মিয়ানমারের পরিস্থিতি আমাদের পর্যবেক্ষণ করতে হবে: মহিউদ্দিন আহমেদ

জাতীয় লীড

স্বদেশবাণী ডেস্ক: মিয়ানমারের সামরিক সরকার প্রসঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রদূত মহিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থান নতুন কিছু নয়। ১৯৬২ সাল থেকে দেশটির সেনাবাহিনী এমন আচরণ করে আসছে।

২০১১ সালে মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র বসে ক্ষমতা ভাগাভাগির বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছে। কিন্তু এতে জনমতের প্রতিফলন ঘটেনি।

মঙ্গলবার যুগান্তরকে মহিউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটির সংবিধান তৈরি করেছে। পার্লামেন্টেও তাদের প্রাধান্য রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে অং সান সু চিকে ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। গণতান্ত্রিক অবস্থা সেখানে কখনোই ছিল না। গণতন্ত্রকে সব সময় খর্ব করা হয়েছে। তিনি বলেন, সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখল রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রভাব ফেলবে। সেটা পুরোপুরি বাধাপ্রাপ্ত না হলেও ধাক্কা তো খেল।

দেশটির সিকিউরিটি কাউন্সিলের সভায় ইস্যুটি গুরুত্ব পাবে বলে মনে হয় না। তাই রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমাদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। আমাদের পক্ষে অনেকে কথা বললেও তারা সেই অর্থে চাপ দেয়নি। তিনি বলেন, কোনো কিছুতেই তারা আমাদের ওপর নির্ভরশীল নয়। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আমাদের পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে হবে। মনে রাখতে হবে, চীন মিয়ানমারের পক্ষে।

সরকার টু সরকার পর্যায়ে কথা বলতে হবে : মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ড. তারেক শামসুর রেহমান বলেছেন, প্রকৃতপক্ষে সেনাবাহিনীই মিয়ানমারের ক্ষমতায় ছিল।

এতদিন সু চিকে ব্যবহার করে তারা নিজেদের স্বার্থ আদায় করেছে। এবার সরাসরি ক্ষমতায় বসেছে তারা। তাই আগের সময় আর বর্তমান সময়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। দুই পক্ষের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে বলেই সেনাবাহিনী সরাসরি ক্ষমতা নিয়েছে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন বিষয়ে ড. তারেক শামসুর রেহমান বলেন, আমি মনে করি, রোহিঙ্গা বিষয়ে মিয়ানমারের নতুন সরকারের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হবে না। বরং রোহিঙ্গাদের ফেরার গতি আরও ধীর হতে পারে।

কারণ, নতুন সরকার অবস্থা বুঝতে আরও সময় নেবে। ফলে ৪২ হাজার রোহিঙ্গার ফিরে যাওয়া আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে। তিনি আরও বলেন, এ মুহূর্তে সরকারের কিছু করণীয় আছে।

প্রথমত, মিয়ানমারে নিযুক্ত আমাদের রাষ্ট্রদূতকে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করতে হবে। বিষয়টি সম্পর্কে তাদের অবস্থান দ্রুত জানতে হবে। কারণ রোহিঙ্গা বিষয়ে নতুন সরকারের কোনো বক্তব্য এখনো পাওয়া যায়নি। ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে জানা যেতে পারে। একটা ব্যাখ্যা চাওয়া যেতে পারে।

দ্বিতীয়ত, আমাদের আন্তর্জাতিকভাবে চালানো ক্যাম্পেইন আরও বাড়াতে হবে। বিশেষ করে বাইরের প্রশাসনের সঙ্গেও সম্পর্ক বাড়ানো এ মুহূর্তে খুব জরুরি। আমাদের রাষ্ট্রদূত বিষয়টি আরও জোরালোভাবে তুলে ধরতে পারেন।

ড. তারেক শামসুর রেহমান আরও বলেন, মিয়ানমারে যারাই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। সরকার টু সরকার কথা বলা হয়। সেখানে ক্ষমতায় কে আছে, সেটা আমাদের জানার বিষয় নয়। গণতান্ত্রিক সরকারও তো আমাদের সাহায্য করেনি।

ছাড় দেওয়ার অবস্থাও তৈরি হতে পারে: রোহিঙ্গা ইস্যুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেছেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী তাদের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে। যদিও এটি সেখানে নতুন কোনো ঘটনা নয়। ২০১১ সাল থেকে দেশটি সীমিত আকারে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দিকে যাচ্ছিল।

গত বছর ৮ নভেম্বরের নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিতে না পারা এবং ফলাফলে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটায় সামরিক বাহিনী সংকটে পড়ে। জনগণ মূলত তাদের প্রত্যাখ্যান করে। নির্বাচনে সু চির দল এনএলডি ৮০ শতাংশ ভোট পেয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করেছে। এটা মিয়ানমারের জনগণের কাছে বিস্ময়কর মনে হয়েছে। যদিও কয়েকদিন ধরে ক্ষমতার লড়াই চলছিল।

মঙ্গলবার যুগান্তরকে অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, তবে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বড় ধরনের ঝুঁকি নিয়েছে। কারণ, দেশটি গণতন্ত্রের পথে হাঁটছিল। মুক্তবাজার অর্থনীতির মাধ্যমে অর্থনীতিকে চাঙা করতে চাইছিল।

সেদিক থেকে এখন দেখার বিষয় সামরিক সরকার তাদের ক্ষমতা কতদিন ধরে রাখতে পারে। যদিও তারা বলছে, এক বছরের জন্য থাকবে। ক্ষমতা নেওয়ার বিষয়ে তারা নির্বাচনের কারচুপির কথা বলছে। সেটি আসলে হাস্যকর এবং সবাই বুঝতে পারছে কেন ঘটনাটি ঘটেছে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে চীন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় আলোচনা চলছিল। তখন সু চির সরকারও রোহিঙ্গাদের পক্ষে ছিল না।

সে হিসাবে সরকারের পরিবর্তন ঘটলেও বড় কোনো পরিবর্তন ঘটবে না। মনে হয়, রোহিঙ্গা ইস্যুতে একটি সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। কারণ, এ অভ্যুত্থানের সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যুটিও পশ্চিমা বিশ্ব বারবার টেনে আনছে। এতে মিয়ানমারের ওপর বড় ধরনের রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি হবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সামরিক সরকারের একটা ছাড় দেওয়ার অবস্থাও তৈরি হতে পারে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *