সরকার ১ ঘণ্টা বললেও রাজশাহীতে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা হচ্ছে লোডশেডিং, দুর্ভোগ চরমে

বিশেষ সংবাদ রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার : বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে লোডশেডিংয়ের সময় নির্ধারণ করা হলেও নির্ধারিত সময়ের বেশি সময় লোডশেডিং হচ্ছে রাজশাহী জুড়ে । এলাকাভিত্তিক দিনে এক ঘণ্টার কথা উল্লেখ করা থাকলেও প্রতি বার এক ঘণ্টা করে ৩ থেকে ৪ বার লোডশেডিং হচ্ছে। এমনকি কিছু কিছু এলাকায় তারও অধিকবার এই লোডশেডিং হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন সচেতন মহল। ব্যবসায়ী থেকে সকলশ্রেণি পেশা মানুষেরা ক্ষোভ জানিয়েছেন।

বুধবার (২০ জুলাই) নেসকোর দেয়া শিডিউল অনুযায়ী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বার বার লোডশেডিংয়ে সাধারণ মানুষদের দুর্ভোগের চিত্র।

সমাজের সচেতন মহল জানান, বিদ্যুৎ সাশ্রয় কি আদৌ সম্ভব? কারণ, প্রতিটি বাড়ি বাড়ি এখন মানুষের নয় বাড়িগুলো ইলেক্ট্রনিক্স পন্যের। মানুষের খাবার কম হলেও চলে কিন্তু বিদ্যুৎ ছাড়া এসি, মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ফ্রিজ, টেলিভিশন চলে না। যখনি বিদ্যুৎ আসে তখনি পরিবারের সবাই ফ্যানের নিচে গিয়ে বসে। আসলে, এই লোডশেডিংয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। উন্নয়নের দিনে এই ঘাটতি অনেকেই মানবে না। তবে ব্যক্তিগত ও সম্মেলিত ভাবে এই সংকট মোকাবেলা করতে হবে।

নিউমার্কেটে আসা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে কর্মরত রাজু নামের একজন বলেন, ১ ঘণ্টার অভাবেই বিদ্যুতের ওপর চাপ পড়ছে ৩ ঘণ্টার। এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ নেই ঠিক আছে। সেখানে কেনো ভাবতে হচ্ছে বিদ্যুৎ কখন আসবে বলে। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা সাধারণ মানুষদের অবগত করলে ভালো হয় যে, উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় কোন কোন সময় বিদ্যুৎ থাকবে বা থাকবে না।

কখন বিদ্যুৎ যাবে এবং কখন বিদ্যুৎ আসবে তা নিয়ে চায়ের দোকান থেকে অফিস আদালত সহ পরিবারের জল্পনা কল্পনার যেন শেষ নেই। গৃহিণীরা অপেক্ষায় থাকছেন বিদ্যুৎ আসলে রান্না করবে, অফিসের মানুষরা এসি রুমে মিটিং বা অফিস পরিচালনা করবেন। এমন ভাবে পরিকল্পণা করলেও সঠিক বিদ্যুৎ বন্ধ বা চালু হচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন নগরবাসীরা।

নগরীর কয়ের দাঁড়ার হোটেল ও মিষ্টির দোকানে রান্নার কাজে কর্মরত একজন বলেন, ফজরের আজানের সময় বিদ্যুৎ নাই। দুপুরের বিদ্যুৎ নাই। সারাদিনে একবার বিদ্যুৎ থাকবে না বলেছেন সরকার। কিন্তু ৩ থেকে ৪ বার লোডশেডিং হচ্ছে। এই হোটেলে মিষ্টির সাথে ভাতের ব্যবস্থা আছে। অনেক কর্মচারীরা কাজ করে ভাত খেতে এসে। সে সময় বিদ্যুৎ থাকেনাে । এজন্য ফ্যান চলে না বলে ঘাম ঝরে পড়ে যায়। এদিকে ট্যাপে পানি থাকে না। খাবার পানির জো থাকে না। খুব সমস্যায় আছি আমরা।

বর্ণালীতে আসা আবু বক্কর সিদ্দিক নামের একজন কৃষি বিজ্ঞানী জানান, সরকারের নির্দেশনা মতো এলাকা ভেদে লোডশেডিংয়ের সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে । সেই নির্দেশনায় সকাল ৯ টা থেকে রাত্রি ১১ টা পর্যন্ত প্রতিটি এলাকায় দৈনিক এক ঘন্টা করে লোডশেডিয়ের কথা বলাও হয়েছে । সেই নির্দেশনার ধারাবাহিকতা তো ঠিক থাকতে হবে। আমার ৮০ বছর পার হয়ে গেছে সকালে বাজার করে এসে বাসায় দেখি বিদ্যুৎ নেই। ভালো কথা , দুপুরে খেয়ে বিশ্রাম নিচ্ছি এমন সময় বিদ্যুৎ নেই। খা খা দুপুরের রোদে কোথায় যাবো? শিডিউল দেয়ার প্রয়োজন মনে করছেন না অনেকেই।

বুলনপুর এলাকার রুমানা খাতুন জানান, হাত পাখা দিয়ে বাতাস করতে হচ্ছে। বিলাসিতা কারোই থাকছেনা। গরমে অতিষ্ট লাগছে অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের জন্য। কম্পিউটারে অনলাইনের প্রায় সমাপ্ত কাজ এমন সময় বিদ্যুৎ চলে যায়। টাস্ক জমা দিতে না পারায় একাউন্ট নষ্ট হয়ে যায়। গত ২৪ ঘণ্টায় রাত ৩ টায়, সাড়ে ৪ টায়, ৬টায় আবার ৭টার সময় ও বিদ্যুৎ চলে গেছে। প্রতিবার প্রায় আধা ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিলো । নেসকোর প্রকাশিত তথ্যে প্রতিটি এলাকায় দিনে এক ঘন্টা খুব লোডশেডিংয়ের কথা উল্লেখ থাকলেও সারা দিনে প্রতিটি এলাকায় ৩ থেকে ৫ ঘন্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বন্ধ বা লোডশেডিং হচ্ছে।

রাজশাহী মহানগীরসহ বিভিন্ন উপজেলার নাগরিকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়াও সাংবাদিকদের ফোন করে অভিযোগ করেন, সরকার লোডশেডিং এর জন্য সময় নির্ধারণ করে দিলেও যখন খুশি যতক্ষণ ইচ্ছে বিদ্যুৎ টেনে রাখছে। এতে করে লেখাপড়াসহ বিভিন্ন কাজে অসুবিধা হচ্ছে।

এদিকে হেতেম খা এলাকা থেকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান, বিদ্যুৎ ঠিকমত না থাকায় ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খুবই ক্ষতি হচ্ছে। সামনে যেসব এসএসসি, এইচএসসি ও এ্যাডমিশন পরীক্ষার্থী আছে তাদের ঠিকমত লেখাপড়া হচ্ছে না। লোডশেডিং এর জন্য নির্ধারিত সময় বেঁধে দিলেও তা মানা হচ্ছে না। এছাড়াও বাড়ীর বৃদ্ধ ও শিশুরা গরমে নাজেহাল হয়ে পড়ছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, বিদ্যুৎ সরকার রাত ৮ টার মধ্যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছে। আমরা তা পালন করব। তবে দিনে ঠিকমত বিদ্যুৎ না থাকায় ক্রেতারা ঠিকমত দোকানে আসছে না। রাজশাহী অঞ্চলে এমনিতেই প্রচুর গরম তার পরও বিদ্যুৎ এর বিপর্যয় সবমিলিয়ে কঠিন অবস্থা পার করছি আমরা। কারখানার কাজ রাতে করা যাচ্ছে না। শ্রমিকদের মজুরি বেশি দিতে হবে। মোটামুটিভাবে আমরা বিপর্যয়ে।

বিদ্যুতের এমন বিপর্যয়ের বেশী ক্ষোভ প্রকাশ করছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে, চায়ের স্টলে, দোকানেসহ বিভিন্ন জায়গায়। তারা সেখানে সরকার ও বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নেসকোকে নানান মন্তব্য লিখে তুলোধুনা করছেন।

রাজশাহী নেসকো লিমিটেডের পরিচালন ও সংরক্ষণ সার্কেল-২ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জাকির হোসেন জানান, বিদ্যুৎ লোডশেডিং শিডিউল দেয়া হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রয়োজনে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকতেই পারে। ঘাটতি থাকলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকতে পারে।

স্ব.বা/ম

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *