বিদ্যুৎ বিল শুনে স্ট্রোক করার উপক্রম গ্রাহকের

জাতীয়

স্বদেশবাণী ডেস্ক:  নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বসুরহাট বিদ্যুৎ সরবরাহের আওতায় প্রিপেইড মিটার গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টে ভুতুড়ে বিলের অভিযোগ উঠেছে।

মিটারে রিচার্জ কার্ড না ঢুকায় অফিসে গিয়ে জানতে পারেন তার আগের বিদ্যুৎ বিল দেড় লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। এই কথা শুনে  আবদুল মোতালেব নামে একজন গ্রাহকের বাবার স্ট্রোক করার উপক্রম হয়েছে।

ভুক্তভোগী গ্রাহকদের অভিযোগে জানা গেছে, পিডিবির ২০১৮ সালে ডিজিটাল মিটার পরিবর্তনের পর প্রিপেইড মিটার বসানোর সময় মিটারে গ্রাহকদের কোনো বকেয়া বিল প্রদর্শন করা হয়নি। অথচ প্রিপেইড মিটার বসানোর ৩ বছর পর সম্প্রতি বিভিন্ন গ্রাহকের মিটারে রিচার্জ করতে গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক এসব গ্রাহকদের ২৬ হাজার টাকা থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত বকেয়া বিল রয়েছে বলে সফটওয়্যারে দেখায়। গ্রাহকদের কোনো ধরনের বকেয়া বিল না থাকলেও ভুতুড়ে বিলের কারণে মিটারে কার্ড ঢুকছে না। ফলে বিদ্যুৎ ছাড়া বিড়ম্বনায় দিন পার করছেন ভুক্তভোগীরা।

বসুরহাট পৌর মার্কেটের ব্যবসায়ী আবু সুফিয়ান অভিযোগ করে বলেন, তার আগের মিটারের বিল পরিশোধ থাকলেও প্রিপেইড মিটারে টাকা ঢুকছে না। টাকা ঢুকাতে ব্যাংকে গেলে জানানো হয় তার মিটার হিসাবে ২৬ হাজার টাকা বকেয়া রয়েছে। পরবর্তীতে এ ভুক্তভোগী গ্রাহক বসুরহাট বিদ্যুৎ সরবরাহ অফিসে গেলে দেখা যায় তার বৈদ্যুতিক মিটারের হিসাবে সরকারের ভ্যাট বাবদ ৪৭ টাকা দেনা আছে। ওই টাকা পরিশোধ করার পর তার মিটারটি পিডিবি কর্তৃপক্ষ সচল করে দেয়।

উপজেলা গেটের শাহীন কম্পিউটারের মালিক শরফুদ্দিন শাহীন বলেন, তার নামেও ২৬ হাজার টাকা বিলের তথ্য জানিয়েছে কৃষি ব্যাংক বসুরহাট শাখা।

সোনালী ব্যাংক বসুরহাট শাখার ব্যবস্থাপক নূর মোহাম্মদ সুমন বলেন, কয়েকদিন আগে মিটারে তিন হাজার টাকার কার্ড রিচার্জের পরও হঠাৎ ব্যাংকের বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ হয়ে যায়। অফিস থেকে জানানো হয়, ব্যাংকের আগের মিটারে ৩২ হাজার টাকা বকেয়া দেখাচ্ছে। পরে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের কাগজ দেখানোর পর বসুরহাট বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের কর্মকর্তা তাদের ভুল স্বীকার করে সোনালী ব্যাংকের লাইনটি পুনরায় সচল করে দেয়।

সোমবার বেলা ১১টায় বসুরহাট বিদ্যুৎ সরবরাহ (পিডিবি) অফিসে গিয়ে অসংখ্য গ্রাহককে একই অভিযোগ নিয়ে ভিড় করতে দেখা গেছে। এতে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের মধ্যে আতঙ্কও বিরাজ করছে।

আবদুল মোতালেব নামে একজন বিদ্যুৎ গ্রাহক জানান, তার দেড় লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। তার বাবা স্ট্রোকের রোগী। ঘরে তেমন কেউ থাকে না। তার পরও দেড় লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া শুনে তার বাবা আবারও স্ট্রোক করার উপক্রম হয়েছে।

এসব ভোগান্তিতে পড়ে বসুরহাট বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রে বিভিন্ন অভিযোগ জানাতে গেলে অফিসের কেউ কথাও বলতে চায় না বা শুনতেও চায় না বলে ভুক্তভোগী বিদ্যুৎ গ্রাহকরা অভিযোগ করেন।

অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করে বসুরহাট বিদ্যুৎ সরবরাহ (পিডিবি) অফিসের আবাসিক প্রকৌশলী মো. আবু সোলায়মান বলেন, অনেক গ্রাহকের হিসাবে হঠাৎ ২৬ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত বকেয়া দেখাচ্ছে। এতে করে সফটওয়্যার সিস্টেম থেকে হঠাৎ সব লাইন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গ্রাহকরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

তবে তিনি সফটওয়্যার সিস্টেমের কোনো ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য মোবাইল নাম্বার বা অন্য কোনো মাধ্যমের বিষয়ে জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জিয়াউল হক মীর বলেন, গ্রাহকদের এ সমস্যায় বসুরহাট বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের দায়িত্ব এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।

প্রসঙ্গত, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) নোয়াখালীর বসুরহাট বিদ্যুৎ সরবরাহ অফিসের অধীনে ২০ হাজার ৪৫০ জন গ্রাহক রয়েছেন। এর মধ্যে ১৮ হাজারের অধিক প্রিপেইড মিটারের গ্রাহক রয়েছেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *