স্বদেশবাণী ডেস্ক: নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে আদমজী ইপিজেডের সামনে দ্বিতীয় দিনের মতো ফের রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা। এ সময় পুলিশ, আনসার ও ইপিজেডের নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে তাদের দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পালটা ধাওয়া হয়েছে।
এতে অন্তত ২৫ শ্রমিক আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। খবর সংগ্রহ করতে গেলে নিরাপত্তাকর্মীরা সাংবাদিকদের ওপরও চড়াও হন। এ সময় তারা একজন সাংবাদিকের মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলেন।
শনিবার সকাল থেকে বকেয়া বেতন ও বন্ধ ফ্যাক্টরি খুলে দেওয়ার দাবিতে হাজারও শ্রমিক ইপিজেডের প্রধান কার্যালয় ঘেরাও করেন। তাদের অবরোধে ব্যস্ততম নারায়ণগঞ্জ-চিটাগাং রোড-আদমজী ইপিজেড সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সড়কে আগুন দেন এবং দুটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। পরে পুলিশ জলকামান ও টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে শ্রমিকদের সরিয়ে দেয়।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, আদমজী ইপিজেডের কুনতং অ্যাপারেলস লিমিটেডের (ফ্যাশন সিটি) শ্রমিকদের ৪ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। সেই বেতনের দাবিতে তারা সকাল ৭টা থেকে ইপিজেডের সামনের রাস্তায় শান্তিপূর্ণ অবস্থান করছিলেন।
এ সময় মালিকপক্ষের কর্মকর্তারা ২০ জানুয়ারি তাদের পাওনা পরিশোধ করার আশ্বাস দেন। কিন্তু শ্রমিকরা এতে আশ্বস্ত না হয়ে অবস্থান চালিয়ে যান।
একপর্যায়ে তাদের ওপর আনসার ও ইপিজেডের নিরাপত্তাকর্মীরা লাঠিচার্জ শুরু করলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা নারায়ণগঞ্জ-আদমজী-শিমরাইল সড়ক অবরোধ করেন।
এ সময় আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে আনসার ও নিরাপত্তাকর্মীদের ধাওয়া-পালটা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। শ্রমিকরা রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে দেন এবং দুটি গাড়ি ভাঙচুর করেন।
পরে পুলিশ এসে শ্রমিকদের ওপর জলকামান দিয়ে পানি ছিটায় এবং ২১ রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। শ্রমিকরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন।
একপর্যায়ে শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন। দুপুর ২টা পর্যন্ত থেমে থেমে চলা এ সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পালটা ধাওয়ায় পারভেজ, জহির, জরিনা, মনোয়ারা, মনির, নাঈম, হাসান, মনিসহ প্রায় ২৫ শ্রমিক আহত হয়েছেন বলে জানান শ্রমিকরা।
আহতদের স্থানীয় আলিফ জেনারেল হাসপাতাল এবং নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সংঘর্ষ চলাকালে সংবাদ সংগ্রহ ও ছবি তুলতে গেলে সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন ইপিজেডের আনসার ও নিরাপত্তাকর্মীরা। এ সময় আয়শা জান্নাত নামের এক নারী সাংবাদিকের মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলেন নিরাপত্তাকর্মীরা।
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল-ক) মেহেদী ইমরান সিদ্দিকী বলেন, পুলিশ ও শিল্প পুলিশের কর্মকর্তারা মালিকপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাসের পরও তারা রাস্তা না ছাড়লে মৃদু লাঠিচার্জ করে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
শিল্প পুলিশ-৪-এর সিনিয়র এএসপি আইনুল হক বলেন, আমরা ২০ জানুয়ারি মালিকপক্ষ থেকে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন আদায় করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছি।
তারা এতে রাজি না হয়ে সড়কে আগুন দিয়ে ফের বিক্ষোভ শুরু করেন। দুটি গাড়িও ভাঙচুর করেন তারা। বাধ্য হয়ে পুলিশ জলকামান ও টিয়ার শেল ব্যবহার করে।
এ বিষয়ে কুনতং অ্যাপারেলস লিমিটেডের জিএম (এইচআর) উইং কমান্ডার (অব.) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমাদের ফ্যাক্টরির তিনটি বিভাগ রয়েছে।
সেই বিভাগগুলোর শ্রমিকদের পর্যায়ক্রমে ১৮, ১৯ ও ২০ জানুয়ারি পাওনা পরিশোধ করার আশ্বাস দিয়েছি। কিন্তু এরপরও তারা কেন আন্দোলন করছেন তা আমাদের বোধগম্য নয়।
এ বিষয়ে সংবাদকর্মীরা আদমজী ইপিজেডের জিএম আহসান কবিরের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে চাইলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে ফোন কেটে দেন। তার অফিসে সাংবাদিকদের প্রবেশ করতেও দেননি ইপিজেডের নিরাপত্তাপ্রহরীরা।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে একই দাবিতে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। ওই সময়ও আনসার ও ইপিজেডের নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে তাদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।
পরে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। শ্রমিকরা জানান, আদমজী ইপিজেডের কুনতং অ্যাপারেলস লিমিটেড গত বছরের ১০ আগস্ট হঠাৎ ২ দিনের ছুটি ঘোষণা করে বন্ধ করে দেয়।
তবে এরপরও শ্রমিকদের তিন থেকে চার হাজার টাকা করে বেতন পরিশোধ করে আসছিল মালিকপক্ষ। এ ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও গার্মেন্ট কর্তৃপক্ষ ২০ জানুয়ারি বেতন দেওয়ার ঘোষণা দেয়।
যার কারণে প্রায় এক হাজার শ্রমিক সকাল ৮টায় আদমজী ইপিজেডের প্রধান কার্যালয়ে অবস্থান নেন। এরপরই আনসার ও ইপিজেডের নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বেধে যায়।