নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর মান্দা উপজেলার মৈনম ইউনিয়নে ইটাখৈর গ্রামে একটি কলাবাগানের মধ্য থেকে মাটি ফেটে অনবরত পানি বের হচ্ছে। গত এক সপ্তাহ ধরে এভাবে পানি বের হওয়ায় স্থানীয়রা অলৌকিক বলে দাবি করছেন। আশপাশ থেকে মানুষ ঘটনাস্থলটি দেখার জন্য ছুটে আসছেন।
আবার কেউ কেউ পানি বের হওয়াকে অলৌকিক ভেবে বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করছেন।
কলাবাগানের মালিকের নাম ইদ্রিস আলী। তিনি গ্রামের মৃত এরশাদ আলীর ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এক সপ্তাহ আগে ইদ্রিস আলীর কলাবাগানে এক নারী পাতা কাটতে গিয়ে দেখেন, বাগানের মধ্য থেকে মাটি ফেটে পানির ফোরায়া তৈরি হয়েছে। সেখান থেকে অনবরত পানি বের হচ্ছে।
পানি বের হওয়ার সময় শব্দও হচ্ছে। কলাবাগানের মালিক পানি প্রবাহের জন্য সেখানে একটি নালা করে দিয়েছিলেন। নালা থেকে কয়েক ফুট দূরে ছোট গর্ত করে দেয়া হয়েছে। সেই গর্তে পানি জমা হলে সেখান থেকে বোতলে করে নেয়া হচ্ছে।
এদিকে মাটি ফেটে পানি বের হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত মানুষ দেখতে আসছেন। স্থানীয়া বলছেন, আশপাশের ২-৩ কিলোমিটারের মধ্যে নদী বা কোনো খাড়ি নেই। এ ছাড়া আশপাশে অন্য কোনো পানির উৎস নেই।
এক সপ্তাহ থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হয়নি। কলাবাগানের আশপাশে জমিগুলো উঁচু ভিটে। এলাকায় পানির অভাবে তেমন ধান চাষ করা সম্ভব হয় না। এ এলাকার পানির স্তর প্রায় ৮০-১২০ ফুট নিচে।
কলাবাগানের মালিক ইদ্রিস আলী বলেন, গত দুই বছর আগে সেখানে কলাবাগান করে কলা চাষ করে আসছেন। দূর থেকে পানি নিয়ে এসে বাগানে দিতে হয়। যেখানে পানির কোনো অস্তিত্ব ছিল না, সেখানে হঠাৎ করেই মাটি ফেটে পানি বের হচ্ছে।
তিনি বলেন, এ দৃশ্য দেখার জন্য গত কয়েক দিন থেকে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসছেন। আবার কেউ কেউ আরোগ্য লাভের জন্য পান করছেন। অনেকেই বোতলে করে পানি নিয়ে যাচ্ছেন।
স্থানীয় জাহিদ হাসান ও শামসুর রহমান বলেন, গত ৫-৬ দিন ধরে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শত শত মানুষ ভিড় করছেন পানির উৎস দেখার জন্য। বেশিরভাগ মানুষ হাতে বোতল নিয়ে অপেক্ষা করছেন পানি সংগ্রহ করতে। পানি বোতলে ভরে নিয়ে যাচ্ছেন নিজেদের মনোবাসনা পূরণ করতে।
নওগাঁ সদরের বলিহার গ্রাম থেকে আসা স্কুলছাত্র সৌরভ জানায়, মাটি ফেটে পানি বের হচ্ছে শুনে তার মায়ের জন্য বোতলে করে পানি নিতে এসেছি। এই পানি খেলে আরোগ্য লাভ হতে পারে। এ জন্য মা পানি নিয়ে যেতে বলেছে।
স্থানীয় মৈনম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইয়াছিন আলী রাজা বলেন, আমি লোকমুখে শুনেছি ওই স্থান থেকে পানি বের হচ্ছে। অনেক মানুষ বিভিন্ন স্থান থেকে ওই পানি নেয়ার জন্য ছুটে আসছেন। তবে কী কারণে বা কীভাবে পানি বের হচ্ছে তা জানি না। আমার কাছে মনে হচ্ছে এটি একটি অলৌকিক ঘটনা।
নওগাঁ সরকারি কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান মিজানুর রহমান বলেন, শিলার মধ্যে দুটো স্তর থাকে। একটি হচ্ছে- প্রবেশ্য শিলাস্তর এবং অপরটি হচ্ছে অপ্রবেশ্য শিলাস্তর। প্রবেশ্য শিলাস্তর দিয়ে পানি ভেতরে প্রবেশ করতে পারে। কিন্তু অপ্রবেশ্য শিলাস্তর দিয়ে পানি ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, যখন কোনো পানির উৎসের পাশ দিয়ে দুটো অপ্রবেশ্য শিলা থাকে, তখন সেটির মাঝ দিয়ে পানি না গিয়ে ওপরের দিকে উঠে আসে। এটিকে ভূগোলের ভাষায় বলে ‘আরকেটেজিও কুপ’। এই কুপ প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয়।
মিজানুর রহমান বলেন, পানি যে পথ দিয়ে ভূগর্ভে যাবে, সে পথে কঠিনশিলা থাকায় তা বাধাপ্রাপ্ত হয়। যে কারণে পানি নিচের দিকে যেতে পারে না। ফলে পানি ওপরের দিকে উঠে আসে। তবে এ পানি পানযোগ্য বলে তিনি জানান। সূত্র: যুগান্তর।
স্ব.বা/শা