বাঘা প্রতিনিধি: জামিনে মুক্তি পেয়েছেন কারাগার থেকে নির্বাচিত চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ (তুফান)। গ্রেপ্তার হওয়ার ৩৬ দিন পর দায়রা জজ আদালতের জামিনে মুক্তি পান, আওয়ামীলীগ থেকে বহিস্কৃত কারাবন্দী বিজয়ী চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ (তুফান)সহ ৪জন। নূর মোহাম্মদের আইনজীবি মমিনুল ইসলাম মামুন জানান, গতকাল সোমবার (১০-০১-২০২২) রাজশাহীর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মীর শফিকুল ইসলাম জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। জামিনের কাগজপত্র কারাগারে আসার পর তা যাচাই-বাছাই শেষে এইদিন সন্ধ্যার পর নূর মোহাম্মদ সহ ৪জনকে মুক্তি দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সোমবার রাত সাড়ে ৬টার দিকে রাজশাহীর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাদের মুক্তি দেওয়া হয় ।
নিজ গ্রামে ফেরার পর বিজয়ের মালা গলায় পরিয়ে দেন ভোটাররা। কারামুক্ত চেয়ারম্যান বললেন আমি বাউসা ইউনিয়নবাসির কাছে কৃতজ্ঞ । আমার বিজয় ইউনিয়নের মেহনতী মানুষের বিজয়। বাউসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক লুৎফর রহমান জানান, মুক্তি পেয়ে নিজ বাড়িতে পৌঁছেন রাত সাড়ে ৯টায়। আসার পথে অনেকেই ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। মঙ্গলবার(১১-০১-২০২২) সকালে নিজ বাড়িতে গলায় ফুলের মালা পরিয়ে বিজয়ের শুভেচ্ছা জানানো হয়।
জানা গেছে, চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বাউসা ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ দলীয় মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হন, উপজেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক নূর মোহাম্মদ (তুফান)। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বদ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারে তাকে রাজি করাতে ব্যর্থ হন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। এক পর্যায়ে যেতে হয়েছে কারাগারে।
২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের উত্তাপের আগে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় কারাগারে যেতে হয় নূর মোহাম্মদকে। ৫ডিসেম্বর নূর মোহাম্মদসহ তার সমর্থিত জয় ইসলাম.উজ্জল হোসেন ও আশিক রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিন্তু সিদ্ধান্ত থেকে সরেননি এক চুলও।
তার হয়ে নির্বাচনের মাঠে একাই লড়ে গেছেন স্ত্রী। কিন্তু প্রচারে বাধা, পোস্টার নষ্ট করাসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে যায় এই নারীর জন্য। তারপরও তুফানের জয় ঠেকানো যায়নি।
গত ২৬ ডিসেম্বর ভোটের ফল ঘোষণা হলে দেখা যায় বহিস্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা নুর মোহাম্মদ তুফানে ডুবে গেছে নৌকাসহ সব প্রতিদ্বদ্বী। কারাগারেই তাকে সুসংবাদ পৌঁছে দেন তার স্ত্রী রোজিনা আক্তার পলি।
অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বেসরকারি ফলাফলে নুর মোহাম্মদ (তুফান) মোটরসাইকেল প্রতীকে আট হাজার ১৬৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। নৌকার প্রার্থী শফিকুর রহমান পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৪২৮ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন আনারস প্রতীকে পাঁচ হাজার ৪০১ ভোট পেয়েছেন।
রাজশাহীর বাঘার বাউসা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন নুর মোহাম্মদ তুফানসহ কয়েকজন। দলীয় সিদ্ধান্তে নৌকার ভার দেওয়া হয় উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান শফিকের ওপর। কিন্তু প্রতিদ্বদ্বিতার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন তুফান। মোটরসাইকেল প্রতীকে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় চলে যায় উপজেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদকের পদ।
তার স্ত্রী রোজিনা জানান, বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় তুফানকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারে নানাভাবে চাপ দিতে থাকেন উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতারা। সর্বশেষ ৪ ডিসেম্বর রাতে তুফানের টলটলিপাড়ার বাড়িতে যান উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তাদের হাত থেকে বাঁচতে চলে যান আত্মগোপনে। তাদের আহŸানে সাড়া না দেওয়ায় সেই রাতে তুফানের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ সময় বহিরাগত হামলার খবরে আওয়ামী লীগ নেতাদের গণপিটুনি দেয় স্থানীয়রা। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগেরই এক নেতার দায়ের করা মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
ঘটনার পরদিন সকালে মামলা করতে গেলে তুফানসহ চারজনকে অন্য একটি মামলায় গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। কয়েক দফা তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল সোমবার (১০-০১-২০২১) আদালত জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। রাত সাড়ে ৬টার দিকে রাজশাহীর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়।
স্ব.বা/বা