দেশে দেশে বাড়ছে মূল্যস্ফীতির হার, কঠিন হবে নিয়ন্ত্রণ

আন্তর্জাতিক লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: বার্ষিকভিত্তিতে ধনী দেশগুলোতে ভোক্তা মূল্যসূচক বেড়েছে নয় শতাংশের বেশি। এটি ১৯৮০ সালের পর সর্বোচ্চ। চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বিরাজ করছে। মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি এরই মধ্যে প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে। এতে দেশটির বাজারে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সুদের হার বাড়িয়েছে ফেডারেল রিজার্ভ। মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে বিদ্যমান নানা কারণে মনে হচ্ছে মানুষের মনে পরিবর্তন আনা খুব বেশি কঠিন হবে।

বিশেষজ্ঞ ও সাধারণ গোষ্ঠীর দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। অর্থনীতিবিদ বার্নার্দো ক্যান্ডিয়া, অলিভিয়ার কোইবিওন ও ইউরি গোরোদনিচেঙ্কো আমেরিকার চারটি গ্রæপের মুদ্রাস্ফীতির প্রত্যাশার দিকে নজর দিয়েছেন। অর্থনীতিবিদ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্বাভাস ও লক্ষ্য হলো মূল্যস্ফীতি দুই শতাংশের মধ্যে রাখা। কিন্তু ভোক্তাদের বিশ্বাস মূল্যস্ফীতি আগামী বছরও পাঁচ শতাংশ থাকবে। তাছাড়া এরই মধ্যে পণ্যের মূল্য ও মজুরি বেড়েছে।

শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয় বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতির প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। ক্লিভল্যান্ড ফেড, মর্নিং কনসাল্ট, একটি কনসালটেন্সি ও ব্র্যান্ডেস ইউনিভার্সিটির রাফেল শোয়েনল বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মূল্যস্ফীতির প্রত্যাশা নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে। ২০২১ সালের মে মাসে উত্তর দাতারা জানায়, মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি আগামী বছরও দুই দশমিক তিন শতাংশ থাকতে পারে। এখন তাদের প্রত্যাশা এই হার চার দশমিক দুই শতাংশ হতে পারে।

বর্তমান প্রত্যাশিত মূল্যস্ফীতিকে কমিয়ে আনাটাই এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর প্রধান চ্যালেঞ্জ। কারণ অর্থনৈতিক সাংবাদিক ও বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি অনেক মানুষ তাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দুই-পাঁচ শতাংশ মানুষ মনে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা বহু গুণে ছাড়িয়ে গেছে।

মহামারির আগের বছরগুলোতে আর্থিক নীতির প্রতি জনগণের উদাসীনতা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। তবে সে সময় মূল্যস্ফীতি কম ও স্থিতিশীল ছিল। এখন এটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। পণ্যের মূল্য আকাশচুম্বী হওয়ায় মূল্যস্ফীতি এখন শিরোনাম হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকারদের পদক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নাও আসতে পারে। সুদের হার বাড়ানো হলেও তার প্রভাব বাজারে পড়ছে না। অনেক আমেরিকানরা বিশ্বাস করেন যে ব্যাংকগুলোর পদক্ষেপে মূল্যস্ফীতি কমবে না বরং বাড়বে।

এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে তাহলে অন্য আর কী পদক্ষেপ নেওয়া যাবে। এক্ষেত্রে অনেক বিকল্প রয়েছে। প্রথমটি হলো অপ্রত্যাশিত ঘোষণা। এটি নির্ধারিত বৈঠকের বাইরে সুদের হার বাড়ানোকে ফলপ্রসূ করতে পারে। চলতি বছরের মে মাসে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়। ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকও একই কৌশল অবলম্বন করছে। এক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাও ভূমিকা পালন করতে পারে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজনীতিবিদের এগিয়ে আসতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭ শতাংশ মানুষ মনে করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে প্রেসিডেন্টের হাতে এখনো ক্ষমতা রয়েছে। ১৯৭৯ সালে জিমি কার্টার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ভোলকারকে নিয়োগ করেন। এতে মনে করা হয় তিনি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আগ্রহী। ব্রিটেনে মার্গারেট থ্যাচার ও তার সহযোগীরাও মূল্য স্থিতিশীলতার বিষয়ে কথা বলতেন। এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলছেন।দ্য ইকোনমিস্ট থেকে অনুবাদ করেছেন শাহিন মিয়া

স্ব.বা/ রু

 

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *