স্বদেশবাণী ডেস্ক: রংপুরের মিঠাপুকুরে শারীরিক প্রতিবন্ধী এক যুবককে সন্তান দাবি করেছেন দুই পরিবার। এ নিয়ে মিঠাপুকুর থানায় রাতভর তুলকালাম কাণ্ড ঘটে। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী থানার সমানে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে বৈধ অভিভাবকের কাছে ওই যুবককে হস্তান্তর ঘোষণা দেয় পুলিশ। রোববার রাতে মিঠাপুকুর থানার প্রধান ফটকের সামনে এই নিয়ে তুমুল উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে থানা পুলিশ বিপাকে পড়ে।
এক পরিবারের দাবি অনুযায়ী তার নাম মো. নাহিদ (২৬), বাবা ফজলু মিয়া, মা লালমাই বেগম। গ্রামের বাড়ি উপজেলার লতিবপুর ইউনিয়নের রশিদপুর গ্রামে। অন্য পরিবারের দাবি ওই যুবকের নাম লিটন মিয়া (২২)। তার বাবার নাম মো. ওয়াহেদ আলী, মা নিলুফা বেগম। বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের উত্তর শ্রীপুর গ্রামে।
পুলিশ জানায়, মিঠাপুকুর উপজেলার রশিদপুর গ্রামের বাসিন্দা ফজলু মিয়ার অভিযোগ করেন, তার প্রতিবন্ধী ছেলে নাহিদ ৪ বছর আগে উপজেলা সদর থেকে হারিয়ে যায়। বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করে ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় সন্ধান পান তারা। সেখানে প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে ভিক্ষাবৃত্তি করছে বলে জানান ফজলু-ও লালমাই দম্পতি।
তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে রোববার ওই যুবককে উদ্ধার করে মিঠাপুকুর থানায় নিয়ে আসা হয়। এসময় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের উত্তর শ্রীপুর গ্রামের ওয়াহেদ ও নিলুফা দম্পতি থানায় এসে ওই যুবক তাদের সন্তান বলে দাবি করেন।
ফজলু-লালমাই দম্পতি বলেন, ৪ বছর আগে বাড়ি থেকে বের হয়ে মিঠাপুকুর উপজেলা সদরে গিয়ে হারিয়ে যায় নাহিদ। পরে ঢাকার আশুলিয়ায় সন্তানকে রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করতে দেখি। প্রতারক চক্র ছেলেকে নিয়ে গিয়ে ভিক্ষুকের পেশায় নামিয়েছে। তাকে দিয়ে টাকা আয় করছে। এজন্য আমাদের কাছে ফেরত দিচ্ছে না।
অন্যদিকে, ওয়াহেদ ও নিলুফা দম্পতি বলেন, সন্তান তাদেরই। তার নাম লিটন। তার নামে ২০১৭ সাল থেকে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড রয়েছে। এখন পর্যন্ত তারাই ভাতার টাকা উঠান।
এভাবে দুই পরিবারই সন্তানের স্বপক্ষে বিভিন্ন প্রমাণপত্র পুলিশের কাছে উপস্থাপন করেন। কিন্তু, কেউ ছাড় দিতে রাজি হননি। এক পর্যায়ে থানার প্রধান ফটকের সামনে ফজলুর পক্ষের শতশত মানুষ জড়ো হয়ে সন্তান ফিরে পাওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এসময় তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
পুলিশ ফটক বন্ধ করে বিক্ষোভকারীদের চলে যাওয়ার অনুরোধ করে। কিন্তু সন্তান ছেড়ে কিছুতেই তারা বাড়ি ফিরতে রাজি হয়নি। পরে ওসি আমিরুজ্জামান ও লতিবপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী মন্ডল ঘোষণা দেন, সন্তান দাবি করা দুই বাবা-মা এবং প্রতিবন্ধী ওই যুবকের ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। পরীক্ষার রিপোর্ট যার পক্ষে আসবে-তাদের কাছে সন্তান ফেরত দেওয়া হবে। এরপর রাত সাড়ে ১০টার দিকে থানা থেকে লোকজন চলে যায়।
মিঠাপুকুর থানার ওসি আমিরুজ্জামান বলেন, ওই প্রতিবন্ধী যুবককে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। আদালতে পাঠানো হবে। আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।