আন্তর্জাতিক লীড

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দীর্ঘদিন ধরে ক্রমহ্রাসমান জন্মহার মোকাবিলা ও লিঙ্গসমতা অর্জনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জাপান। কিন্তু কিন্তু উভয় ক্ষেত্রেই অগ্রগতি হয়েছে সামান্য। কিন্তু কেন? জাপানি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপদেষ্টা মোরি মাসোকার বিশ্বাস, জন্মহার ও লিঙ্গ সমতা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত বিষয়- এটি বুঝতে না পারার কারণেই লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে জাপান। দেশটির সরকার এই দুটি বিষয় আলাদাভাবে বিবেচনা করতে চায়।

জাপানে একটি দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে যে, নারীদের কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ জন্মহার কমায় অবদান রাখে। কিন্তু এ দুটি এজেন্ডা, অর্থাৎ লিঙ্গসমতার প্রচার এবং জন্মহার বাড়ানো কোনোভাবেই পরস্পরবিরোধী নয়।

বৈশ্বিক লিঙ্গ বৈষম্য সূচকে ১৪৬টি দেশের মধ্যে জাপানের অবস্থান ১১৬তম। সূচকের চারটি মাত্রার মধ্যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে জাপানিদের স্কোর খুবই কম। লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে দেশটি অন্যদের তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে।
অথচ স্বাস্থ্য ও শিক্ষার ক্ষেত্রে জাপানের স্কোর বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ। এর মানে হলো, দেশটির অর্ধেক জনসংখ্যাই সুস্থ, সুশিক্ষিত, উচ্চ সম্ভাবনাময় ও কাজ করতে প্রস্তুত নারীদের নিয়ে গঠিত। বস্তুত, শিক্ষার কথা উঠলে জাপানে উচ্চশিক্ষায় অংশগ্রহণকারী নারীদের হার ৭৮ দশমিক ২ শতাংশ, যা ওইসিডি দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ।

ধনী দেশগুলোর মধ্যে যেখানে লিঙ্গ ব্যবধান কম, সেখানে প্রজনন হার বেশি। এটিই প্রমাণ করে, লিঙ্গ বৈষম্য ও জনসংখ্যা কমার মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। সেই সম্পর্ককে স্বীকৃতি দেওয়াই জাপানের উভয় সমস্যা সমাধানের চাবিকাঠি।

মাসোকা মনে করেন, জাপানে নারীর ক্ষমতায়ন ও ক্রমহ্রাসমান জন্মহারের দায়িত্ব একই মন্ত্রীর হাতে থাকা উচিত। এটি এ জাতীয় নীতিগুলোর মধ্যে সমন্বয়কে শক্তিশালী এবং সেগুলো আরও কার্যকর করবে।

গোল্ডম্যান স্যাশ ব্যাংকের ধারণা, উন্নত শিক্ষাসহ নারীদের কর্মসংস্থানের হার ও কর্মঘণ্টা যদি পুরুষদের সমান হয়, তবে জাপানের জিডিপি ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।
জাপান সরকার নারীদের অগ্রগতিতে এরই মধ্যে কিছুটা সাফল্য পেয়েছে। যেমন- ২০১৬ সালে দেশটি কর্মক্ষেত্রে নারীদের অগ্রগতির প্রচার আইনে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তথ্য প্রকাশের জন্য চাপ দিয়েছে, গত এক দশকে সেখানে নারী কর্মীর সংখ্যা বেড়েছে ৩৪ লাখের বেশি। সরকার ৩০ লক্ষাধিক শিশুর দেখভালের জন্য চাইল্ড কেয়ার ব্যবস্থা করেছে। এ ধরনের সেবাগুলো এখন ট্যাক্স ও সামাজিক বিমা খরচ থেকে মুক্ত। এছাড়া পিতৃত্বকালীন ছুটির ব্যবস্থাও সংশোধন করা হয়েছে৷
জাপান সরকারের এসব প্রচেষ্টা কাজের পাশাপাশি শিশুদের লালন-পালনের জন্য আরও অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে। যেহেতু শিশুর যত্ন ও কাজের ভারসাম্য বজায় রাখা সহজ হয়ে উঠেছে, তাই আরও বেশি নারী কাজ চালিয়ে যাওয়ার সময় সন্তান গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এক জরিপে দেখা গেছে, জাপানে যেসব বিবাহিত নারীর ন্যূনতম কলেজ ডিগ্রি রয়েছে, তাদের সন্তানের সংখ্যা গত ১৯ বছরের মধ্যে প্রথমবার বেড়ে ২০২১ সালে ১ দশমিক ৭৪-এ দাঁড়িয়েছে।

অনেক জাপানি আরও বেশি সন্তান নিতে আগ্রহী। জরিপ বলছে, দেশটির ৮০ শতাংশের বেশি দম্পতি দুই বা ততোধিক সন্তান নিতে চান। এটি বাস্তবে পরিণত করতে পরবর্তী পদক্ষেপ হবে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি। জাপানকে অবশ্যই এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যেখানে নারীরা সন্তানধারণের পাশাপাশি ব্যক্তি হিসেবেও আলো ছড়াতে পারবেন।

নারীরা জাপানের ‘লুকানো সম্পদ’। তাদের সাফল্যে বাধা দেয় এমন কারণগুলো অবশ্যই দূর করতে হবে। এটি জন্মহার যেমন বাড়াবে, তেমনি জনসংখ্যাগত চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতেও সাহায্য করবে৷

স্ব.বা/রু

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *