সাবেক এক চেয়ারম্যানের আপিল নিষ্পত্তি হলো মৃত্যুর ২০ বছর পর! পরিবার জানতেন আগেই আপিলে শেষ হয়ে গেছে

রাজশাহী লীড

বাঘা প্রতিনিধি: রাজশাহীর অবিভক্ত চারঘাট থানার ১ নং বাজুবাঘা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন আব্দুস সোবহান। ওই সময়ে তার বিরুদ্ধে তিনটি হাট-বাজার লিজ দেওয়া সাড়ে ৪০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে ১৯৮২ সালের ৯ জুন চারঘাট থানায় মামলা করেন তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো । ওই বছরের ১০ নভেম্বর এই মামলায় চার্জশিট দাখিল করা হয় । বিচার শেষে ১৯৮৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর নিন্ম আদালতের দেওয়া রায়ে তাকে ৫ বছরের জেল ও ৪২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে ১৯৮৮ সালে হাইকোর্টে আপিল করেন আব্দুস সোবহান (আপিল নং ১৮৬১৯৮৮)। এই আপিল বিচারাধীন থাকাবস্থায় ২০০১ সালের ১৬ জুন মারা যান সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস সোবহান।

মৃত্যুর ২০ বছর পর অভিযুক্ত আসামি আব্দুস সোবহানকে নিম্ন আদালতের দেওয়া ৫ বছরের সাজা বাতিল এবং জরিমানা মওকুফ হয়েছে।! বৃহস্পতিবার (২৭-০১-২০২২) ওই আপিলটি নিষ্পত্তি করে রায় দেন বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদী সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ।

এ বিষয়ে মরহুমের পরিবারের সাথে কথা বললে,তারা বলেন, পিতার মৃত্যুর ২০ বছর পরেও যে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে,এই সংবাদ জানার পর ভালো লাগা ছাড়া আর কি বলার আছে।

বাঘা উপজেলার চাকিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মরহুম আব্দুস সোবহানের বড় ছেলে শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার বর্তমান বয়স চলছে ৫৭ বছর। ২০০১ সালের জুন মাসের দ্বীতিয় সপ্তাহের দিকে আমার পিতা মারা যান। যখন মামলা হয় তখন আমার বয়স ছিল ২১ বছরের মতো। কয়েকটি মামলা হয়েছিল তা জানতাম। সেইসব মামলায় আপিলও করেছিলেন। ১৯৮৩ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে দ্বিতীয়বার বাজুবাঘা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে দায়েরকৃত কয়েকটি মামলায় তার জেল জরিমানা হয়েছিল। এর মধ্যে সবোর্চ্চ সাজা হয়েছিল ৫ বছর। উকিলের পরামর্শে হাইকোর্টে আপিল করে সবোর্চ্চ সাজা খেটে সাড়ে ৪বছর পর বেরিয়ে আসেন। সর্বশেষ যে মামলার রায় হয়েছে,এই সেই মামলা কি-না, সে সম্পর্কে জানা নেই। জানা মতে, মামলাগুলো হয়েছে অবিভক্ত চারঘাট থানা থাকাকালিন সময়ে।

শফিকুল ইসলাম জানান, ৩ ভাই ও ৪ বোনের মধ্যে বর্তমানে ২ভাই ও ২ বোন বেঁচে আছি। পিতার জীবদ্দশায় ১ভাই ও ১ বোন মারা যায়। ২০১৯ সালের ৭ ফেব্রæয়ারি মা ফাতেমা খাতুন মারা গেছে। পরে বড় বোন মারা যায়। বেঁেচ আছি আমিসহ ছোটভাই মোস্তাফিজুর রহমান,বোন মেহেরনেকা ও ফিরোজা। পিতার জীবদ্দশায় তেমন কোন জায়গা জমি ছিল না। এর মধ্যে মামলা চালাতে গিয়ে ২৪ কাঠা জমিও বিক্রি করতে হয়েছে। বর্তমানে বাড়ি ভিটার যে ৪০ শতাংশ জমি আছে,সেটিও মায়ের পৈত্রিক অংশে পাওয়া। ছোট ভাই মোস্তাফিজুর রহমান মহিলা বানিজ্যিক কলেজ এন্ড ভোকেশনার ইন্সটিটিউটে লাইব্রেরিয়ান পদে কর্মরত। আমি ব্যবসা বানিজ্য করে জীবিকা নির্বাহ করি।

তার দাবি, পিতার নামে টাকা আতœসাতের যেসব মামলা হয়েছে, তাই যদি হতো তাহলে জায়গা জমি ঘরবাড়ি করে যেতে পারতেন। কিন্ত করতে পারেননি। তবে কিভাবে মামলা হয়েছে তাও বুঝে উঠতে পারেননি।

সরেজমিন,তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়,পিতার আমলে রেখে যাওয়া মাটির ঘরটা এখনো রয়ে গেছে। এই বাড়িতেই পরিবার নিয়ে বসবাস করেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মরহুম আব্দুস সোবহানের ২ ছেলে।

বাজুবাঘা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান খন্দকার মনোয়ারুল ইসলাম মামুন জানান, ১৯৮৩ সালে দ্বিতীয়বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার আগে মরহুম আব্দুস সোবহান চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার জানা মতে,১৯৮২ সালের দায়েরকৃত মামলায় আপিল করে ১৯৮৩ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অংশ নিয়ে দ্বিতীয়বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে মামলা জনিত কারণে ১৯৮৪ সালে সাসপেন্ড হয়েছিলেন। পরে আর নির্বাচন করেননি। জানা মতে মরহুম আব্দুস সোবহান একজন সহজ সরল মানুষ ছিলেন। জানা মতে অবিভক্ত চারঘাট থানা থাকা কালিন সময়ে মামলাগুলো হয়েছিল।

বিএনপির দলীয় সুত্রে জানা গেছে, অবিভক্ত চারঘাট থানার সভাপতি ছিলেন আব্দুস সোবহান। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সামিরা তারান্নুম রাবেয়া (মিতি)। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহীন আহমেদ।

শাহীদ আহমেদ জানান, হাইকোর্ট বিভাগ অনেক পুরানো একটি আপিল নিষ্পত্তি করে রায় দিয়েছেন। এ মামলার আপিলকারী ২০ বছরের বেশি সময় আগে মারা গেছেন। আপিলকারী মারা গেলে আইনের বিধান হচ্ছে আপিলটা অ্যাবেট (বাদ) হয়ে যাবে দন্ড ও সাজার ক্ষেত্রে। কিন্তু জরিমানাটা থেকে যাবে। এখন এই জরিমানার বিষয়ে শুনানি হয়েছে। শুনানি শেষে আপিল মঞ্জুর করেছেন। এর মাধ্যমে আপিলের নিষ্পত্তি ঘটলো। আপিলে দুদককে পক্ষ করা না হলেও পরে দুদক এই মামলায় পক্ষ হয়ে শুনানিতে অংশ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বৃহসপতিবার শুনানি শেষে রায় দেন হাইকোর্ট।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সামিরা তারান্নুম রাবেয়া (মিতি) বলেন, যেহেতু আপিল মঞ্জুর হয়েছে, সেহেতু ওই চেয়ারম্যানকে নিন্ম আদালতের দেওয়া ৫ বছরের সাজা বাতিল এবং জরিমানা মওকুফ হয়ে গেছে।

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *