গৃহবধুকে রাতভর বিয়ের প্রস্তাবসহ খালুর ধর্ষণ চেষ্টা, মিমাংসার নামে ধামাচাপা

রাজশাহী লীড

বাঘা প্রতিনিধি : রাতভর রেখে শাকিল হোসেন বিয়ের প্রস্তাব দেয়। তার কথায় বিয়ে করতে রাজি না হলে জাহিদ হোসেন নামের একজন ধর্ষনের চেষ্টা করে। এসময় জান দিবো তবু মান দিবোনা বলতেই গলা চেপে ধরে। জাহিদ হোসেন শাকিলের খালু আর অপরজন আশিকুর রহমান শাকিলের মামাতো ভাই বলে জানতে পেরেছে। দিনের বেলায় শাকিলের বোনের বাড়িতে রাখার পর সন্ধ্যায় ছেড়ে দেয়। পরে অন্ধ মায়ের কাছে চলে আসে। এরপর ঠাঁই হয়নি তার স্বামীর বাড়িতে।

যতটুকু পড়েছেন ঠিক এমনি ঘটনা উঠে আসে রাজশাহীর বাঘা ‍উপজেলা থেকে।

অন্যের জমিতে ঘর তুলে ছেলে-মেয়ে নিয়ে বসবাস করেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী দিপালি বেওয়া। স্বামীর মৃত্যুর পর মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন বাক প্রতিবন্ধী এক ছেলের সাথে। বিয়ের পর স্বামীর বাড়ি থাকতো দৃষ্টি প্রতিবন্ধী দিপালির মেয়েটি ।

চলতি বছরের গত কোরবানির (ঈদুল আযহা) দিন রাতে ৩ জন লোক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী দিপালির বিবাহিত মেয়েকে স্বামীর বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়ে রাতভর একটি আম বাগানে রাখে। দিনের বেলায় বাড়িতে রেখে সন্ধ্যায় ফেরত দেয়। বাঘা উপজেলার আরিফপুর গ্রাম থেকে তাকে উদ্ধার করে মায়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

এর আগে থানায় অভিযোগ করেন মেয়েটির শ্বশুর হচেন আলী। বিষয়টি মিমাংসার নামে ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে বলে জানান ভুক্তভুগির পরিবার। বিষয়টি নিয়ে কথা হয়,ভুক্তভুগি ও তার মা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ি , জনপ্রতিনিধি, পুলিশ এবং অভিযুক্তদের সাথে।

ভুক্তভুগি মেয়েটি জানায়, তার শ্বশুর বাইরে যাওয়ায় সেদিন রাতে বাড়িতে ছিলেন সেসহ তার স্বামী- শ্বাশুড়ি। এই সুযোগে তার স্বামীর বাসায় যান শাকিলসহ ৩জন। রাত আনুমানিক সাড়ে ১০ টার দিকে পরিচিত শাকিলের ডাকে সাড়া দিয়ে বাইরে বের হওয়ার পরেই শাকিলসহ ৩জন মিলে মোটরসাইকেলে তুলে আমবাগানে নিয়ে যায়। সেখানে নেওয়ার পর তার সোনার চেইন ও ৫০০ টাকা নিয়ে নেয়।

রাতভর রেখে শাকিল হোসেন বিয়ের প্রস্তাব দেয়। তার কথায় বিয়ে করতে রাজি না হলে জাহিদ হোসেন নামের একজন ধর্ষনের চেষ্টা করে। এসময় জান দিবো তবু মান দিবোনা বলতেই গলা চেপে ধরে। জাহিদ হোসেন শাকিলের খালু আর অপরজন আশিকুর রহমান শাকিলের মামাতো ভাই বলে জানতে পেরেছে। দিনের বেলায় শাকিলের বোনের বাড়িতে রাখার পর সন্ধ্যায় ছেড়ে দেয়। পরে অন্ধ মায়ের কাছে চলে আসে। এরপর ঠাঁই হয়নি তার স্বামীর বাড়িতে।

তহিদুল ইসলামের ছেলে শাকিলের বাড়ি বাঘা উপজেলার বাজুবাঘা ইউনিয়নের আরিফপুর গ্রামে। শরিফুলের ছেলে আশিকুরের বাড়ি একই গ্রামে। তবে জাহিদের বাড়ি কোন গ্রামে সেটি জানতে পারেনি ভুক্তভুগি। একই উপজেলার ভিন্ন দু’টি গ্রামে মেয়েটির বাবার বাড়ি ও স্বামীর বাড়ি ।

ভুক্তভুগির শ্বাশুড়ি সেলিনা জানান,মধ্য রাতে বাইরে বের হয়ে ছেলের বউ এর নাম ধরে ডাক দিই। সাড়া না পেয়ে খোঁজ নিয়ে দেখেন ঘরে নেই। রাতে খোঁজ নিয়েও সন্ধান পাননি। শ্বশুর হচেন আলী জানান,সকালে বাড়িতে পৌঁছে বিষয়টি জানার পর আমার গ্রামের মেম্বর মহসীনকে জানিয়ে থানায় অভিযোগ করি। পরে কি হয়েছে তার খোঁজ নেননি। তবে ওই মেয়েটিকে আর বাড়িতে তুলে নিবেননা বলে জানান তিনি।

ভুক্তভুগি মেয়েটির মা দিপালি জানান, আমি অভিভাবক শূন্যে। পনের বছর বয়সে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন বাক প্রতিবন্ধী ছেলের সাথে। এরপরেও বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমার মুঠোফোনে কল দিয়ে কথা বলতো শাকিল নামের ছেলেটি। মেয়েকে উদ্ধার করে রাতে বাসায় ফিরে সব বলে দেয়। মিমাংসার নামে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, গত রোববার (২২ আগস্ট) ১০ হাজার টাকা নিয়ে মিমাংসার কথা বলেছে।

ভুক্তভুগির নানী বুলুয়ারা জানান, স্থানীয় মেম্বর আব্দুর রহমানকে সাথে নিয়ে আরিফপুর গ্রামে গিয়ে নাতনিকে উদ্ধার করেন। সে এখন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মায়ের কাছে। বিয়ের প্রস্তাবে শাকিলের বাবা তহিদুল বলেছে,মেয়ের যেখানে খুশি সেখানে চলে যাক।

বাউসা ইউনিয়নের বাউসা মাঝপাড়া গ্রামের মেম্বর মহমীন আলী ও মাউদপাড়ার মেম্বর আব্দুর রহমান জানান, বাজুবাঘা ইউনিয়নের আরিফপুর গ্রামের মেম্বর আলাল ও বাজিতপুর গ্রামের রবিউলকে নিয়ে শাকিলের বাসায় যান। তার বাড়ি থেকে মেয়েকে উদ্ধার করা হয়।

খন্দকার আলাউদ্দীন মেম্বর জানান, মেয়ের পক্ষ থেকে বিয়ের কথা বলে নিয়ে আসার দাবি করা হলেও ছেলের বাবা বিয়ে দিতে রাজি হননি। পরে সবাই মিলে মেয়ের মায়ের কাছে দেওয়া হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, বিষয়টি মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। রবিউল জানান,সোনার চেইনটি তার কাছে রয়েছে।

অভিযুক্তদের এলাকায় গিয়ে কথা বলতে চাইলে তারা সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর কথা বলতে রাজি না হয়ে আত্নগোপনে যান। শাকিলের মুঠোফোনে কল দিয়েও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে মিমাংসা করে নেওয়ার কথা বলেন,শাকিলের চাচাতো ভাই মনির হোসেন।

বাঘা থানার এসআই জয়দেক কুমার সরকার জানান,মেয়েটির শ্বশুর অভিযোগ করেছিল। উদ্ধারের পর মেয়ে পক্ষ অভিযোগ করেনি। অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাজ্জাদ হোসেন বলেন, অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নিবেন।

স্ব.বা/ম

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *