স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীতে কলেজছাত্র ফারহান ইসরাক স্বাক্ষর হত্যার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আসামিদের বিচার চান তার পরিবার। এ মামলার স্বাক্ষীর জন্য আগামী সোমবার দিন ধার্য রয়েছে।
বাদী পক্ষের আইনজীবি বলছেন, এ মামলায় অবশ্যই হত্যাকারীদের শাস্তি নিশ্চিত হবে। তবে আসামিরা সবাই জামিনে থাকায় স্বাক্ষরের পরিবারকে ইতিমধ্যেই দুই একবার মুঠোফোনে অজ্ঞাত নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে মামলার বিষয়টি তুলে নিয়ে মিটমাট করতে বলা হয়েছে। এ নিয়ে কিছুটা হুমকির মুখে রয়েছেন তারা।
স্বাক্ষরের বাবা মোস্তফা কামাল বাবলু বলেন, আদালত কেন মামলার তারিখ দিতে দেরি করছে তা আমার বোধগম্য নয়। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁনের কাছে আবেদন করছি আমার ছেলের হত্যার যেন সুষ্ঠু বিচার হয়। ছেলে হত্যার সুষ্ঠু বিচারের জন্য আমি চাই এ বিচার যেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হয়। তিনি বলেন, আসামিরা জামিনে থাকার কারণে আমার মুঠোফোনে অজ্ঞাত নাম্বার থেকে দুই-একবার হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়া থেকে তুলে নিয়ে মিটমাটের জন্য ফোন দেওয়া হয়েছে। তবে আমি সে প্রস্তাবে রাজি হইনি।
২০১৬ সালের ২৮ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কলেজে যাওয়ার পথে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে একদল দুর্বৃত্তরা তার ওপর হামলা চালায়। পরে স্থানীয়রা স্বাক্ষরকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ আগস্ট ভোরে তার মৃত্যু হয়। স্বাক্ষর রুয়েট ক্যাম্পাসে অবস্থিত রাজশাহী অগ্রণী বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন।
ঘটনার পরদিন নগরীর মতিহার থানায় মামলা করেন স্বাক্ষরের বাবা মোস্তফা কামাল বাবলু। পরে অজ্ঞাত সাত-আটজনকে আসামি করে এটি হত্যা মামলা হিসেবে আমলে নেয়া হয়। স্বাক্ষর মারা যাওয়ার পর ৮ আগস্ট রিংকু ও তার সহযোগী মুন্নাকে আটক করে পুলিশ। ১১ আগস্ট তারা রাজশাহীর চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
রাজশাহীর মতিহার থানার এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) তাজউদ্দিন আহমেদ ২০১৭ সালের ৭ জানুয়ারি মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করেন। মামলার চার্জশিটে উল্লেখ করা আছে, ২৮ জুলাই রুয়েটের পাশে কাজলার অক্ট্রয় মোড়ে ডেকে নিয়ে স্বাক্ষরকে ক্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম করে। আসামি নয় জনের মধ্যে সাবালক হলেন, রিংকু, বাপ্পী, মুন্না-২, বিশাল ওরফে শাকিল, মেহেদী ও হিরো। অন্য দিকে আসামি ফারহানা নাতাশা, তৌফিক হাসান তন্ময় ও মুন্না-১ নাবালিকা ও শিশু।
মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবি রেবেকা সুলতানা বলেন, বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দুটিই ট্রায়ালে আছে। নারী ও শিশু বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ১ আদালতে ট্রায়ালের জন্য আছে। মহানগর কোর্টে ট্রায়ালের জন্য আছে চার্জের পর্যায়ে। তিনি বলেন, মামলাটা দুইভাগে বিভক্ত হয়েছে, আসামি যারা শিশু তাদেরটা আগে শিশু কিশোর অপরাধ আদলতে ছিল পরে আইন সংশোধন হয়ে নারী ও শিশু আদালতে দেওয়া হয়েছে। স্বাক্ষীর জন্য আগামী সোমবার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, যেসব আসামি সাবালক তাদের মামলা মহানগর দায়েরা জজ কোর্টে আছে। যা চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি চার্জের জন্য ছিল। কিন্তু জটিলতার জন্য তা এখনো হয়নি। রাজশাহী জজ কোর্টের এ আইনজীবি বলেন, আদালত খুব দ্রুত এই মামলার তারিখ নির্ধারণ করবে, তবে দীর্ঘদিন ধরে জমা না দেওয়ার মামলার জটিলতা কারণ হিসেবে থাকতে পারে।
রেবেকা সুলতানা বলেন, মামলায় আসামিরা জামিনে আছেন। আসামিদের শাস্তি নিশ্চিত তবে বাদীর স্বাক্ষীর ওপর সব কিছু নির্ভর করছে। স্বাক্ষীরা এখন পর্যন্ত ঠিকঠাক আছেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ লাশের ময়না তদন্তের শেষে প্রতিবেদনে বলেছে, স্বাক্ষরের মাথা ও শরীরের অন্যান্য জায়গায় শক্ত বস্তুর আঘাতে গুরুতর জখম হওয়ায় মৃত্যু হয়।
স্ব.বা/শা