চাকরি ছেড়ে সিরামিক ব্যবসায়, স্বপ্ন কারখানা প্রতিষ্ঠান

জাতীয়

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: ব্যবসা প্রশাসন বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ ডিগ্রি তার। ব্যবস্থাপনা বিষয়ে রয়েছে ডিপ্লোমা। কিছুদিন দেশের স্বনামধন্য দুটি সিরামিক টাইলস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে করেছেন মার্কেটিংয়ের কাজ। এখন সেই চাকরি ছেড়ে পুরোদস্তুর উদ্যোক্তা চট্টগ্রামের কাজির দেউড়ি এলাকার বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন মানিক। পৈতৃক মূলধন ছাড়া নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে দুটি সেলস সেন্টারের মালিক ইসমাইল স্বপ্ন দেখেন নিজেই সিরামিক টাইলস কারখানা প্রতিষ্ঠার।

ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চট্টগ্রাম (ইউএসটিসি) থেকে বিবিএ, এমবিএ পাস করা ইসমাইল বলেন, আমি যখন বিবিএ-এমবিএ নিয়ে গ্রাজুয়েশন, পোস্ট গ্রাজুয়েশন করি, তখন চাকরির বাজার তত ভালো ছিল না। আমি যেহেতু ব্যবসা প্রশাসন বিষয়ে পড়ালেখা করেছি, সেহেতু বিজনেস রিলেটেড কোনো কাজে যোগ দেওয়া উচিত বলে মনে করি। যেন কিছুদিন চাকরি করে অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের মাধ্যমে নিজের ব্যবসার কাজে তা লাগাতে পারি। চিন্তা করলাম আগামী ১০-১৫ বছরে কোন ব্যবসা ভালো হতে পারে। তখন আমার বিবেচনায় সিরামিক টাইলসের বিষয়টি মাথায় আসে। মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির চাকরির অফার বাদ দিয়ে অল্প বেতনে একটি সিরামিক কোম্পানির মার্কেটিংয়ে যোগ দেই।

ব্যবসায়ী বাবার কাজের সুবাধে চট্টগ্রাম নগরীর ব্যবসায়ী পাড়া কাজির দেউড়ি এলাকায় বেড়ে ওঠা ৩২ বছর বয়সী এ তরুণের। কাজির দেউড়ি সিরামিক টাইলস ব্যবসার কেন্দ্র। যে কারণে বড় বড় ব্যবসায়ীর সঙ্গে পরিচয় গড়ে ওঠে তার। ২০১৬ সালে প্রথমে যোগ দেন শেলটেক সিরামিক কোম্পানির মার্কেটিংয়ে। কিছুদিন পর যোগ দেন সাউথইস্ট ইউনিয়ন সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (সিউসিল) নামে বহুজাতিক সিরামিক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে।

‘আমি শেখার উদ্দেশ্যে মার্কেটিংয়ে যোগ দেই। আমি বাস্তবে দেখলাম দেশে সিরামিক টাইলস সেক্টরের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। তখন আমি অল্প বেতনের বিষয়টি মাথায় না রেখে আগামীর জন্য অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে প্রায় চার বছর কাজ করি। আমার লক্ষ্য ছিল মার্কেটিংয়ে কাজ করলে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর সঙ্গে সুসম্পর্ক হবে। এটা হবে ভবিষ্যতে আমার ব্যবসার পুঁজি। হয়েছেও তাই। এই চার বছরে চট্টগ্রাম ছাড়িয়ে কক্সবাজারের টেকনাফ পর্যন্ত কাজ করার সুযোগ হয়। দূর-দূরান্তের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তৈরি হয় সংযোগ।’ বলছিলেন ইসমাইল।

সিরামিক বিপণনে প্রায় চার বছর অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের পর নিজেই খুলে বসেন সিরামিক টাইলস সেলস সেন্টার। বছরের ব্যবধানে দুটি সেলস সেন্টারের মালিক ইসমাইল। তার অধীনে ২০ জনের মতো লোক কাজ করেন। লক্ষ্য সিরামিক টাইলসের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতাকে গ্রাম্য এলাকায় কাজে লাগানো। স্বল্প সময়ের মধ্যে দক্ষিণ চট্টগ্রামের জনবহুল অনেক লোকেশনে আরও সেলস সেন্টার করার পরিকল্পনা রয়েছে তার।

এ তরুণ উদ্যোক্তা বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানের বয়স এক বছরের বেশি। আমি শহর বাদ দিয়ে ব্যবসায় মফস্বল এলাকাগুলো ফোকাস করি। কারণ সিরামিক টাইলস একটা সময়ে বিলাসীপণ্য ছিল। অভিজাত শ্রেণি, বিশেষ করে উচ্চবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্তরাই প্রথমে মোজাইক, পরে সিরামিক টাইলস ব্যবহার শুরু করেন। এখন দিন পাল্টেছে। সিরামিক টাইলস পণ্য পরিণত হয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে। এখন অনেক কম আয়ের মানুষও একবেলা না খেয়ে নিজের ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে চান।

ইসমাইল বলেন, আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপট এমন যে, ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করে একটি ভালো চাকরি করবে। কিন্তু এখন যত সংখ্যক শিক্ষিত ছেলেমেয়ে লেখাপড়া শেষ করে বের হচ্ছে, সে পরিমাণে চাকরি আমাদের দেশে নেই। আমি শিক্ষিত, উচ্চশিক্ষিত তরুণদের বিষয়ে বলতে চাই, শুধু চাকরির পেছনে না দৌড়ে নিজেই ছোট বিজনেস করতে পারেন। আর প্রথম চাকরি বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে এমন চাকরি হওয়া উচিত, যে চাকরি ভবিষ্যতের জন্য পুঁজি হয়। যে চাকরি ভবিষ্যতের বিনিয়োগ হিসেবে তৈরি হয়। সেজন্য যে ফিল্ডে কাজ করুক না কেন, ভবিষ্যতে সেই ফিল্ড রিলেটেড ব্যবসায় নিজেকে জড়াতে পারেন সেই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। জীবনের শুরুর চাকরিটাই এমন হওয়া উচিত।

বর্তমানে কোন শ্রেণির গ্রাহক তার প্রতিষ্ঠান থেকে সিরামিক টাইলস বেশি কেনেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিরামিক টাইলস আগে অভিজাত শ্রেণির পণ্য ছিল। এখন কিন্তু সেটা নেই। আমাদের সেলস সেন্টার থেকে কম আয়ের মানুষও সিরামিক টাইলস কিনছেন। এখন মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, কেউ দুই রুমের ঘর করলেও নিজেদের ঘরে টাইলস ব্যবহার করার চেষ্টা থাকে।

‘আমাদের দেশে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের সংখ্যা বেশি এবং তারা সিরামিক টাইলস ব্যবহার শুরু করেছে। যে কারণে দেশে সিরামিক টাইলসের বাজার বড় হচ্ছে। এ ব্যবসায় নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। বড় বড় শিল্প গ্রুপ তাদের বিনিয়োগ নিয়ে আসছে এ শিল্পে। এতে সিরামিক টাইলস শিল্পে এখন ব্যবসা এবং কাজের পরিধি দুটোই বাড়ছে।’

ভবিষ্যতে দক্ষিণ চট্টগ্রামকেন্দ্রিক টাইলস কারখানা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন এই তরুণ উদ্যোক্তা, যা ছড়িয়ে যাবে গোটা দেশে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *