টাকা পাচারকারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে

জাতীয় লীড

স্বদেশবাণী ডেস্ক:  দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, অর্থ পাচারকারীদের শুধু তালিকা প্রকাশ করলেই হবে না। তদন্ত করে প্রমাণ করতে হবে, আইনের আওতায় এনে নিশ্চিত করতে হবে তাদের শাস্তি। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিচয় যেন প্রাধান্য না পায়, সেদিকেও নজর রাখতে হবে।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দেশ থেকে টাকা পাচারকারীদের মধ্যে ৪৩ জনের একটি তালিকা রোববার হাইকোর্টে উপস্থাপন করেছে। এর পরপরই অর্থনীতিবিদরা যুগান্তরের কাছে এ বিষয়ে সতর্ক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তারা বলেন, এখানেও তালিকায় নাম গোপন করা হয়েছে। অনেকের নাম আসেনি। কেন আসেনি, তা দেখা দরকার।

আইনি প্রক্রিয়ায় টাকা ফেরানো কঠিন: মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আদালতে টাকা পাচারকারীদের তালিকা উপস্থাপনের মাধ্যমে দুদক আইনি প্রক্রিয়ায় চলে গেল। এখন দুদককে নিজস্ব তদন্ত প্রতিবেদন দিতে হবে। যেসব দেশে টাকা পাচার করা হয়েছে, সেসব দেশেও মামলা করে টাকা পাচারের বিষয়টি প্রমাণ করতে হবে। তখন ওই দেশের আদালত থেকে এসব অর্থ বাংলাদেশের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে। এটি হলেই কেবল টাকা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এর আগে নয়। আইনি প্রক্রিয়ায় পাচার করা টাকা ফেরানো কঠিন। তিনি রোববার যুগান্তরের কাছে এসব বিষয়ে কথা বলেন।

মির্জ্জা আজিজ বলেন, দেশ থেকে পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে মোটেই আশাবাদী নই। কারণ প্রক্রিয়াটি বেশ দীর্ঘ। এত সময় এর পেছনে সরকার দেয় না। আর যারা টাকা পাচার করে, তারাও নানাভাবে শক্তিশালী। তাদের পক্ষে সরকারি যন্ত্র থাকে। তখন প্রক্রিয়াগুলো যথাযথভাবে অগ্রসর হয় না। একটি পর্যায়ে গিয়ে থেমে থাকে। এ অবস্থা থেকে বের হতে হবে। দেশের স্বার্থেই টাকা পাচারকারীদের শনাক্ত করতে হবে এবং তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। দেশ থেকে এভাবে টাকা চলে গেলে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত হবে। বিনিয়োগের গতি মন্থর হয়ে যাচ্ছে। টাকা বিনিয়োগের সুযোগ বাড়াতে হবে। তাহলে পাচার কমবে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দূর করতে হবে। আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। পানামা পেপারস ও পেরাডাইস পেপারস থেকে তালিকা নিয়ে আদালতে জমা দেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দুদক একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন সহায়তা নিয়ে এদেরই নিজস্ব তদন্ত থাকা উচিত। প্রতিষ্ঠান হিসাবে তাদের কাছে জাতির সেটাই প্রত্যাশা।

অর্থ পাচারকারীদের শনাক্তে সরকারের সদিচ্ছা জরুরি: সালেহউদ্দিন আহমেদ

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এই তালিকাটি অনেক আগেই প্রকাশিত হয়েছে। দুদক সেই তালিকা ধরেই কাজ করছে। এখন দেশ থেকে টাকা পাচারকারীদের ব্যাপারে ব্যাপকভিত্তিক তদন্ত হওয়া উচিত। সরকার ইচ্ছা করলে আন্তর্জাতিকভাবেই তদন্ত করতে পারে। এ ব্যাপারে সহযোগিতাও পাওয়া যাবে। কারণ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে এগমন্ট গ্রুপ, ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্স, এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানি লন্ডারিং-এসব প্রতিষ্ঠান কাজ করে। বাংলাদেশ এগুলোর সদস্য হয়েছে। এছাড়াও কেন্দ্রীয় ব্যাংকও এ ব্যাপারে কাজ করে। ফলে বিষয়গুলো নিয়ে এখন তদন্ত করা সহজ হবে। এখন দরকার সরকারের সদিচ্ছা। সরকার চাইলে আইনের আওতায় টাকা পাচারকারীদের শনাক্ত করা সম্ভব। পাচার করা টাকা ফেরত আনা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে পাচারকারীদের শনাক্ত করতে পারলে সহজেই আইনের আওতায় আনা সহজ হবে। রোববার যুগান্তরকে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণায় দেশ থেকে টাকা পাচারের তথ্য বেরিয়ে আসছে। এটি এখন অস্বীকার করার উপায় নেই। দেশের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধী সংস্থাগুলো এখনো কেন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের তালিকা নিয়ে কাজ করবে। তাদেরও নিজস্ব তদন্তের ভিত্তিতে তালিকা থাকা দরকার। দরকার শুধু রাজনৈতিক অঙ্গীকার। আমার মনে হয়, টাকা পাচারকারীদের ব্যাপারে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হওয়া দরকার।

তালিকায় অনেক নাম গোপন করা হয়েছে: মইনুল ইসলাম

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম বলেছেন, টাকা পাচারকারীদের তালিকা আরও আগেই প্রকাশ করা উচিত ছিল। এতদিন এটা কেন প্রকাশ করা হয়নি জানি না। পুঁজি পাচার একটা গুরুত্বপূর্ণ অপরাধ। অথচ এ ব্যাপারে সরকার উদাসীন।

রোববার তিনি যুগান্তরের কাছে এসব কথা বলেন। ড. মইনুল জানান অর্থমন্ত্রী সংসদে বলেছেন, তিনি জানেন না কারা টাকা পাচার করে। তিনি বলেন, অর্থ পাচারকারীদের তালিকা অর্থমন্ত্রী করবেন কেন? এটি করবেন তার কর্মকর্তারা। তিনি তদন্ত টিম পাঠিয়ে দেবেন। তারা তদন্ত করে অর্থমন্ত্রীকে জানাবেন।

ড. মইনুল ইসলাম আরও বলেন, টাকা পাচারকারীদের তালিকা নিয়ে এখন সরকার কী করে সেটা নিয়ে সংশয় রয়েছে। অর্থমন্ত্রী বিরোধী দলের কাছে টাকা পাচারকারীদের তালিকা চেয়েছেন। আবার দুদক চেয়ারম্যান বলেছেন, টাকা পাচারের বিষয়টি ওনাদের আওতায় পড়ে না। তারা দেখেন ঘুস, দুর্নীতি ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ আছে কিনা সেটি।

তিনি আরও বলেন, তারপরও দুদক একটি তালিকা আদালতে জমা দিল। এটি দুদকের তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য নয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্যারাডাইস পেপারস ও পানামা পেপারস থেকে নেওয়া। এখানেও তালিকায় নাম গোপন করা হয়েছে। অনেকের নাম আসেনি। কেন আসেনি সে ব্যাখ্যা নেই। এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা থাকার দরকার ছিল।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *