স্বদেশবাণী ডেস্ক: মানব ও অর্থ পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে কুয়েতে চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের রায়ের কপি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
শুক্রবার স্পিকার সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, কুয়েতের আদালতের রায়ের কপি বৃহস্পতিবার সংসদে পৌঁছেছে। এটা পর্যালোচনা করে সংবিধান ও কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে এমপি পাপুলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত কবে জানা যাবে- সে বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানাননি স্পিকার।
বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬(২) অনুচ্ছেদে বলা আছে, কোনো আইনপ্রণেতা নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে তিনি সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবেন না এবং মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি আর সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হন না। ওই অনুচ্ছেদেই আরও বলা আছে, কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিলে কিংবা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করলে আর সংসদ সদস্য হিসেবে থাকতে পারবেন না।
এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন শুক্রবার রাজধানীর পূর্বাচল ক্লাবে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের জানান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রায়ের কপি পৌঁছেছে।
মন্ত্রী বলেন, পাপুলের রায়ের কপি আমরা পেয়েছি। ৬১ পৃষ্ঠার রায়টি আরবি ও ইংরেজি ভাষায় লেখা। আইন অনুযায়ী, রায়ের কপি জাতীয় সংসদ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। পাপুলের বিরুদ্ধে এখন কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেটা পার্লামেন্ট ঠিক করবে। তারা সিদ্ধান্ত নেবে।
এমপি পাপুলের বিষয়ে সংসদ সচিব জাফর আহমেদ খান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সংসদে রায়ের কপি এসেছে। এ বিষয়ে কাজও শুরু করা হয়েছে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন স্পিকার।
পাপুলের সংসদ সদস্য পদ খারিজ হবে কি না- এ প্রশ্নে সচিব বলেন, সংবিধানে আছে নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দুই বছরের দণ্ড হলে সদস্য পদ থাকবে না। কিন্তু তার (এমপি পাপুল) ৪ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। এক্ষেত্রে তার সদস্য পদ থাকার কথা নয়। স্পিকার এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
গত ২৮ জানুয়ারি এমপি পাপুলের ৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় কুয়েতের একটি আদালত। কুয়েতের ফৌজদারি আদালতের বিচারক আবদুল্লাহ আল ওসমান এ রায় ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে তাকে ৫৩ কোটি ২১ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া পাপুলের কাজে সহযোগিতা করায় কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা মাজেন আল জাররাহসহ দেশটির দুই কর্মকর্তাকে ৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।পাশাপাশি প্রত্যেককে ১৯ লাখ কুয়েতি দিনার অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫৩ কোটি ২১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য পাপুলকে গত বছরের ৬ জুন রাতে কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির অন্যতম মালিক পাপুলের সেখানে বসবাসের অনুমতি রয়েছে।
পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে পাপুলের বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ এনেছে কুয়েতি প্রসিকিউশন। ১৭ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর এখন তাকে রাখা হয়েছে কুয়েতের কেন্দ্রীয় কারাগারে।