স্ত্রীর পরকীয়ায় বাধা দেওয়ায় প্রেমিকের হাতে স্বামী খুন!

জাতীয়

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: পরকীয়া প্রেমে বাধা দেওয়ায় স্ত্রীর প্রেমিকের হাতে স্বামী মনসুরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যাকাণ্ডের চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস হত্যা মামলার আত্মগোপনকারী আসামিকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার (২১ ডিসেম্বরর) গভীর রাতে আত্মগোপনকারী মূল আসামি মো. জাহাঙ্গীর আলমকে (২৯) সাভারের হেমায়েতপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা করে র‍্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল।

বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, নিহত মনসুর রহমান নওগাঁর মান্দা এলাকার বাসিন্দা ও গ্রেফতার জাহাঙ্গীর তার পাশের গ্রামের বাসিন্দা। মনসুর এলাকায় বিভিন্ন দোকানে চানাচুর বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। মনসুর দুটি বিয়ে করেন। তিনি দুই স্ত্রীসহ নিজ বাড়িতে বসবাস করতেন। মূলত নিহত মনসুরের প্রথম স্ত্রী হাসিনার সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় তিনি মেঘনা নামে অন্য মেয়েকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন।

তার প্রথম স্ত্রী হাসিনা এলাকার বিভিন্ন পুরুষের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে লিপ্ত ছিলেন। সর্বশেষ হাসিনা পাশের গ্রামের সাহেব আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়ান।

র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় মনসুরের নিজ বাড়িতে জাহাঙ্গীরসহ তার আরও কয়েকজন বন্ধু হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে আসে। বন্ধুদের পাশের ঘরে বসিয়ে হাসিনা ও জাহাঙ্গীর শয়নকক্ষে সময় কাটানোর একপর‍্যায়ে হাসিনার স্বামী মনসুর এসে তার স্ত্রীকে অপ্রীতিকর অবস্থায় দেখে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। একপর‍্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।

এমন সময় জাহাঙ্গীরের বন্ধুরা মনসুর ও জাহাঙ্গীরের মধ্যে চলমান বিবাদ মিমাংসার কথা বলে মনসুরকে বাড়ির পাশের একটি বাগানে নিয়ে যায়। এ ঘটনার সময় মনসুরের দ্বিতীয় স্ত্রী মেঘনা জাহাঙ্গীর ও মনসুরকে বাড়ি থেকে বাগানের দিকে চলে যেতে দেখতে পায়।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, মূলত এ ঘটনার পেছনে সাহেব আলীর ছেলে জাহাঙ্গীরসহ কয়েকজন মিলে একটি নীলনকশা সাজায়। সেই নীলনকশা অনুযায়ী মনসুরের বাড়িতে এসে হাসিনার সঙ্গে মেলামেশা করে মনসুরকে উস্কে দিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে মনসুরকে বাগানে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাটি আগে থেকেই সুচারুভাবে সাজানো ছিল।

তিনি বলেন, এ ঘটনার পেছনের মূল কারিগর ছিল মাস্টারমাইন্ড এক অপরাধী, কাকতালীয়ভাবে তার নামও জাহাঙ্গীর। তার বাবার নাম মোজাহার। ঘটনাস্থানে উপস্থিত বন্ধুদের মধ্যে পরিকল্পনাকারী জাহাঙ্গীর ছিল না। তবে সে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী বাগানে অপেক্ষা করতে থাকে।

জানা গেছে, এ জাহাঙ্গীরের সঙ্গেও কিছুদিন আগে হাসিনার পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মনসুর বিষয়টি জেনে যাওয়ায় তার সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে হাসিনা ও জাহাঙ্গীরের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়।

র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, পরবর্তীতে হাসিনা সাহেব আলীর ছেলে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ায়। আগে থেকে প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে মোজাহারের ছেলে জাহাঙ্গীর অন্যান্যদের নিয়ে ১১ নভেম্বর তার নিজ বাড়িতে বসে মনসুরকে হত্যার নীলনকশাটি সাজায়।

তবে কৌশলে জাহাঙ্গীর যার সঙ্গে হাসিনার বর্তমান পরকীয়ার সম্পর্ক চলমান তাকে নায়ক হিসেবে তুলে ধরে নিজেকে আড়ালে রাখে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, তারা দুই তিনদিন ধরে মনসুরের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে থাকে এবং ১৫ নভেম্বর সুযোগটি কাজে লাগায়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার জাহাঙ্গীর জানায়, ঘটনার সময় সে বাগানে অপেক্ষায় ছিল। বাকিরা মনসুরকে বাগানে নিয়ে যাওয়ার পর তার নেতৃত্বে সবাই মিলে ঘটনাস্থলে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রাখা বাঁশ ও গাছের ডাল দিয়ে বেধড়ক পেটাতে শুরু করে।

একপর‍্যায়ে জাহাঙ্গীর মাফলার দিয়ে গলায় পেঁচিয়ে গাছের ডালের সঙ্গে মনসুরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয়। ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মনসুরের মৃত্যু নিশ্চিত করার পর জাহাঙ্গীর ও তার সহযোগিরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ঘটনার পরদিন সকালে নিহত মনসুরের দ্বিতীয় স্ত্রী মেঘনা খোঁজাখুজির একপর‍্যায়ে বাগানে ঝুলন্ত অবস্থায় মনসুরের মরদেহটি দেখে। যেহেতু সে রাতে তার স্বামীর সঙ্গে জাহাঙ্গীরকে একসঙ্গে বের হতে দেখে সেহেতু জাহাঙ্গীরকে মূল হত্যাকারী হিসেবে শনাক্ত করা হয়।

এ ঘটনায় ১৭ নভেম্বর নওগাঁর মান্দা থানায় নিহত মনসুরেরর বাবা মো. বদের আলী ওরফে বুদু কবিরাজ বাদী হয়ে মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ অজ্ঞাত ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন।

র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, মামলায় জাহাঙ্গীরকে আসামি করা হলেও হত্যাকাণ্ডটির মূল পরিকল্পনাকারী ও মনসুরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু নিশ্চিতকারী গ্রেফতার আসামি জাহাঙ্গীরের (মোজাহারের ছেলে) নাম মামলায় আসেনি। সে পরিকল্পনাটির পেছন থেকে হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়ে সুকৌশলে নিজেকে আড়াল করে। তারই সাজানো নাটক অনুযায়ী এ হত্যাকাণ্ডে তার সহযোগী জাহাঙ্গীর (সাহেব আলীর ছেলে) মূল আসামি বলে পরিণত হয়।

হত্যাকাণ্ডটি ঘটার পর প্রাথমিকভাবে মাস্টারমাইন্ড জাহাঙ্গীরের সম্পৃক্ততার বিষয়টির কোনো ক্লু না থাকায় তাকে সন্দেহের আওতায় আনা হয় না। পরে গভীর তদন্তে তার সম্পৃক্ততার বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে আসে। এরপর তাকে গ্রেফতার করা হয়।

স্ব.বা/রু

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *