বাঘায় রেল লাইনে জীবন গেল মিশনের, বাঁচাতে পারেননি মা

বিশেষ সংবাদ রাজশাহী সারাদেশ

বাঘা প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাঘায় আড়ানীর ষ্টেশন এলাকায় মাহফুজুর রহমান মিশন (২৫) নামের আরেক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ফোনে মাকে শেষ কথাটি আমাকে বাঁচাও বললেও লাভ হয়নি বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) দুপুরের দিকে আড়ানীর রেল লাইনের উপর মাহফুজুর রহমান মিশনের মরদেহ উদ্ধার করে ঈশ্বরদী রেলওয়ে জিআরপি থানা পুলিশ ।

মাহফুজুর রহমান মিশন উপজেলার নওটিকা গ্রামের মৃত গাজিউর রহমানের ছেলে।

কয়েকদিন আগেই ঐ এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে ২০ বছর বয়সের অজ্ঞাত এক যুবকের মরদেহ। উদ্ধারের ঠিক ৫ দিন পর
মাহফুজুর রহমান মিশনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

নিহত মিশনের মা মুল্লিকা বেওয়া বলেন, সোমবার রাত ৮টার দিকে মোবাইল ফোনে আমার সাথে শেষ কথা হয়। সে আমাকে বলে কে বা কারা চোখ মুখ বেঁধে রেখেছে। আমাকে বাঁচাও বলতেই ফোন কেটে যায়।

মুল্লিকা বেওয়া জানান, রোববার বিকেলে বাড়ি থেকে বের হয়ে পীরগাছা বাজারে তার মোবাইল এজেন্ট ও ফ্ল্যাক্রিলোডের দোকানে যায়। প্রতিদিন রাত ৮টার দিকে দোকান থেকে বাড়িতে আসতো। কিন্তু সেদিন আর বাড়িতে আসেনি। তাকে বিভিন্নস্থানে খোঁজ করেও পাওয়া যায়নি।

মাহফুজুর রহমান মিশনের ছোট ভাই রাসেল হোসেন বলেন, আমার ভাই ঢাকায় আম ও লিচুর ব্যবসা করেন। টাকা লেনদেনের বিষয়ে মাঝে মধ্যে ঢাকায় যায়। এছাড়া এলাকায় কিছু ঋণ ছিল। আমার ধারনা,পাওনাদারদের টাকা দিতে না পারায় কৌশলে ডেকে নিয়ে গিয়ে হত্যার পর রেললাইনের উপর ফেলে রেখে গিয়েছে। সুষ্ঠু তদন্ত করে হত্যাকারীদের বিচার দাবি করেন তিনি।

মাহফুজুর রহমান মিশনের মৃত্যুর খবর পেয়ে স্ত্রী তুসি খাতুন তিন বছরের কন্যা সন্তান মেহেরীনকে কোলে নিয়ে স্বামী হারানোর ব্যথায় বিষন্ন মনে বসে বসে ফুপিয়ে কাঁদছে। মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছিলো না তার।

আড়ানী রেল স্টেশনের মাষ্টার সদরুল হোসেন বলেন, ঢাকা, খুলনা, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিদিন রাজশাহীতে ২৪টি ট্রেন আপ ডাউন করে। কোন একটি ট্রেনের নিচে পড়ে এই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। আমার পয়েন্টম্যান সকালে লাইন ক্লিয়ার দিতে গেলে দ্বিখন্ডত লাশ দেখতে পায়। পরে ঈশ্বর্দী রেলওয়ে জিআরপি থানার পুলিশকে অবগত করি। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুপুরে লাশ উদ্ধার করে।

পুলিশ জানায়, একটি মোবাইল ফোন, মানি ব্যাগ, কিছু টাকা, তার ব্যক্তিগত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাওয়া গেছে। তার মোবাইলের কল লিষ্ট ডিলেট করা ছিল।

ঈশ্বর্দী রেলওয়ে জিআরপি থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) শফিকুল ইসলাম বলেন, মৃত্যুও সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য লাশের ময়না তদন্ত করার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে একটি ইউডি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, ১২ জুলাই সকাল ৮টার দিকে উপজেলার আড়ানী রেলস্টেশনের পূর্ব দিকে রেললাইনের উপর অজ্ঞাত (২০) যুবকের দ্বিখন্ড মরদেহ উদ্ধার করে ঈশ্বর্দী রেলওয়ে জিআরপি থানার পুলিশ।

ময়নাতদন্ত শেষে ১৩ জুলাই একটি ইসলামি সংস্থা আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের উদ্যোগে মরদেহ দাফন করা হয়। ৬ দিনেও তার পরিচয় সনাক্ত হয়নি বলে জানা গেছে।

স্থানীয়রা জানান, এধরনের ঘটনা কেন ঘটছে, তার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়ার প্রয়োজন।

স্ব.বা/ম

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *