রাজশাহীতে গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে ১৪নং ওয়ার্ড(পূর্ব) আ’লীগের শ্রদ্ধা

রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার : ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন জাতীয় নেতা শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামানের পৌত্রী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য ও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ডা: আনিকা ফারিহা জামান অর্ণা ও ১৪ নং ওয়ার্ড (পূর্ব) আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দরা।

রোববার (২১ আগস্ট) সকাল ১০ টায় উপশহর ১৪ নং ওয়ার্ড পূর্ব আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে একুশে আগস্ট হামলায় নিহতদের স্মরণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন ১৪ নং ওয়ার্ড (পূর্ব) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌকির উদ্দিন খান খালেক, সহ-সভাপতি সাইদুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদুল, রওশন আলী বুলবুল, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রত্না ভৌমিক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাহেরা পারভিন, যুব মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সামমারা, সাধারন সম্পাদক নুর নাহারসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

ইতিহাসের ভয়াবহতম গ্রেনেড হামলার ১৮তম বার্ষিকী পালন করছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মেয়াদে ২০০৪ সালের এইদিনে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে তৎকালীন বিরোধী দলের সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি সমাবেশে নারকীয় গ্রেনেড হামলা চালানো হয়।
বিজ্ঞাপন

সেদিন গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে দানবীয় সন্ত্রাসী হামলায় আক্রান্ত হয় আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মীরা। আক্রান্ত হন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মূল টার্গেট বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার লক্ষ্যে হামলা চালানো হলেও অল্পের জন্য বেঁচে যান তিনি। শুধু গ্রেনেড হামলাই নয়, সেদিন শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার গাড়ি লক্ষ্য করেও চালানো হয় ছয় রাউন্ড গুলি। দলীয় নেতাকর্মীরা মানবঢাল তৈরি করায় সেদিন প্রাণে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেগম আইভি রহমানসহ দলের ২৪ নেতাকর্মী প্রাণ হারান। আহত হন বেশ কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীসহ আওয়ামী লীগের কয়েক শতাধিক নেতাকর্মী। তাদের অনেকেই শরীরে এখনো স্প্রিন্টারের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ছিল ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের কালরাতের বর্বরোচিত ও নারকীয় হত্যাকাণ্ডের ধারাবাহিকতা। আওয়ামী লীগ সভাপতি, ওই সময়ের বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করাই ছিল এই হামলার মূল উদ্দেশ্য। সেই লক্ষ্য পূরণে জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানসহ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর নীলনকশায় সংঘটিত হয় গ্রেনেড হামলা। সেদিন আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের নির্বিকার ভূমিকায় দায়ের করা মামলা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে জজ মিয়া নাটকও সাজানো হয়। তখন ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াতসহ চার দলীয় জোটের ভূমিকাও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ? বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণে দেখা যায়, রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তাতেই প্রকাশ্যে এই হামলা চালানো হয়েছিল।যা পরবর্তীতে আদালতের রায়েও উঠে এসেছে।

তৎকালীন সময়ে সারাদেশে হত্যা, খুন, গুম অত্যাচারের বিরুদ্ধে তৎকালীন জোট সরকারের বিরুদ্ধে ২১ আগস্টের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশ ডেকেছিল আওয়ামী লীগ। পূর্ব নির্ধারিত সমাবেশটি মুক্তাঙ্গনে পুলিশি বাধার কারণে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চ করে অনুষ্ঠিত হয়। সেই সমাবেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বক্তব্য যখন শেষ, ঠিক সেই সময় আকস্মিক বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে শুরু করে গ্রেনেড। গ্রেনেডের বিকট শব্দ, আর্তচিৎকার, দিশেহারা নেতাকর্মীদের ছোটাছুটিতে সমাবেশস্থল আচমকায় পরিণত হয় এক মৃত্যুপুরীতে। ঢাকার তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ও হাসিনার ব্যক্তিগত দেহরক্ষীসহ আওয়ামী লীগ নেতারা তাৎক্ষণিকভাবে এক মানববর্ম তৈরি করে নিজেরা স্প্রিন্টার, গুলির আঘাত সহ্য করে শেখ হাসিনাকে গ্রেনেডের হাত থেকে রক্ষা করেন সেদিন।

মেয়র হানিফের মস্তিস্কে রক্তক্ষরণজনিত অস্ত্রোপচার করার কথা থাকলেও গ্রেনেডের স্প্রিন্টার শরীরে থাকার কারণে তার অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়নি। পরে তিনি ব্যাংকক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আওয়ামী লীগের ওই সময়ের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন প্রাণ হারান। আহত হন ৫ শতাধিক নেতাকর্মী।

হামলার দীর্ঘ ১৪ বছর পর ২০১৮ সালে ১০ অক্টোবর বিচারিক আদালত হামলার সময়কার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। অন্যদিকে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান (বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এছাড়া আরও ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন আদালত। মামলাটি এখন উচ্চ আদালতে বিচারাধীন।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাস্টারমাইন্ড বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ পালাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতের রায় কার্যকর করতে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

রায় ঘোষণার পর বিচারিক আদালতও পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘গ্রেনেড হামলা ছিল আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার প্রয়াস। রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায় প্রকাশ্য দিবালোকে নৃশংস এ হামলা ঘটানো হয়েছিল।’

জঘন্যতম ওই ঘটনায় আনা মামলায় সব পক্ষকে বিদ্যমান সকল আইনি সুবিধা দিয়ে বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ রায় ঘোষণা করেন। বিচারিক আদালতের রায়ের পর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা সংক্রান্ত মামলা এখন হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

স্ব.বা/ম

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *