সবাইকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক : করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সবাইকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে।’ সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে এই নির্দেশনা দেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

বৈঠকে রাজাকার, আলবদর, আলশামসসহ মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের তালিকা প্রকাশের বিধান যুক্ত করে ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইন, ২০২০’-এর খসড়ায় অনুমোদন দেয়া হয়। গণভবন প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রী ও সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রীরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। মন্ত্রিসভাও বলছে মাস্ক না পরলে কোনো কিছুই সফল হবে না। মাস্ক নিয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

মাঠপ্রশাসন থেকে সাজেশন এসেছে। তারা বলছেন, জেল-জরিমানার পরও মানুষের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সচেতনতা আসছে না। সেজন্য তারা পরামর্শ দিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক দলগুলোর মাধ্যমে প্রচার করতে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলে দেয়া হয়েছে, বিসিসিআইসহ যারা আছে তাদের সবাইকে এনশিউর করতে তাদের আওতাধীন সবাইকে এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে, তাদের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে প্রচারণা করতে।

প্রধানমন্ত্রী ওনার অঙ্গ-সংগঠনে যারা আছে, তাদের সবাইকে ক্লিয়ার ইনস্ট্রাকশন দিয়ে দিয়েছেন যে প্রোগ্রামেই যারা আসবেন, যত যা-ই করুক অবশ্যই তাদের মাস্ক পরতে হবে। তারা ম্যাসিভ ক্যাম্পেইন চালাবে।

যে ভাবসাব দেখা যাচ্ছে, যেভাবে বাড়ছে তাতে এটা আল্লাহ না করুক শীত যদি একটু বেশি পড়ে, তাহলে আরও নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট পড়বে। শুধু জেল-জরিমানা করলেই হবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মাস্কটা যেন কাপড়ের দেয়া হয়, তাহলে ধুয়ে ব্যবহার করতে পারবে। জেলা প্রশাসনসহ মাঠ প্রশাসনের সবাইকে বলে দিয়েছি এখন থেকে তিন লেয়ারের কাপড়ের মাস্ক দিতে।

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে গত জুলাইয়ের শেষদিকে বাসার বাইরে সব জায়গায় সবার মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে সরকার। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে প্রতিদিনই মানুষ মারা গেলেও নানা অজুহাতে এখনও অনেকে মাস্ক ব্যবহার করছেন না।

সবার মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে কিছু দিন ধরে সারা দেশে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জেল-জরিমানা করা হচ্ছে।

রাজাকারের তালিকা করবে জামুকা : মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ২০০২ সালের জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন ছিল। সেই আইন পরিপূর্ণভাবে বর্তমান সময়ের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না।

তাই মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইনের নতুন খসড়া করেছে, এই আইন পাস হলে আগের আইন বাতিল হয়ে যাবে।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজাকার বাহিনী ও অন্যান্য আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য হয়ে যারা মুক্তিযুদ্ধের ও দেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে, তাদের তালিকা তৈরি করবে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল।

কাউন্সিল তালিকা তৈরি করে সরকারের কাছে তুলে দিয়ে প্রকাশের সুপারিশ করবে। এছাড়া যারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়ে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার বিধান থাকছে প্রস্তাবিত এ আইনে।

উল্লেখ্য, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইনে শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরির কথা উল্লেখ থাকলেও স্বাধীনতাবিরোধী, আলশামস, আলবদর, রাজাকারদের তালিকা তৈরির কোনো কথা বলা ছিল না।

প্রায় এক দশক আগে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর রাজাকারের তালিকা তৈরির দাবি জোরালো হয়ে ওঠে।

এর ধারাবাহিকতায় গত বছর বিজয় দিবসের আগের দিন সংবাদ সম্মেলন করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ১০ হাজার ৭৮৯ জন ‘স্বাধীনতাবিরোধীর’ তালিকা প্রকাশ করেন।

কিন্তু ওই তালিকায় গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের নাম আসায় ক্ষোভ আর সমালোচনার প্রেক্ষাপটে সংশোধনের জন্য ওই তালিকা স্থগিত করা হয়।

চলতি বছর জানুয়ারিতে সংসদেও এ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে। খোদ সরকারি দলের সদস্যরাই এ নিয়ে মন্ত্রীর সমালোচনায় মুখর হন।

সেসময় মন্ত্রী নতুন করে তালিকা তৈরির কথাও জানান। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির একটি উপকমিটি ওই তালিকা তৈরির কাজ শুরু করে।

রাজাকারের তালিকা কীভাবে করা হবে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, রাজাকারের তালিকা করার বিষয়টি খসড়া আইনে রাখা হয়েছে। আইনে সব বিষয়ে ডিটেইল করা নেই, এটা রুলস (বিধি) করবে।

স্বাধীনতাবিরোধী বলতে কী বোঝাবে রুলে তা বিস্তারিত বলা থাকবে। আগে আইন হোক, এরপর বিধি করবে। কীভাবে এই তালিকা করা হবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়নি।

কাউন্সিল মুক্তিযোদ্ধার ‘ভুয়া’ সনদধারীদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করবে জানতে চাইলে খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, এটা ডিপেন্ড করবে কেমন অপরাধ করেছেন তার ওপর।

শুধু সার্টিফিকেট নিয়েছে, নাকি অন্য সুবিধা নিয়েছে, নাকি দুটোই নিয়েছে বা তার সন্তানরাও সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন কি না-আইন অনুযায়ী শাস্তির সুপারিশ করা হবে।

এ ধরনের ক্ষেত্রে দণ্ডবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনের নিবন্ধন, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধ সংশ্লিষ্ট বিদ্যমান সংগঠনের নিবন্ধন, কাউন্সিলের কার্যকলাপ পরিচালনা, অর্থায়ন, তহবিল ও বাজেট কীভাবে হবে, সেসব বিষয়ে খসড়া আইনে বিস্তারিত বলা আছে।

সরকারি তথ্য কেন্দ্রীয় ডাটা সেন্টার : সরকারি সব তথ্য কেন্দ্রীয় ডাটা সেন্টারে রাখতে হবে উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বৈঠকে ‘বাংলাদেশ ডাটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেড’ শীর্ষক কোম্পানির মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন এবং আর্টিক্যাল অব অ্যাসোসিয়েশনের সংশোধিত খসড়া ভূতাপেক্ষ অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

এখন থেকে সবার ডাটা আইসিটি (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি) মন্ত্রণালয়ের কালিয়াকৈরের মেগা ডাটা সেন্টার রাখতে হবে। এমনকি বিদেশিদেরটাও রাখা যাবে। কিন্তু সেটার জন্য প্রথমে একটা অরপারেটিং ফান্ড দিয়ে দিচ্ছে।

এরপর থেকে সরকার টাকা দেবে না। তারাই ডাটা স্টোর করে যে টাকা-পয়সা পাবে-সেটা দিয়েই মেইনটেন করবে এবং ভাবিষ্যতে এক্সটেনশন করবে। এটার জন্য বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানি করতে হবে।

আর্টিক্যাল অব অ্যাসোসিয়েশসন লাগবে। প্রত্যেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগের একটা করে সার্ভার বসায়, এখন থেকে কেউ আর তা পারবে না। সবার ডাটা এই কালিয়াকৈরে ডাটা সেন্টারে কোম্পানির আন্ডারে স্টোর করতে হবে।

এটার একটা ব্যাকআপ আছে যশোরে। কোনো কারণে যদি কালিয়াকৈরে ডিজাস্টারও হয়, সব ডাটা যশোরের ব্যাকআপ সেন্টার থেকে উদ্ধার করা যাবে।

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে প্রস্তুত হচ্ছে সরকার : চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও নিত্যনতুন প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে একটি বড় টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

একইসঙ্গে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের টেকনোলজি ও সমস্যার মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করতে শিক্ষা কারিকুলাম পরিমার্জন ও ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্টের (এনএসডি) তত্ত্বাধানে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।

চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও বাংলাদেশের সম্ভাবনা সম্পর্কিত বিষয়সমূহ মন্ত্রিসভাকে অবহিতকরণ কালে এসব সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমরা এখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছি।

মন্ত্রিসভায় আইসিটি বিভাগ থেকে এ বিষয়ে উপস্থাপনা করা হয়েছে। ভবিষ্যৎটা নির্ভর করছে কীভাবে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবকে হ্যান্ডেল করব। এটা ঠিকভাবে হ্যান্ডেল করতে না পারলে অসুবিধায় পড়তে হবে।

কারণ, সব টেকনোলজি, উৎপাদন পদ্ধতি পরিবর্তন হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে কোথাও কোথাও ম্যানপাওয়ার কমে যাবে আবার অন্য জায়গায় লাগবে। ওয়ার্ক ফোর্সকে সেভাবে ডেভেলপ করতে হবে।

তা না করতে পারলে ভবিষ্যতে আমরা টেকনোলজির সবদিক দিয়ে পিছিয়ে যাব। ১০টি টেকনোলজিকে পয়েন্ট আউট করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আগামী দিনে ১০টি টেকনোলজি সারা পৃথিবী বিট করবে।

এগুলো হল : অ্যাডভান্সড ম্যাটেরিয়ালস, ক্লাউড টেকনোলজি, অটোনোমাস ভিকল, সিনথেটিক বায়োলজি, ভার্চুয়াল অগমেন্টেড রিয়েলিটি, আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স, রোবট, ব্ল্যাক চেইন, থ্রিডি প্রিন্টিং এবং ইন্টারনেট অব থিংকস বা আইওটি।

এ টেকনোলজিকে গুরুত্ব দিতে হবে। শিল্পবিপ্লবের ক্ষেত্রে তিনটি সমস্যা দেখা দেবে জানিয়ে খন্দকার আনোয়ার বলেন, মেশিন বা রোবট অনেক মানুষকে রিপ্লেস করে ফেলবে।

এ জন্য যারা চাকরি হারাবে, তাদের পরিকল্পনা করে অন্য জায়গায় চাকরি দিতে হবে। এটা নিয়ে ভয়ের কোনো কারণ নেই।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *