আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটকের পৈত্রিক ভিটা ভেঙে তৈরী হচ্ছে সাইকেল গ্যারেজ

রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার: আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্রকার ঋত্বিককুমার ঘটকের পৈত্রিক ভিটার একটি অংশ ভেঙে সেখানে অস্থায়ী সাইকেল গ্যারেজ করছে রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। সোমবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, একটি অংশ পুরো ভেঙে তার ইট ও সিমেন্ট ও সুরকি সরিয়ে ফেলছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

কলেজের শিক্ষকরা বলছেন, কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য এইখানে অস্থায়ী সাইকেল গ্যারেজ তৈরি করা হবে। এর প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন রাজশাহীর সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও চলচ্চিত্রপ্রেমী মানুষ। ইতোমধ্যে তারা স্মারকলিপি প্রদান ও মানববন্ধনের মতো কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন।

নগরীর মিঞাপাড়ায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্রকার ঋত্বিককুমার ঘটকের পৈত্রিক ভিটা সংরক্ষণের দাবিতে রাজশাহী জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে রাজশাহীর প্রগতিশীল ১৩টি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

গতকাল সোমবার বিকেলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরিফুল হক এ স্মারকলিপি গ্রহণ করেন। এসময় কবি ও কবিতার সংগঠন ‘কবিকুঞ্জের’ সভাপতি অধ্যাপক রুহুল আমিন প্রামানিক, রাজশাহী ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি আহসান কবীর লিটন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ বকুল, ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ ইসলাম মাসুদ, নাট্য সংগঠন ভোর হলোর সভাপতি কামার উল্লাহ সরকার কামাল উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত স্মারকলিপিতে বলা হয়, বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী ঋত্বিককুমার ঘটক নগরীর মিঞাপাড়ার বাড়িতে শৈশব, কৈশোর ও তারুণ্যের একটি অংশ কেটেছে। এই বাড়িতে কিছু সময় বসবাস করেছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীও।

এই বাড়িতে থাকার সময়ই ঋত্বিক ঘটক রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল ও রাজশাহী কলেজে পড়েছেন। তিনি রাজশাহী কলেজ এবং মিঞাপাড়ার সাধারণ গ্রন্থাগার মাঠে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে নাট্যচর্চা করেছেন। ঋত্বিক ঘটক এই সময় রাজশাহীতে ‘অভিধারা’ পত্রিকা সম্পাদন করেছেন। বিলুপ্ত কল্পনা হলের ‘ ভাবীকাল’ নামে একটি চলচ্চিত্রের ব্যানারও এঁকেছেন বলে জানা যায়। রাজশাহীর তৎকালীন সাংস্কৃতিক জগতে তিনি যৌবনকালে সবার মধ্যমণি হয়ে উঠেছিলেন। রাজশাহীতে থাকাকালীন নাট্যান্দোল ও সাহিত্য সম্পাদনা করেছেন।

সেই বাড়িটিই এরশাদ সরকারের আমলে ১৯৮৯ সালে নামমাত্র মূল্যে রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজকে ইজারা দেওয়া হয়। তারাই এখন সম্পূর্ণ বাড়িটি ব্যবহার করছে। বাড়িটির এক অংশে ইতোমধ্যে বহুতল ভবন করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। আরেক অংশে যেসব কক্ষে ঋত্বিকরা থাকতেন সেসব কক্ষও ব্যবহার করছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। তারই এক অংশ ভেঙে অস্থায়ী সাইকেল গ্যারেজ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে অতিদ্রুত তা বন্ধ করে ঋত্বিকের পৈত্রিক ভিটা সংরক্ষণ করে হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণার দাবি জানান। একইসাথে এই ভিটায় ঋত্বিক ঘটক স্মৃতি জাদুঘরও গড়ে তোলার দাবি জানান তারা।

রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. আনিসুর রহমান বলেন, এনিমি প্রোপার্টি হিসেবে সরকার ৩৪ শতক জমি কলেজের নামে লিখে দেয়। সে হিসেবে পুরো বাড়িটিই কলেজের জন্য বরাদ্দকৃত জমি। এখন বাকি কক্ষগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে- তবে কলেজ আরো স্বচ্ছল হলে তখন ওইসব ঘরও ভাঙা পড়বে। আর যে কক্ষটি ভাঙা পড়ছে সেই কক্ষটির অবস্থাও জরাজীর্ণ ছিলো।

রাজশাহী জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহম্মদ শরিফুল হক বলেন, আমরা স্মারকলিপি পেয়েছি। আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষকে কাজ বন্ধ করতে বলেছি। এর বিষয়টি যাচাইবাছাই করে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *