নওগাঁর মান্দায় মুখ দিয়ে রঙ-তুলির আঁচড়ে ছবি আঁকেন ইব্রাহিম

চারণ সংবাদ রাজশাহী লীড

নওগাঁ প্রতিনিধি: এক সময় দুই হাত-পা সচল ছিলো ইব্রাহিমের। পড়াশোনা করেছেন এইচএসসি পর্যন্ত। চাকরি করতেন দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুতের লাইনম্যান হিসেবে। কিন্তু তার জীবনটা এলোমেলো হয়ে যায় ২০০৫ সালে।

লাইনম্যানের কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় বিদ্যুতের খুঁটি থেকে পড়ে হারিয়েছেন দুই হাত, দুটি পা থাকলেও তা অচল।

তবুও দমে যাননি এমদাদুল মল্লিক ইব্রাহিম। হাত-পা না থাকলেও নিজের প্রতিভাবে বিকশিত করে চলেছেন তিনি। মুখ দিয়েই হুইল চেয়ারে বসে রঙ-তুলির আঁচড়ে ছবি আঁকছেন তিনি। হুইল চেয়ারের সাথে বিশেষ উপায়ে লাগানো ক্যানভাসে গরু, গাছ, পাখি, মানুষসহ বিভিন্ন ছবি আঁকতে পারেন নওগাঁর মান্দা উপজেলার এমদাদুল মল্লিক ইব্রাহিম।

মুখ দিয়ে ছবি আঁকা প্রসঙ্গে ইব্রাহিম বলেন, দুর্ঘটনার পর স্থানীয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হয়ে সাভারের সিআরপিতে চিকিৎসা নিয়েছেন দীর্ঘ আট বছর। সিআরপিতে থাকা অবস্থায় সবার কাছে শুনেছেন লাভলী নামে একজন মুখ দিয়ে ছবি আঁকতেন। লাভলীর সঙ্গে তার কখনো দেখা হয়নি। লাভলীর গল্প শুনেই অনুপ্রেরণা।

তিনি বলেন, প্রথম দিকে ছবি আঁকতে বসলে মাথা ঘুরতো। বমি করতাম। পরে সব ঠিক হয়ে যায়। বেশি ভালো লাগে প্রাকৃতিক দৃশ্য আঁকতে। তবে বর্তমানে দীর্ঘ সময় ছবি আঁকতে পারিনা। একটানা ছবি আঁকলে গায়ে জ্বর আসে। শরীরের সার্বিক পরিস্থিতিও খুব একটা ভালো নেই।

উপজেলার পরানপুর ইউনিয়নের চককেশব বালুবাজার নিজ গ্রামে এক বৃদ্ধা মাকে নিয়ে বসবাস করছেন মাউথ পেইন্টার এমদাদুল মল্লিক ইব্রাহিম। গত চার বছর যাবৎ তিনি তার বৃদ্ধা মায়ের অসুস্থতার কারণে নিজ বাড়ি চককেশব বালুবাজারে রয়েছেন। তিনি ভালোবাসেন গ্রাম বাংলা ও প্রকৃতির ছবি আঁকতে।

ইব্রাহিম বলেন, সিআরপিতে থাকা অবস্থায় তার আঁকা ছবি দিয়ে অনেকগুলো প্রদর্শণী হয়েছে। আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের কিছু মানুষের সাথে পরিচয় ছিলো। তাদের সাথে যোগাযোগও ছিলো নিয়মিত। তাদের মাধ্যমেই ছবিগুলো আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে বিক্রি হয়েছে। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি তার কাছ থেকে ২০টি ছবি নিয়ে এক লাখ টাকা দিয়েছিলেন।

মান্দা পরানপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইলিয়াস খান বলেন, মাউথ পেইন্টার এমদাদুল মল্লিক ইব্রাহিমকে প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড এবং তার মায়ের জন্য বিধবা ভাতা কার্ডের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। উপজেলা ভিত্তিক ছবি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা না থাকায় ইব্রাহিমের প্রতিভাকে তিনি বিকশিত করতে পারছেন না।

মান্দা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, দুই হাত নেই তবুও তিনি মুখের সাহায্যে এঁকে চলেছেন। মুখ দিয়ে ছবি আঁকা যে তার একটি বিশেষ গুণ তা তার ছবিগুলোর দিকে লক্ষ্য করলে বোঝা যায়। তবুও ইব্রাহীমের স্বপ্ন একদিন তিনি মুখ দিয়ে ছবি এঁকে পুরো বিশ্বের কাছে পরিচিতি লাভ করবেন। সূত্র: পূর্বপশ্চিমবিডি।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *