নদীতে পাথর কুড়িয়ে চলে তাদের জীবন

জাতীয়

স্বদেশবাণী ডেস্ক : সকাল থেকেই সোমেশ্বরী নদীর পানিতে নেমে চলে পাথর সংগ্রহের কাজ। নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার সোমেশ্বরী নদীর স্বচ্ছ পানিতে নেমে পাথর সংগ্রহ করে চলে ওই এলাকার কিছু মানুষের জীবন। আবার এটাই কারও জীবনের প্রধান জীবিকা।

ভোর থেকে বিকাল পর্যন্ত এভাবে পাথর কুড়িয়ে বিক্রি করে তাদের সংসারের চাকা ঘুরে। যেন পাথর কুড়ানোটাই তাদের জীবন। রোববার সোমেশ্বরী নদীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমনটাই দেখা গেছে।

প্রতিদিন ভোরে সূর্য উঁকি দেওয়ার আগে ২৫-৩০ ফুট লম্বা নৌকা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন পাথর কুড়ানো মানুষগুলো। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অবস্থিত এই নদী থেকে ডুব দিয়ে পাথর তুলে তা নৌকায় করে তীরে আনা হয়। পরে সেগুলো ধৌত করে বিক্রি করা হয় স্থানীয় পাথর ক্রয়ের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছে। প্রতি ছোট নৌকাভর্তি পাথর বিক্রি হয় দুই হাজার টাকা থেকে তিন হাজার টাকায়।

পাথর কুড়িয়ে তাদের দৈনিক আয় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এ টাকা দিয়েই চলে সংসার; ছেলেমেয়ের পড়াশোনাসহ আনুষঙ্গিক খরচ। দিনভর পাথর সংগ্রহ আর বোঝাইয়ের পরও তাদের চোখে-মুখে কোনো ক্লান্তির ছাপ নেই।

পাথর কুড়ানো শ্রমিক হাফিজুর রহমান (২৬) বলেন, নদী থেকে ছোট-বড় পাথর সংগ্রহ করে নৌকায় ভরে মহাজনের কাছে বিক্রি করা হয়। বিভিন্ন সাইজের পাথর নৌকায় করে বিক্রি করলে দামের কিছুটা তারতম্য হয়ে থাকে। মাঝে মধ্যে মহাজনরাও ঠকিয়ে দেয় আমাদের। কখনো দুই হাজার টাকা দরে আবার কোনো সময় এক হাজার বা ১২শ টাকায় বিক্রি করা হয়। সারা বছর এ কাজই করি আমরা।

অত্র এলাকায় ঘুরতে আসা পর্যটক জাহিদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, নৌকায় করে ঘুরে বেড়ানোর সময় আশপাশের শ্রমজীবীদের যেসব কর্মকাণ্ড চোখে পড়ে, পুরোটাই পাথরকে ঘিরে। নৌকাভ্রমণ শেষে ফিরে যাচ্ছে পর্যটকের দল। পর্যটক দলে থাকা এক শিশুর কথায় কানটা খাড়া হয়ে গেল। নাম না জানা শিশুটি তার বাবার কাছে প্রশ্ন করল- বাবা, এখানে যারা কাজ করছেন তারা কি সবাই স্টোনম্যান?

আসলেই এসব শ্রমজীবী মানুষের জীবন পাথরকে ঘিরে। পাথরের মাঝেই লুকিয়ে আছে ওদের স্বপ্ন। সকালে উঠে পাথর তোলার কাজ শুরু, এখানেই গোসল-খাওয়া-বিশ্রাম, সন্ধ্যায় কাজ শেষে আবার ছোট কুঁড়েঘরে ফিরে যাওয়া। হোসেন, করিম, লোকমানসহ এখানকার শ্রমজীবীদের কাছে জীবন মানেই পাথর।

যত বেশি পাথর তুলতে পারবেন, তত বেশি টাকা; আর একটু ভালো থাকার সম্ভাবনা। নিজেরা তেমন পড়াশোনা করতে পারেননি, এ কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে পড়াশোনা করাচ্ছেন তাদের সন্তানদের। হয়তো তারা একদিন বড় হবে, ঘুচাবে তাদের দুঃখ, একটু ভালোমন্দ খেতে পারবেন- এমন স্বপ্নই দেখছেন প্রতিনিয়ত।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *