বিনোদন ডেস্ক : নব্বই দশকের ডলি সায়ন্তনীর গাওয়া ‘হ্যালো ম্যাকগাইভার’ গানটির কথা মনে আছে! গানটি জনপ্রিয় টেলিভিশন সিরিয়াল ম্যাকগাইভারকে কেন্দ্র করে রচিত। তরুণীদের হৃদয়ে দোলা দেয়া সেই হ্যান্ডসাম যুবককে আমরা ম্যাকগাইভার নামে চিনলেও অনেকেই জানিনা তার আসল পরিচয়।
ছোট থেকে বুড়ো! বিটিভিতে প্রচারিত সেই ‘ম্যাকগাইভার’ সিরিজের ম্যাকগাইভার চরিত্রের ভক্ত হয়ে উঠলো। কতটা জনপ্রিয় হলে একটি সিরিয়ালকে কেন্দ্র করে গান রচিত হয়! কতটা জনপ্রিয় হলে সেই সিরিয়ালের নায়কের ভিউকার্ড, স্টিকার ছাপানো হয়। কিংবা তার মত করেই নিজের ফ্যাশনে পরিবর্তন আনতে শুরু করেন যুবকরা! কিংবা বুদ্ধিমান সেই যুবকের দেখানো নানা কৌশল মেনে চলেন কেউ কেউ! হ্যা এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিলো ম্যাকগাইভার।
পর্দার সেই ম্যাকগাইভারের আসল নাম রিচার্ড ডিন অ্যান্ডারসন। কিন্তু আসল নামে নয় তাকে আমরা চিনি ম্যাকগাইভার নামেই। ১৯৮৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৯২ সালের ২১ মে পর্যন্ত, এবিসি নেটওয়ার্কে প্রচারিত হওয়া সেই টিভি সিরিজ বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত হত নব্বইয়ের দশকে। অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও নানা কৌশলে পারদর্শী একজন প্রাক্তন সিক্রেট এজেন্ট ম্যাকগাইভার চরিত্রটি এতটা শক্তিশালী ছিল যে বাকি চরিত্রগুলীকে দর্শক ভুলে গেলেও তিনি এখনও খুব চেনা হয়ে আছেন। এমনকি বলা যায় নব্বই দশকের সোনালী দিনের সাক্ষী হয়ে আছেন ম্যাকগাইভার। ম্যাকগাইভারের প্রতিটি এপিসোডের আলাদা নাম ও আলাদা গল্প থাকত। একঘেয়েমি তো দূরের কথা! সিরিজটির প্রতিটি শেষ হলে মন খারাপ হয়ে যেত দর্শকের। পরবর্তী এপিসোড দেখতে একসপ্তাহ অপেক্ষার মানেটা এই সময়ে এসে হাস্যকর লাগলেও এমনই ছিল সেই দিনগুলো।
পর্দায় ম্যাকগাইভার পেশায় গুপ্তচর। আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারে তিনি নারাজ। শৈশবে অসাবধানতাবশত গুলি চালাতে গিয়ে এক বন্ধুর মৃত্যুর কারণেই এ সিদ্ধান্ত তার। আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার না করলেও সিরিজে দেখা যায় বহুবার আগ্নেয়াস্ত্রের সামনেই পড়তে হয় তাকে। কিন্তু এই যুবক বুদ্ধি আর কৌশল দিয়ে খুব অল্প সময়েই তৈরি করে ফেলেন বিকল্প। পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র ম্যাকগাইভার শুধু গুপ্তচর নন একজন বিজ্ঞানীও। প্রয়োজনে তিনি খুব অল্প সময়েই উদ্ভাবন করে ফেলেন জটিল যন্ত্র। কিংবা নষ্ট কোনো যন্ত্রাংশকেও গুরুত্বপূর্ণ কাজে লাগিয়ে ফেলেন। বলা যায় পর্দার এ বিজ্ঞানীকে দেখে ছেলেবেলায় অনেক শিশুই বিজ্ঞানী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল!
আচ্ছা সবার প্রিয় ম্যাকগাইভার এখন কেমন আছেন!
মিনেসোটাতে ১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন রিচার্ড ডিন অ্যান্ডারসন ওরফে ম্যাকগাইভার। ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখতেন হকি খেলোয়াড় হওয়ার। কিন্তু তার হাতের বাহু ভেঙে যাবার পর স্বপ্ন ভঙ্গ হলো। তারপর আগ্রহ জন্মালো গানে। গান গাইতে গাইতে তার মনে হলো অভিনয় তাকে টানে। তারপর অভিনয়ের পথেই হাটলেন অ্যান্ডারসন। গানবাজনাকে বিদায় জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট ক্লাউড স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিনয়ে পড়াশোনা শুরু করলেন। ১৯৭৬ সালে শুরু করেন টেলিভিশন ক্যারিয়ার। এরপর নানা সিরিয়ালে এবং সিনেমায় অভিনয় করলেও বিশ্বজোড়া খ্যাতি পেয়েছিলেন ম্যাকগাইভার সিরিজ দিয়েই।
ম্যাকগাইভার সিরিজ শেষ হওয়ার পর এক টিভি সাক্ষাৎকারে সিরিজটি হঠাৎ শেষ হওয়ার কারণ হিসেবে অ্যান্ডারসন জানান শারীরিকভাবে ক্লান্ত হয়ে যাওয়ার কারণেই সিরিজটি শেষ করতে চেয়েছিলেন তিনি।
বর্তমানে তাকে দেখলে অনেকেরই চিনতে কষ্ট হতে পারে। হ্যান্ডসাম সেই যুবকের বয়স-ওজন দুটোই বেড়েছে। বর্তমানে একাই আছেন এই অভিনেতা। ২০০৩ সালে অভিনেত্রী এপ্রিল এ প্রস-এর সাথে ডিভোর্স হয় তার। তাদের একটি মেয়ে সন্তান আছে। বর্তমানে তার সময় কাটে ভ্যাঙ্কুভার, ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেস এবং মিনেসোটাতে ঘুরে ফিরে। সম্প্রতি পর্দায় তাকে দেখা যায় না। বোঝাই যাচ্ছে অবসর নিয়েছেন তিনি। কিন্তু দর্শক হৃদয়ে আজও তিনি চিরচেনা ম্যাকগাইভার।
স্ব.বা/ম