বঙ্গভবনের দিকে সবার দৃষ্টি

জাতীয় লীড

স্বদেশবাণী ডেস্ক: রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ আজ সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে। প্রথমদিন এই সংলাপে অংশ নিতে বঙ্গভবনে যাচ্ছে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। বুধবার অংশ নেবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ। পর্যায়ক্রমে নিবন্ধিত সব দলই বঙ্গভবনে সংলাপে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ পাবে। মূলত নতুন নির্বাচন কমিশন (ইস) গঠন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

এ প্রসঙ্গে রোববার রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীনের সঙ্গে যুগান্তরের কথা হয়। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল হিসাবে প্রথমে জাতীয় পার্টিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সংলাপের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এরপর একদিন বিরতি দিয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। পর্যায়ক্রমে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে রাষ্ট্রপতির সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হবে। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা কোভিড-১৯ পরীক্ষা করে নেগেটিভ ফলের ভিত্তিতে সংলাপে অংশ নিতে পারবেন।

জানা গেছে, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদেরের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বঙ্গভবনে যাবেন। প্রথমদিন তারা বিকাল ৪টায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেবেন। প্রতিনিধি দলে আছেন-দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা এমপি।

সূত্র জানায়, রাষ্ট্রপতির কাছে জাতীয় পার্টি ইসি পুনর্গঠনে যেসব প্রস্তাব তুলে ধরবে তার একটি খসড়া দলটি ঠিক করেছে। এর আগে ২০১৬ সালের ২০ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে জাতীয় পার্টি পাঁচ দফা প্রস্তাব দিয়েছিল। এবারও সংলাপে ইসি পুনর্গঠনে গত সংলাপে দেওয়া প্রস্তাবগুলোই প্রাধান্য পাবে। যার মধ্যে প্রধান দাবি থাকবে-ইসি পুনর্গঠনে সংবিধানের নির্দেশনা মেনে আইন প্রণয়ন। দলটির শীর্ষ নেতাদের মতে, আইন না থাকায় প্রতিবারই ইসি গঠন নিয়ে সংকটে পড়তে হয়। মনঃপূত না হলে রাজনৈতিক দলগুলো ভিন্ন সুরে কথা বলে। এজন্য একটি স্থায়ী সমাধানের প্রয়োজন। আর এর সমাধান সংবিধানেই দেওয়া আছে। এখন দরকার সেই নির্দেশনা মোতাবেক আইন প্রণয়ন করা। যা নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে স্থায়ী সমাধান দেবে।

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে জাসদ নেতাদের সংলাপ হবে। এতে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপির নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেবে। এতে জাসদের পক্ষ থেকেও নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হবে। আর এমন একটি নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি থাকবে, যাতে তারা অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু এবং প্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে সক্ষম হয়।

নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে এবার তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রথমবার ২০১১ সালের ২২ ডিসেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিল্লুর রহমান বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে ডাকেন। দ্বিতীয়বার ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সংলাপ শুরু হয়। চলে ২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। বঙ্গভবনে পর্যায়ক্রমে মোট ৩১টি দল এই সংলাপে অংশ নেয়।

সংশ্লিষ্টদের মতে, নির্বাচন কমিশন নিয়োগে আইন প্রণয়ন না হওয়ায় রাষ্ট্রপতি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সার্চ কমিটি গঠন করে গত দুই মেয়াদে ইসি গঠন করে আসছেন। আগের দুবার সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে সার্চ কমিটি গঠন করেন রাষ্ট্রপতি। দুবারই সার্চ কমিটির প্রধান ছিলেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। সার্চ কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালন করেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব।

ইসি গঠনে এবারও একই পথে হাঁটছেন রাষ্ট্রপতি। সংলাপের ফলাফল নিয়ে নানা মত থাকলেও রাজনৈতিক দল, সামাজিক-পেশাজীবী সংগঠন এবং সুশীল সমাজের দৃষ্টি এখন বঙ্গভবনের দিকেই। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ রোববার যুগান্তরকে বলেন, সংলাপ না ডেকেও নির্বাচন কমিশন গঠনের সাংবিধানিক এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির রয়েছে। তবে আগের দুটি কমিশন গঠনের সময় সংলাপ হয়েছে, যার ধারাবাহিকতায় এবারও আয়োজন করা হচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক দিক।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার এ প্রসঙ্গে রোববার যুগান্তরকে বলেন, সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী ইসি গঠনে আইন প্রণয়নই সবার দাবি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আইনটি এখনো প্রণয়ন করা হচ্ছে না। সংবিধান উপেক্ষা করে ইসি গঠনে অতীতের ধারাবাহিকতায় সংলাপের পথে হাঁটছেন রাষ্ট্রপতি। তিনি আরও বলেন, দেশের মানুষ চায় দক্ষ, গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন। আশা করি এই সংলাপের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতি দেশবাসীর প্রত্যাশা পূরণে উদ্যোগী হবেন।

আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে। পরদিন নতুন ইসি দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। এর আগে জানুয়ারি মাসের ২০ তারিখের মধ্যে নতুন সার্চ কমিটি গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি। সার্চ কমিটি রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে নতুন কমিশন গঠনে সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রস্তুত করবেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) জন্য দুজন, চারজন নির্বাচন কমিশনারের (ইসি) জন্য আটজনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে তারা প্রস্তাব করবেন। পরে সার্চ কমিটির প্রস্তাবিত ১০ জনের তালিকা থেকে একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং চারজন নির্বাচন কমিশনার চূড়ান্ত করবেন রাষ্ট্রপতি।

এদিকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপে আমন্ত্রণ পেয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের আরেক শরিক দল বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ (মোজাফফর)। আগামী ২৬ ডিসেম্বর বিকাল চারটায় বঙ্গভবনে তাদের ডাকা হয়েছে। দলটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন যুগান্তরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *