এখনও মিটেনি রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি-সম্পাদকের দ্বন্দ্ব

রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীকে  ‘রাজাকারপুত্র’ বলায় সাধারণ সম্পাদকের উপর বিরক্ত হয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির দুটি সভাতেও যাননি তিনি।

জেলার দলীয় সভায় শহীদ বাবাকে নিয়ে এমন বক্তব্যের পর আর মুখ দেখাদেখি হয়নি রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদের সঙ্গে সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরীর।

তাদের বিরোধ মেটাতে গেলো ৮ নভেম্বর ঢাকায় তলবী সভায় দুই নেতাকে মিলিয়ে দেন কেন্দ্রীয় নেতারা। কিন্তু কাজ হয়নি। এমনকি সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির দুটি সভার একটিতেও যাননি সভাপতি ফারুক চৌধুরী।

জানা যায়, আগামী ৮ ডিসেম্বর হবে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। সম্মেলনে আবার সভাপতি প্রার্থী হিসেবে সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরীর নাম শোনা যাচ্ছে। তাই ধারণা করা হচ্ছিল রাজশাহীর শিল্পকলা অ্যাকাডেমি মিলনায়তনে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সভায় অন্তত তিনি যাবেন। কিন্তু অন্যান্য সভার মতো তিনি তাতে অনুপস্থিত । এর আগে গত ১৮ নভেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের এক জরুরি সভায়ও ওমর ফারুক চৌধুরী যাননি।

জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্বে থাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন সভাটি আহ্বান করেছিলেন। নগরীর লক্ষ্মীপুর মোড়ে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই সভায় সভাপতির অনুপস্থিতিতেই সম্মেলনের জন্য বিভিন্ন কমিটি-উপকমিটি গঠন করা হয়।

রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের একটি সুত্র জানায়, রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে জামায়াত-বিএনপিকে দলে স্থান দেয়া, নিয়োগ বাণিজ্য, মাদকের পৃষ্ঠপোষকতাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। মূলত এসব কারণেই জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদের সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়।

তাই দীর্ঘ সময় ধরেই তিনি জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে যান না। অংশ নেন না কর্মসূচিতেও। এই অচলাবস্থা কাটাতে গত ৮ নভেম্বর ঢাকায় রাজশাহীর এ দুই নেতাকে নিয়ে বসেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সেখানেই জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দিন ঠিক করে দেয়া হয়। কিন্তু এই সম্মেলনের কোনো কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন না সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী।

তবে এ সকল অভিযোগ অস্বীকার করে ওমর ফারুক বলেন, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। রাজশাহী জেলা সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ তার বাবা-চাচাকে নিয়ে খারাপ কথা বলাতে কেন্দ্রে অভিযোগ দিয়ে ফল পেয়েছেন হাত মেলানো আর বুক মেলানোর নির্দেশ। আমি কোনোটাই মেলাতে রাজি নই। আমি ক্ষমা চেয়ে চলে এসেছি। এই জন্যই আমি নীরবতা পালন করছি।’ তবে তার নেতৃত্বেই আগামীতে সম্মেলন হবে বলে জানান ওমর ফারুক চৌধুরী।

সর্বশেষে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী চাইলে তিনি আবারো সভাপতির দায়িত্ব নেবেন বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে কারও জন্য দলের কিছু থেমে থাকবে না বলে মন্তব্য করেন জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। তিনি বলেন, ‘তিনি (ফারুক) সভায় উপস্থিত হন না। কেন হন না সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু কারও জন্য দল থেমে থাকবে না।’

সম্মেলনের সমন্বয়ক এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, দলীয় সবাইকে নিয়েই সম্মেলন করতে চান তিনি। সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরীও সম্মেলনে আসবেন বলে প্রত্যাশা তার।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৬ ডিসেম্বর রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। কমিটির মেয়াদ দুই বছর আগে শেষ হলেও উপজেলা আওয়ামী লীগের কোন শাখার সম্মেলন দিতে পারেননি তারা। উল্টো দুজনের বিরোধ ছড়ায় গোটা জেলাতেই।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *