গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় রড দিয়ে মৎস্যজীবী নেতাকে পেটালেন এমপির ভাইয়ের লোকেরা!

জাতীয়

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: টেলিভিশন চ্যানেলে পুকুর লিজ নিয়ে অনিয়ম হয়েছে, জানিয়ে কথা বলায় গাইবান্ধায় এক মৎস্যজীবী নেতাকে বেধড়ক মারধর করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্যের ছোট ভাই লিটন চৌধুরীর লোকেরা।

শনিবার (১৯ অক্টোবর) জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীসহ স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা জানান, একটি টেলিভিশন চ্যানেলের অনুসন্ধানমূলক অনুষ্ঠানে পুকুর লিজ নিয়ে অনিয়মের কথা তুলে ধরেছিলেন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়ন মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি শম্ভু চন্দ্র (৩৮)। এর জেরে শনিবার তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) মনোয়ার হোসেন চৌধুরীর ছোট ভাই লিটন চৌধুরীর লোকজন।

বর্তমানে শম্ভু চন্দ্র গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

সরকারি পুকুর লিজে অনিয়মের কথা জানাতে গিয়ে ওই বেসরকারি টিভি চ্যানেলে শম্ভু চন্দ্র বলেছিলেন, আইন অনুযায়ী একটি মৎস্যজীবী সমিতিকে দুটির বেশি পুকুর লিজ দেয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু দেখা গেছে ক্ষমতা খাটিয়ে একটি মৎস্যজীবী সমিতিকে ১৪টি পুকুর দেয়া হয়েছে। সরকারি পুকুর লিজ দেয়া নিয়ে এমন ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। আর এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা-৪) আসনের সংসদ সদস্য মনোয়ার হোসেন চৌধুরীর ছোট ভাই লিটন চৌধুরীর প্রশ্রয়ে হয়েছে।

শুধু তাই নয়, কয়েকটি মৎস্যজীবী সমিতি স্বাক্ষর জাল করে পুকুর লিজ নিয়েছে অভিযোগ করেন তিনি।

গত ৪ অক্টোবর এ অনুষ্ঠানটি ওই বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রচার হলে লিটন চৌধুরীসহ বেশ কয়েকটি মৎস্যজীবী সমিতিগুলোর নেতারা শম্ভু চন্দ্রের ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।

এরই জেরে পুকুর ইজারা নিয়ে আলোচনা করার কথা বলে শনিবার দুপুরে শম্ভু চন্দ্রকে ডেকে নিয়ে একটি দোকানে ঢুকিয়ে তাকে লোহার রড দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়।

এ বিষয়ে শম্ভু চন্দ্র বলেন, পুকুর ইজারা নিয়ে জরুরি আলাপ রয়েছে জানিয়ে আমাকে লিটন চৌধুরীর কাছের দুই লোক শাখাহার ইউনিয়নের দইহারা গ্রামের শাহিন, রমজান ও আনোয়ারুল বাড়িতে এসে কোচাশহর বাজারে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে গেলেই একটি দোকানে ঢুকিয়ে লোহার রড দিয়ে মারধর শুরু করে তারা। এ সময় তারা বলতে থাকে ‘টিভিতে লিটন চৌধুরীর বিরুদ্ধে কেন কথা বলেছিস’? পরে আশপাশের লোকজন আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।

এ বিষয়ে সাপমারা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুল লতিফ বলেন, ‘৪ অক্টোবরে টিভিতে দেয়া সেই বক্তব্যের পর শম্ভুর ওপর ক্ষেপেছিল লিটন চৌধুরীর লোকজন। পরে সাব-লিজ দেয়া ১১০টি পুকুরের মধ্যে ২৪টি পুকুরের বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কয়েক মৎস্যজীবী গত ১৪ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত আবেদন দিলে।আরো ক্ষিপ্ত হয়ে লিটন চৌধুরীর লোকজন। তারা শম্ভুকে নিয়ে মারধর করে।’

শনিবার বিকালে মহিমাগঞ্জে শম্ভুকে কেন মারধরা করা হলো- এ বিষয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় নিবন্ধিত মৎস্যজীবী সমিতি আছে ৪১টি। সমিতিগুলোকে তিন বছরের জন্য সরকারি পুকুর বা জলাশয় লিজ দেয়া হয়। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি উপজেলার ১১০টি সরকারি পুকুর লিজের দরপত্র আহ্বান করা হয়। ৬ মার্চ দরপত্র জমার শেষ দিন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হলে দরপত্র বাতিল করা হয়। ২৪ মার্চ আবারও দরপত্র আহ্বান করা হয়। ৩ এপ্রিল ৯টি মৎস্যজীবী সমিতিকে পুকুরগুলো লিজ দেয়া হয়।

এদিকে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে লিটন চৌধুরী বলেন, ‘পুকুর লিজের বিষয়ে আমি জড়িত নই। আমি এসবের কিছুই জানি না। শম্ভু চন্দ্রকে যারা মারধর করেছে তারা খুবই খারাপ কাজ করেছে। আমি এর সঙ্গে জড়িত নই।’

গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি এ কে এম মেহেদী হাসান বলেন, শম্ভু চন্দ্রকে মারধরের ঘটনার বিষয়ে জানাতে এখন পর্যন্ত কেউ থানায় এসে কেউ অভিযোগ করেননি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রামকৃষ্ণ বর্মণ এ বিষয়ে বলেন, ‘২৪টি পুকুরের সাব-লিজের অভিযোগের কাগজ এখনও হাতে পাইনি। পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। সূত্র: যুগান্তর।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *