নজর দেশি টিকায়

জাতীয় লীড

স্বদেশবাণী ডেস্ক: করোনা মহামারি প্রতিরোধে এবার দেশি টিকার প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। রোববার গ্লোব বায়োটেক তাদের উদ্ভাবিত করোনার টিকা ‘বঙ্গভ্যাক্স’-এর পরীক্ষামূলক প্রয়োগের নীতিগত অনুমোদন চেয়েছে। এ জন্য তারা নথিপত্র জমা দিয়েছে বিএমআরসিতে। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অভিজ্ঞ চিকিৎসাবিজ্ঞানী থাকছে এই ট্রায়াল পরিচালনায়।

গ্লোবের বঙ্গভ্যাক্স সংশ্লিষ্টদের মাঝে আশার আলো ছড়াচ্ছে। এদিকে ভারত থেকে আনা সিরামের টিকা শুরুতেই পাবেন স্বেচ্ছাসেবকরা। কমপক্ষে এক সপ্তাহ দেখা হবে তাদের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় কি না। কোনো সমস্যা না হলে, সবকিছু ঠিক থাকলে তবেই পরিকল্পনা অনুসারে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হবে। এমন তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

আগামী ২১ থেকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে ভারত থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত ৫০ লাখ ডোজ টিকা দেশে আসার কথা। ঠিক সময়ে টিকা এলে প্রথমেই ৫০ থেকে ১০০ জন স্বেচ্ছাসেবক পাবেন। স্বেচ্ছাসেবক বাছাই করা হবে একটি বড় হাসপাতাল ও একটি উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্য থেকে। তাদের শরীরে টিকা দেওয়ার পর কোনো সমস্যা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা না গেলেই টিকাদান কর্মসূচি শুরু করা হবে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম যুগান্তরকে বলেন, মূলত প্রথমে স্বেচ্ছাসেবকদের শরীরে টিকা দেওয়া হবে মানুষের মনে সাহস সঞ্চার করতে। সেখানে কারও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে সেটিও গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নেওয়া হবে। তবে তেমন কোনো সমস্যা হবে না বলেই আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

সব কাজ শেষে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই দেশে টিকাদান কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি।

করোনা মহামারি থেকে মুক্তি পেতে পৃথিবীর অনেক দেশের মতো বাংলাদেশের গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডও টিকা উৎপাদনে এগিয়ে এসেছে। অঙ্গপ্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেকে শুরু হয় টিকা উন্নয়নের কাজ। এই বিষয়টি ঘোষণা করার পর থেকেই সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে এটি নিয়ে নানা সমালোচনা শুরু হয়।

এমনকি ট্রায়াল পরিচালনার ক্ষেত্রে আইসিডিডিআর,বির সঙ্গে চুক্তি হলেও সেটি বাতিল হয়। সম্প্রতি বিদেশি বিভিন্ন খাত থেকে টিকা পাওয়া নিয়ে সময়ক্ষেপণ ও জটিলতা দেখা দিলে গ্লোবের প্রতি নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষগুলোর দৃষ্টিভঙ্গিও পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। শনিবার গাজীপুরে একটি হাসপাতাল পরিদর্শনের সময় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল মান্নান গণমাধ্যমে এই টিকার প্রশংসা করে এটি বিদেশে রপ্তানির সম্ভাবনার কথা বলেন।

এমন পরিস্থিতিতে রোববার গ্লোব বায়োটেক উদ্ভাবিত করোনার টিকা ‘বঙ্গভ্যাক্সের’ পরীক্ষামূলক প্রয়োগের নীতিগত অনুমোদনে নথিপত্র জমা দিয়েছেন গবেষকরা। রোববার দুপুরে বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলে (বিএমআরসি) এসব নথিপত্র বা রিসার্চ প্রটোকল জমা দেওয়া হয়।

এর আগে গত ৬ জানুয়ারি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য প্রয়োজনীয় টিকা উৎপাদনের অনুমোদন পায় গ্লোব বায়োটেক। একইসময় বঙ্গভ্যাক্সের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের নীতিগত অনুমতি চেয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলে নথিপত্র জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নেন গবেষকরা। সিআরও লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনা করবে।

রিসার্চ প্রটোকল জমা দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন ট্রায়াল পরিচালনাকারী প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মামুন আল মাহতাব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক সিতেশ চন্দ্র বাছার, রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন। এ ছাড়া গ্লোব বায়োটেকের কয়েকজন গবেষক ও কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরগুলো সম্প্রতি এ বিষয়ে (বঙ্গভ্যাক্স) বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করছে। তাছাড়া গ্লোবের হিউম্যান ট্রায়ালে যুক্ত রয়েছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিকিৎসাবিজ্ঞানী ড. ফজলে আকবর।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই জাপানি চিকিৎসাবিজ্ঞানী ইতোমধ্যে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের প্রতিষেধক ‘ন্যাসভ্যাক’সহ একাধিক ওষুধ ও চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবন করে বিশ্বে খ্যাতি কুড়িয়েছেন।

এই ট্রায়ালে তিনি কো-ইনভেস্টিগেটর হিসাবে যুক্ত রয়েছেন। যার এ ধরনের একাধিক ট্রায়াল পরিচালনার পূর্বাভিজ্ঞতা রয়েছে। এমনকি ট্রায়াল-পূর্ববর্তী সিআরও প্রস্তুতির ক্ষেত্রে তিনি প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছেন। তাই এই সিআরওটি একটি আন্তর্জাতিক মানের সিআরও হিসাবে স্থান পেতে যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর অধ্যাপক মামুন আল মাহতাব যুগান্তরকে বলেন, ‘বঙ্গভ্যাক্স একটি এমআরএনএ প্রযুক্তির উন্নত মানের ভ্যাক্সিন। তবে এটি কতটা কার্যকর সেটি প্রমাণের জন্য ট্রায়াল পরিচালনা করা দরকার।

সে জন্যই বিএমআরসিতে গবেষণা প্রটোকল জমা দিয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। অনুমোদন পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যেই আমরা ট্রায়াল শুরু করতে পারব।

তিনি বলেন, এই ট্রায়ালে ড. ফজলে আকবরের মতো বিশ্ববিখ্যাত গবেষক রয়েছেন। তা ছাড়া সিআরও বাংলাদেশ দেশে দ্বিতীয় নিবন্ধিত সিআরও প্রতিষ্ঠান। গ্লোব বায়োটেক উদ্ভাবিত টিকাটি একেবারে নতুন প্রযুক্তির অর্থাৎ এমআরএনএ প্রযুক্তির টিকা। এটি একটি পটেনশিয়াল ভ্যাকিসন ক্যান্ডিডেট, যেটির সঙ্গে ফাইজারের টিকার যথেষ্ট মিল রয়েছে।

তিনি বলেন, প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর বা প্রধান গবেষক হিসাবে তিনি ভ্যাকসিন প্রকল্পের শুরু থেকে এ পর্যন্ত সব ডেটা ও কর্মপদ্ধতি পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি মনে করেন, এই ভ্যাকসিনটি সব ধরনের প্রটোকল মেনেই করা হয়েছে, যা ট্রায়ালে মানবদেহে কার্যকর বলে প্রতীমান হবে।

তা ছাড়া প্রথম ও দ্বিতীয় ট্রায়ালের যে পরিকল্পনা অনুমোদনের জন্য দেওয়া হয়েছে, সেটিও ফাইজার বা মডার্নার চেয়ে উন্নত। কারণ, ওই দুটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে এটিতে বেশি মানুষের ওপর ট্রায়াল পরিচালনা করা হবে। এমনকি প্রথম ট্রায়াল শেষ করেই দ্বিতীয় ট্রায়াল শুরু হবে।

অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো যদিও পাশাপাশি দুটি ট্রায়াল পরিচালনা করেছে। মানবদেহে বঙ্গভ্যাক্সের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের এই গবেষণায় কাজ করবে ৫৭ জনের একটি দল।

এদিকে গ্লোব বায়োটেকের পক্ষ থেকে বিএমআরসিতে ২০টি ফাইলে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রোটোকল জমা দেওয়া হয়। আবেদনে একসঙ্গে প্রথম ও দ্বিতীয় ট্রায়ালের অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. হারুনুর রশিদসহ গ্লোব বায়োটেকের কর্মকর্তারা বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিএমআরসিতে আসেন। পুরো প্রটোকলসহ প্রায় ১০ হাজার পৃষ্ঠার আবেদন জমা দেন তারা। আর বিএমআরসির পক্ষে একজন সহকারী পরিচালক তাদের আবেদন গ্রহণ করেন।

এর আগে গত ২৮ ডিসেম্বর গ্লোব বায়োটেককে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য করোনাভাইরাসের টিকা উৎপাদনের অনুমতি দেওয়া হয়। শুরুর দিকে গ্লোবের এই টিকার নাম ব্যানকোভিড থাকলেও সেটি পরিবর্তন করে বঙ্গভ্যাক্স নাম রাখা হয়।

করোনা প্রতিরোধে বিশ্বে বর্তমানে যেসব টিকা তৈরির কাজ করা হচ্ছে সেগুলো পর্যবেক্ষণ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকায় ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পর্যায়ে রয়েছে ৪২টি টিকা আর প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল অর্থাৎ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের আগের অবস্থায় রয়েছে ১৫৬টি টিকা।

এই তালিকায় বাংলাদেশের গ্লোব বায়োটেকের নাম রয়েছে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য আইসিডিডিআর,বির সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) থাকলেও গত ১ ডিসেম্ব^র আইসিডিডিআর,বির অনাগ্রহের অভিযোগে চুক্তি বাতিল করে গ্লোব। এর আগে গত বছরের ২ জুলাই প্রতিষ্ঠানটি দেশে প্রথম ভ্যাকসিন আবিষ্কারের ঘোষণা দেয়।

সেদিন তারা জানায়, গত ৮ মার্চ তারা এই টিকা আবিষ্কারের কাজ শুরু করেন। ৫ অক্টোবর গ্লোব জানায়, তারা সফলভাবে প্রাণিদেহে তাদের ট্রায়াল সম্পন্ন করেছেন। এখন হিউম্যান ট্রায়ালে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত।

সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মাসের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দেওয়া শুরু হবে ভারত থেকে আনা টিকা। এ ক্ষেত্রে সবার আগে টিকা পাবেন সরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রে সরাসরি করোনা রোগীদের সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট, টেকনিশিয়ান, ধাত্রী, ফিজিওথেরাপিস্ট, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী ও অ্যাম্বুলেন্স চালক। এদের সংখ্যা তিন লাখ ৩২ হাজার ২৭ জন।

এরপর পাবেন বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রে সরাসরি করোনা রোগীদের সেবায় কাজ করা চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট, টেকনিশিয়ান, ধাত্রী, ফিজিওথেরাপিস্ট, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী, অ্যাম্বুলেন্স চালকদের মধ্য থেকে ছয় লাখ।

একই ধাপে এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করা অন্যান্য বিভাগের আরও এক লাখ ২০ হাজার চিকিৎসক-নার্স ও অন্যান্য; দুই লাখ ১০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা; পাঁচ লাখ ৪৬ হাজার ৬১৯ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য (যারা সরাসরি করোনা সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব পালন করেছেন); সশস্ত্র বাহিনীর তিন লাখ ৬০ হাজার সদস্য পাবেন টিকা। বিচার বিভাগ, মন্ত্রণালয়, সচিবালয়, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের পাঁচ হাজার শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাও টিকা পাবেন প্রথম ধাপেই।

সাংবাদিকদের মধ্যে যারা সরাসরি করোনার খবরাখবর সংগ্রহে কাজ করেছেন এমন ৫০ হাজার জন টিকা পাবেন প্রথম ধাপেই। একইসঙ্গে টিকা পাবেন সংসদ সদস্য, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এক লাখ ৭৮ হাজার ২৯৮ জন। ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার এক লাখ ৫০ হাজার জন।

ষাটোর্ধ্ব বয়সের ধর্মীয় নেতা পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার, দাফন ও সৎকার কর্মী ৭৫ হাজার এ ধাপে পাবেন। সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অগ্নিনির্বাপণ কর্মী চার লাখ, বন্দরের কর্মকর্তা ও কর্মী এক লাখ ৫০ হাজার এ তালিকায় আছেন।

বিদেশগামী অদক্ষ শ্রমিক এক লাখ ২০ হাজার, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী চার লাখ, ব্যাংক কর্মী এক লাখ ৯৭ হাজার ৬২১ জনও প্রথম ধাপে পাবেন। যক্ষ্মা, এইচআইভি ও ক্যানসার রোগী ছয় লাখ ২৫ হাজার, অন্যান্য জরুরি সেবায় জড়িত ৭৭ হাজার ৮০৪ জন। প্রথম ধাপের এই সংখ্যার মধ্য থেকেই কিছুটা সমন্বয় করে ষাটোর্ধ্ব কিছুসংখ্যক মানুষকেও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *