স্বদেশবাণী ডেস্ক: ভোলায় মো. আল আমিন নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তা নিজেকে মৃত দেখিয়ে স্ত্রী ছাদিয়া আফরোজ লিমা ও মা সেফু বেগমের নামে মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার (ভূমিহীন দরিদ্রদের জন্য) দুই শতক জমিসহ দুটি পাকা ঘর নিয়েছেন।
আল আমিনের পিতা আব্দুর রশিদের তিন ছেলের একজন মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার; যিনি বর্তমানে লক্ষ্মীপুর জেলা সদরে কর্মরত। অপরজন চরখলিফা দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক। ওই পরিবার প্রধানমন্ত্রীর এই ঘর পাওয়ার কথা নয়। এদের প্রত্যেকের কৃষিজমি রয়েছে। নদীতে সবার নৌকা ও জাল রয়েছে। রয়েছে মাছের ব্যবসা। এমন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ভোলার দৌলতখান উপজেলায়।
শুক্রবার এ কার্যক্রম বাস্তবায়নের সদস্য সচিব উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এইচএম আনসার আলী জানান, তিনি শুধু ওই প্রকল্প বাস্তবায়নের কারিগরি দিক দেখছেন। এসব অনিয়মের বরাদ্দ দিয়েছেন সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কাওসার হোসেন। বরাদ্দের টাকাও নিয়েছেন তিনি। প্রথম দফায় উপজেলার জন্য ৪২টি ঘর ও দ্বিতীয় দফায় ২০টি ঘরের বরাদ্দ পান।
প্রথম প্রতিটি ঘরের জন্য ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা, মালামাল পরিবহনের জন্য ৪ হাজার টাকা, কর্মকর্তাদের তদারকির জন্য পাওয়া গেছে ৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। দ্বিতীয় দফার ঘরপ্রতি বরাদ্দ ২ লাখ ৩৬ হাজার ১৩৫ টাকা। এ বছর ২৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রথম দফার ঘর ও জমি বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। ওই দিন তিনি ভোলার সুফলভোগীদের সঙ্গেও কথা বলেন।
অথচ আড়ালে থেকে গেছে কত অনিয়ম। এমন প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মের চিত্র দেখা যায় ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার চরপাতা ইউনিয়নে দক্ষিণ চর লামছিধলী ৮ ও ৯নং ওয়ার্ড সীমানায় সুবেদার বাড়ির মোড় সংলগ্ন সরদার বাড়িই হচ্ছে ব্যাংক স্টাফ আল আমিনের বাড়ি। ওই বাড়িতে আল আমিনের পরিবারে দুটি ছাড়াও ঘর পান শাহাবুদ্দিনের স্ত্রী উররতি বেগম, আব্দুল খালেকসহ দুই পরিবার। একই ওয়ার্ডে নির্মাণ করা হয় আরও ৪টি ঘর।
ঘর পাওয়া ইয়াসমিন বেগম জানান, ঘরের ভিটায় বালি ভরাট করতে ১৩ ট্রাক বালির দাম ও ২৬ দিন নির্মাণ শ্রমিকদের খাওয়ার ব্যয়ও বহন করতে হয়েছে তাদের। ওই ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের চরপাতা মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন প্যাদাবাড়ির দরজায় জানুয়ারি মাসে ১০টি ঘর নির্মাণ কাজ দেখানো হলেও অনেক ঘরের চালা,জানালা ৬ মাসেও লাগানো হয়নি। লাগানো হয়েছে নিম্নমানের কাঠ; যা টানা বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার সাংবাদিকরা ওই সব ঘরের ছবি তোলার খবর পেয়ে তড়িঘড়ি করে টিন লাগানোর কাজ শুরু করা হয়।
ইউএনও অফিসে তথ্যপ্রযুক্তির কারিগরি কাজে নিয়েজিত আক্তার হোসেন ঢাকায় থাকেন। তার বোন নাজমা বেগমের নামে নিয়েছেন একটি ঘর। চরপাতা ৭নং ওয়ার্ডের ওই ঘরের ডিজাইন আলাদা করা হয়। এ নিয়েও এলাকায় নানা কথা রয়েছে।
অনেকের অভিযোগ ওই আক্তার হোসেনই মূলত ঘরগুলো নির্মাণে ঠিকাদারি কাজ করেন। ঘর পেয়েছেন এসিল্যান্ডের গাড়িচালক সোহাগ, অফিসার্স ক্লাবের কর্মচারী নুরুল ইসলাম ও মালি সালাউদ্দিন।
এদিকে স্ত্রীর নামে ঘর নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে ব্যাংক স্টাফ আল আমিন জানান, তিনি মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের ইউজার হিসেবে কর্মরত। বেতন পান ৮-১০ হাজার টাকা। আর্থিক অনটনে থাকায় সাবেক ইউএনও সব কিছু শুনে তাকে একটি ঘর দেন। অপরদিকে তার মা মারা যাওয়ায় পিতা আব্দুর রশিদ আরেকটি বিয়ে করেন। ভাইয়েরা সব আলাদা সংসার করেন। তাই আব্দুর রশিদকেও একটি ঘর দেন ইউএনও। এদিকে ঘর বরাদ্দের সরকারি সনদে ছাদিয়া আফরোজ লিমার পেশা ঝিয়ের কাজ (গৃহপরিচারিকা) ও স্বামী মৃত আল আমিন হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। এটি অফিসের ভুল বলে দাবি করেন আল আমিন।
ভোলার জেলা প্রশাসক মো. তৌফিক ইলাহী চৌধুরী যুগান্তরকে জানান, নিজেকে মৃত দেখিয়ে স্ত্রীর নামে ঘর নেয়া ও অনিয়ম তদন্ত করতে ইতোমধ্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( রাজস্ব) মামুন আল ফারুককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ৬ মাস ধরে যে ঘরের চালা লাগানো হয়নি, ওই ঘরের চালা লাগানো শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি। অনিয়মের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।