারুল উপজেলার হরিরামপুর গ্রামের মৃত আব্দুল মমিনের ছেলে।
জানা গেছে, মাত্র ১৩ বছর বয়সে পিতাকে হারিয়ে মা ও ছোট দুই ভাইকে নিয়ে বিপাকে পড়ে যান জিয়ারুল। সংসারের অভাবের কারণে অষ্টম শ্রেণীর বেশি লেখাপড়া করতে পারেননি তিনি। বাবা বেঁচে থাকতেই তিন বোনের বিয়ে দিয়েছিলেন। নিজেদের সমান্য জমিতে ফসল ফলিয়ে সংসার চলতো না। দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জুটতো না তাদের। কতদিন যে, অর্ধাহারে ও অনাহারে দিন কাটিয়েছেন তারা।
২০১০ সালে বড় ভগ্নিপতির পরামর্শে প্রথম বাড়ির পাশে ১০ কাঠা জমিতে ‘বউশা হাইব্রীড’ জাতের মুখীকচুর চাষ করেছিলেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি জিয়ারুলকে।
মুখী কচু চাষে খরচের অধিক লাভ বেশি হওয়ায় পরের বছর কচু চাষ করেন এক বিঘা জমিতে। এরপর থেকে প্রতিবছরই বাড়তে থাকে তার কচু চাষ। তিনি ৪ বিঘা জমি কিনেছেন এই কয়েক বছরে। নামমাত্র পরিশ্রমে ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় চলতি মৌসুমে তিনি সাড়ে তিন বিঘা জমিতে কচুর চাষ করেছেন। ফলন ভালো হওয়ায় ও দাম ভালো থাকায় প্রায় তিন লাখ টাকার কচু বিক্রয় করবেন বলে আশা করছেন। জিয়ারুল কচু চাষের পাশাপাশি এখন মৌসুমী ফল- আম, লিচু, পেয়ারা ইত্যাদি ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবসাও করছেন।
জিয়ারুল দৈনিক আমার সংবাদ কে বলেন, সাধারণত চৈত্র ও বৈশাখ মাসে মুখী কচুর বীজ লাগাতে হয়। প্রতি বিঘা জমিতে ৮০ থেকে ১০০ কেজি বীজ লাগিয়ে বিঘায় ৯৫ থেকে ১১০ মণ কচু পাওয়া যায়। এই ফসলে রোগ ও পোকার আক্রমন তুলনামূলক কম হওয়ায় সাড়ে তিন বিঘা জমিতে তার খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত বিক্রয় করেছেন প্রায় ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। এখনো জমিতে যা আছে তা প্রায় দেড়লাখ টাকা বিক্রয় করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোমরেজ আলী বলেন, বাগাতিপাড়ায় এবছর প্রায় ১২০ বিঘা জমিতে মুখী কচুর চাষ হয়েছে। রোগবালাই না থাকায় ও দাম ভালো পওয়ায় কচু চাষে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। বাগাতিপাড়ায় মুখীকচুর পাশাপাশি ওলকচু, মানকচুও সম্ভাবনাময় ফসল হিসেবে দেখা দিয়েছে। তাই কচুর আবাদ বৃদ্ধিতে কৃষিদপ্তর থেকে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *