ছাত্রলীগ নেতা তন্ময় ফের প্রক্সি জালিয়াতিতে, চুক্তির টাকা আদায়ে শিক্ষার্থীকে অপহরণ

রাজশাহী লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ‘এ’ ইউনিটের (মানবিক) ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে গিয়ে ধরা পড়েন বায়েজিদ খান নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষার্থী। আটকের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দপ্তরে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, তাঁর সহপাঠী মুশফিক তাহমিদ তন্ময় তাঁকে এই কাজ দেন।

এই অপরাধে ২০২২ সালের আগস্টে তন্ময়কে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। তবে নভেম্বরেই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। পাশাপাশি পদেও ফেরানো হয় তাঁকে। তিনি এখন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।

এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি জালিয়াতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে তন্ময়সহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালাম বাদী হয়ে নগরীর মতিহার থানায় মামলা করেন। এতে আরও ২-৩ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

প্রক্সিতে পাস করে রাবিতে ভর্তি হতে এসে শিক্ষার্থী এখন থানায়, ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলাপ্রক্সিতে পাস করে রাবিতে ভর্তি হতে এসে শিক্ষার্থী এখন থানায়, ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা মামলার আসামিরা হলেন প্রক্সির মাধ্যমে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী আহসান হাবীব, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুশফিক তাহমিদ তন্ময়, শের-ই-বাংলা হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ, লোক প্রশাসন বিভাগের ছাত্র মুহিবুল মোমিন সনেট ও শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী প্রাঙ্গণ।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগে ভর্তি হতে মায়ের সঙ্গে স্যার জগদীশ চন্দ্র অ্যাকাডেমিক ভবনে আসেন আহসান হাবীব। ভর্তি শেষে ভবন থেকে বের হয়ে এলে অজ্ঞাতনামা ৩-৪ জন ব্যক্তি আহসান হাবীবকে অপহরণ করে শের-ই-বাংলা হলের তৃতীয় তলায় আটকে রাখে। এরপর অপহরণকারীরা সেলফোনে তাঁর বাবার কাছে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।

এদিকে দীর্ঘক্ষণ ছেলের খোঁজ না পেয়ে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানান আহসান হাবীবের মা। পরে প্রক্টরিয়াল বডির সহায়তায় তাঁকে উদ্ধার করে প্রক্টর দপ্তরে নিয়ে আসা হয়। এ সময় জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আহসান হাবীব স্বীকার করেন তিনি বাকি আসামিদের সহযোগিতায় প্রক্সির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান। এ জন্য প্রাঙ্গণের সঙ্গে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা চুক্তি হয়। ভর্তির আগে তিনি ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন এবং বাকি টাকা ভর্তির পর দেবেন বলে অঙ্গীকার করেন। কিন্তু ভর্তির পর তিনি সেই টাকা না দেওয়ায় বাকি আসামিরা তাঁকে অপহরণ করে ভয় দেখান।

অপরদিকে সন্তানকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতা মুশফিক তাহমিদ তন্ময়কে প্রধান আসামি করে আরও তিনজনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেছেন আটক আহসান হাবীবের মা রেহেনা বেগম। অপর তিন আসামি হলেন রাজু আহমেদ, প্রাঙ্গণ ও মুহিবুল মোমিন সনেট।

মামলার বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মুশফিক তাহমিদ তন্ময় বলেন, ‘এই ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এটা করেছেন। কেউ যদি আমার কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করতে পারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের সামনে ফাঁসির মঞ্চ সাজিয়ে নিজের ফাঁসি নিজেই কার্যকর করব!’

অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ‘যেই ছেলের মা তন্ময়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন আমি তাকে কোনো দিন দেখি নাই, কথাও হয়নি। তাহলে আমি এটা কীভাবে করতে পারি। তন্ময়ের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। যার কোনো ভিত্তি নেই।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়ার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাঁর ব্যবহৃত নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। একটি পাবলিক পরীক্ষা আইনে, অপরটি অপহরণ ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালাম বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। আরেকটি মামলা করেছেন আহসান হাবীবের মা রেহেনা বেগম।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ‘ভর্তি হতে আসা শিক্ষার্থী আহসান হাবীবকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে এই জালিয়াতির সঙ্গে তন্ময়ের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিল। তাঁর এই স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে গতকাল রাতেই আমরা পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। এখানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েরও কয়েকজন শিক্ষার্থী আছে। আজ ও আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় রোববার হয়তো আমরা তাদের বিরুদ্ধে একাডেমিক কোনো সিদ্ধান্ত নেব।’

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের জুলাইয়ে ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি জালিয়াতিতে ‘মূল হোতা’ হিসেবে ছাত্রলীগ নেতা তন্ময়ের নাম বেরিয়ে আসার পর এ নিয়ে একাধিক জাতীয় দৈনিক সংবাদ প্রকাশিত হয়। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে তন্ময়ের একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৪২ লাখের বেশি টাকা লেনদেনের তথ্য। মূলত এর পরই তন্ময়কে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

সূত্র: আজকের পত্রিকা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *