আন্তর্জাতিক ডেস্ক: লাইন অফ একচুয়াল কন্ট্রোল অর্থাৎ প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা, যাকে সংক্ষেপে বলা হয় এলএসি। মে মাসের শুরু থেকেই এলএসি নিয়ে ঝামেলার সূত্রপাত। এলএসির যে এলাকাটি এখন চীন-ভারতের বিতর্কের কেন্দ্রে, সেই প্যাংগং লেক সম্পর্কে কিছু জরুরি তথ্য। সা¤প্রতিক চীন-ভারত সংঘাতে যদিও বারবার উঠে আসছে গলওয়ান উপত্যকার কথা, আসল ফোকাস হল এই ১৩৫ কিলোমিটার লম্বা লেকটি।
এখানে পাহাড়ের ঢাল সরাসরি নেমে এসেছে লেকের জলের সেই পয়েন্টগুলিকে বলা হয় ‘ফিঙ্গার’, অর্থাৎ আঙুল। এই রকম আটটি ‘ফিঙ্গার’ রয়েছে এইখানে। এখান দিয়েই গেছে চীন ও ভারতের মধ্যবর্তী এলএসি, অর্থাৎ লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল।
কিন্তু সেই লাইনটা ঠিক কোথায়? এই নিয়েই যত গÐগোল। ভারতের দাবি ফিঙ্গার এইট দিয়ে গেছে এই এলএসি, যার পরেই চীনের শেষ মিলিটারি পোস্ট। অর্থাৎ, ফিঙ্গার এইট পর্যন্ত ভারতীয় এলাকা। অন্য দিকে চীনের দাবি, মোটেই তা নয়, আসলে এলএসি গেছে ফিঙ্গার টু দিয়ে।
ভারতের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে ফিঙ্গার ফোর পর্যন্ত এলাকা। তবে সেখানে সেনাবাহিনী প্যাট্রোল করতে পারে ফিঙ্গার এইট পর্যন্ত। অন্য দিকে চীন প্যাট্রোল করে ফিঙ্গার ফোর পর্যন্ত, যদিও মাঝেমধ্যে ফিঙ্গার টু পর্যন্তও তারা চলে আসে। ১৪ হাজার ফুট উঁচুতে অবস্থিত এই লেকটির তিন ভাগের দুই ভাগ চীনের নিয়ন্ত্রণে, বাকিটুকু ভারতের।
প্রায় দুই দশক আগে কারগিল যুদ্ধের সময়, যখন ভারতীয় সেনাবাহিনী পাক সেনার মোকাবিলায় ব্যস্ত, সেই ফাঁকে ভারতের নজর এড়িয়ে ফিঙ্গার ৪ পর্যন্ত একটা কাঁচা রাস্তা বানিয়ে ফেলে চীন। পরে সেটিকে পিচ দিয়ে ঢেকেও দেওয়া হয়। ২০১৪-১৫ সালে চীন এই ফিঙ্গার ফোর-এই একটি স্থায়ী কাঠামো তৈরি করে। যদিও ভারতের জোরালো প্রতিবাদের পর যা ভেঙে দেওয়া হয়। ২০১৭ ডোকলামে শুরু হয়েছিল চীন-ভারত সংঘাত। সে বারও চীনা সেনাবাহিনী ঢুকে এসেছিল ফিঙ্গার ফোর পর্যন্ত। এ বছরের মে মাসে ঝামেলা শুরু হয় ফিঙ্গার ফাইভে। চলতি মাসে ভারতীয় সেনাবাহিনী যখন গলওয়ান উপত্যকায় ব্যস্ত, তখনই চীন ফিঙ্গার ফোর থেকে ফিঙ্গার এইট পর্যন্ত বিস্তৃত পাহাড়চূড়াগুলি দখল করে নেয়, ফলে এলাকাটির নিয়ন্ত্রণও চলে যায় তাদের হাতে।
চীনের এই জায়গা দখলের দুটি সম্ভাব্য কারণ আছে-
প্যাংগং লেক স্ট্র্যাটেজিকালি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি চুসুল উপত্যকার কাছে। ১৯৬২ সালে এই চুসুল উপত্যকাই ছিল অন্যতম ব্যাটলফ্রন্ট। যদি প্যাংগং লেক বরাবর চীন কিছুটা এগিয়ে আসতে পারে, ভারতকে বেঁধে রাখতে পারে একটা নির্দিষ্ট গÐিতে, চুসুল উপত্যকায় নজরদারিও তাদের জন্য অনেক সহজ হয়ে যাবে।
দ্বিতীয় ব্যাখ্যাটি হল, চীন চায় না এলএসি-র কাছের এলাকাগুলোতে ভারত নতুন পরিকাঠামো তৈরি করে। কারণ সেটি হলে আকসাই চীন এবং লাসা-কাশগর হাইওয়ের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। লাসা-কাশগর হাইওয়ে তাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পিওকে এবং পাকিস্তানের উপর তাদের যে আধিপত্য, সেটা বজায় রাখার অন্যতম উপায় এই হাইওয়ে।
স্ব.বা/বা